• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ক্ষুধার্ত গাংচিল

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩

রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে আমি। অন্যপাশে সেই ছেলেটি। যার কথা আমি ভেবেই যাচ্ছি অনেক দিন ধরে। এই ছেলেটিকে দেখার জন্যে রোজ সকালে দাঁড়ায় রাস্তার পাশে। আমি ছেলেটাকে কিছু বলব, কথা বলব তার সাথে কিন্তু তার আর সুযোগ হয়ে ওঠে না। প্রত্যেকদিন একটি বাস এসে নিয়ে যায় ছেলেটাকে যেন বাসটি ক্ষুধার্ত গাংচিল আর ছেলেটি দিঘীর জলে পদ্মপাতার ওপর ভেসে ওঠা ছোট মাছ। ডুব মেরে গিলে ফেলে বাসটি । নিয়ে যায় চোখের আড়ালে। বাস নামক গাংচিলটিকে অনেক দূরে দেখেই বুক ধুকধুক করে কেঁপে ওঠে আমার। এই বুঝি তার চোখের পলকে মনের ভেতর থেকে নিয়ে যাবে ছেলেটিকে। আমার আজ কান্না আসছে।

এতদিন হলো, কয়েকটা মাসও চলে গেল। শুধু রাস্তার ওপার থেকে দাঁড়িয়ে দেখেই যায়। ছেলেটাকে আজও বলতে পারিনি কিছু না বলা কথা। হয়নি তার সাথে কোনো পরিচয়। আজ আবার গাংচিলটা এসে যাবে। স্বপ্নের মতো নিয়ে চলে যাবে। এর পূর্বেই কথা বলতে হবে ছেলেটির সাথে। রাস্তার এপার থেকে ওপারে আসলো ছেলেটি |

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: অসুখের দিনগুলোতে প্রেম
--------------------------------------------------------

ছেলেটি কিছু বলে না শুধু অপলক দৃষ্টিতে তার মায়াবী চোখে চেয়ে দেখছে আমিকে। ব্যাগের ভেতর থেকে একটা খাতা বের করে ছেলেটি লিখল- ভালো আছি। আপনি? আমি বুঝতে পারছে না সে খাতায় লিখে বলছে কেন।

নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলে না। আমি বললাম- ভালো আছি, আমি কি আপনার নামটা জানতে পারি? ছেলেটি তার খাতায় লিখল – অনিক হাসান। আমি নিজের পরিচয় দিলাম- বাড়ি রাস্তার ঐ পাশের দালানটা। হঠাৎ করে আসলো সেই ক্ষুধার্ত গাংচিল। ডুব করে গিলে ফেলল অনিককে। মুহূর্তে সবকিছু বিচিত্র মনে হলো আমার। মনে হলো যেন স্বপ্ন। আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে, আমি চলে যাবো ঠিক ঐ মুহূর্তে ছেলেটি বলল-

-আপনি কি অনিক কে চেনেন? জিজ্ঞাসা করলাম তার সাথে তো কেউ কথা বলে না তাই। আমি খুলে বললাম সবকিছু। আর ছেলেটির কাছ থেকে জানতে পারলাম অনিক বোবা। কখনো কথা বলতে পারে না। কিছু না বলেই কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরলাম আমি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়লাম। বাবা-মা কি কখনো এমন বোবা ছেলে মেনে নেবেন? পড়ালেখায়ও মন দিতে পারে না। সিলেট থেকে পাঠিয়ে দেয়া হলো মামার বাড়ি হবিগঞ্জে। আমি চলে গেলাম কিন্তু মন অনিকের কথা ভাবত সারাক্ষণ। তিন বছর পর আমি আসলাম সিলেট। বাড়িতে বসে সময় কাটে না আমার। ছোট্ট বোন রিন্তী কিছু বই এনে দিয়েছে পড়ার জন্যে। বই পড়তেও ভালো লাগছে না।

তার পরও আমি একটা বই হাতে নিই। লেখকের নামটাও বেশ পরিচিত। বইটি অপলক দৃষ্টিতে সে পড়ছে।

বইটির নাম ‘যামি’ লেখক যাকে উৎসর্গ করেছে তার নামও যামি |পুরো বইয়ের লেখা মিলে যাচ্ছে পাঠক আমার সাথে। আমার রাস্তার পাশে দাঁড়ানো থেকে কলেজে যাওয়া ইত্যাদি। আমার ভালোবাসার কথাও খুব লিখেছে লেখক। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আর মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া সবকিছুর এক অপূর্ব মিল। আমি কাঁদতে লাগলাম খুব। নিরিবিলি কেঁদে বালিশ ভেজাই। তিন বছর পূর্বের সবকিছু আবার নতুন করে জেগে ওঠে। রিন্তী দেখে ফেলে আমার কান্না। মায়ের কাছে বলে।

আমার বিয়ে ঠিক করা হয় কোনো এক বড় লেখকের সাথে। মা-বাবা বলেছে, আমি যা চাই তাই হবে। আমি বিয়েতে রাজি হই। খুব ধুমধাম করে বিয়ে হয় আমার সাথে লেখকের। বাসর রাতে লেখক আমাকে তার নিজের ভাষায় বলে- তুমি কেন আমাকে বিয়ে করতে গেলে?

আমি বিয়ে করেছি সেই ব্যক্তিকে, যে তিন বছর পূর্বে দাঁড়িয়ে থাকতো বাসের জন্যে। আর আমি দূর থেকে অপেক্ষায় থাকতাম সে আসবে কবে। আমি কোনো লেখক কে বিয়ে করিনি,যাকে চেয়েছিলাম, বিয়ে করেছি তাকে।

❤ Sahana Akter

আরও পড়ুন:

* BiskClub-ভালোবাসার গল্পসল্প থেকে বাছাই করা পাঠকদের গল্প নিয়ে rtvonline ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে।

সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • চলুন ভালোবাসার গল্প শুনি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রেমিকাকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রেমিক গ্রেপ্তার
প্রেম করে বিয়ের ২ মাসের মাথায় প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা 
প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পাগলা মসজিদের দান বাক্সে চিঠি
প্রেমিককে তুলে নিয়ে কুপিয়ে জখম করলেন প্রেমিকা
X
Fresh