• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বাবু

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:২২

স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসতে প্রায় এক ঘণ্টা বাকী। আমি একটা পত্রিকা পড়ছি। গোলাম মওলা রনি'র কলাম। বেচারা ইদানীং বেশ ভালোই লিখছেন। উনাকে আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে চিনতাম। তার বাইরে উনি যে একজন ভালো কলামিস্ট, তা জানতাম না।

আমার কাঁধে হেলান দিয়ে বসে আছে কণিকা। আমার স্ত্রী। কণিকা বাসে ওঠলেই বমি করে, যে কারণে ট্রেনে যাওয়া। ওর নাকি ট্রেন জার্নি বেশ লাগে। হঠাৎ খেয়াল করলাম কণিকার চোখে পানি। আমি কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, এই কাঁদছো কেন? কণিকা টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলল, কই কাঁদছি না তো। - চোখে পানি কেন? - চোখে হয়তো কিছু গেছে। এই দেখছো ঐ পিচ্চিটা কত্ত কিউট! আমি তাকালাম। সামনের বেঞ্চিতে একটা পিচ্চি ওর মা'র কোলে বসে আছে। আমি খেয়াল করলাম, পিচ্চিটা কণিকার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। - এই শোন, বাবুটাকে একটু এনে দাও না কোলে নিব। আমি জানতাম কণিকা এরকম একটা বায়না ধরে বসবে। আমি বললাম, পিচ্চির মাকে কী বলবো? - কিচ্ছু জানি না। আমাকে এনে দাও পাঁচ মিনিট কোলে নিয়ে থাকবো। জাস্ট পাঁচ মিনিট।

...গত বছরের মাঝামাঝি সময়কার কথা। কণিকাকে মেডিকেল চেকআপ করাতে নূর ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে নিয়ে গেলাম গাইনি ডাক্তার শারমিন আক্তারকে দেখানোর জন্য। এই ভদ্রমহিলার সকাল দশটায় চেম্বারে বসার কথা থাকলেও তিনি নাকি ১২টার আগে চেম্বারে আসেন না। আমি ক্লিনিকের রিসিপশনিস্টকে বললাম, ডাক্তার আসতে কতক্ষণ লাগবে? রিসিপশনিস্ট বললেন, ১২টার আগে আসবে না। মহিলা মানুষ সংসারের টুকটাক কাজ করেই সম্ভবত আসেন। তাছাড়া শুক্রবার। ফ্যামিলিকেও সময় দিতে হয়। অন্যদিকে ক্লিনিকের মালিকরাও ডাক্তারদের কাছে অসহায়। একজন ডাক্তার যদি বলে বসে আসবো না। জোর করে আনার কোনো উপায় নেই। আমি কণিকাকে রেখে একটু বাইরে গেলাম। বললাম, ডাক্তার আসলে ফোন দিও। কিছুক্ষণ পর কণিকার ফোন, এই কই তুমি? -এইতো ক্লিনিকের সামনেই আছি। - একটা ম্যাঙ্গো জুস আর একটা চিপস নিয়ে আসো। বাবুকে খাওয়াবো। - বাবু কোথায় পেলে? - যা বলছি, তাই করো। - ওকে ম্যাডাম। আমি ম্যাঙ্গো জুস আর চিপস নিয়ে আসলাম। কণিকার কোলে বাবু। তার পাশে বসে থাকা আপার ছেলে। কণিকা অনেকটা আগ্রহ নিয়ে খাওয়াচ্ছে। মনে হচ্ছে ছেলেটা তারই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার শারমিন আক্তার এসে পড়লেন। কণিকাকে দেখে বেশকিছু টেস্ট লিখলেন আল্ট্রাসনোগ্রাফি, RBS.CRP.blood grouping, Cerum Creatinine. S. Uric Acidসহ সাথে আমারও একটা পরীক্ষা লিখলেন। সব টেস্ট করার পর ডাক্তার কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে আমাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বললেন, মেডিসিন চলতে থাকুক। সমস্যা হলে যোগাযোগ করবেন।

... আমি এক সপ্তাহ পর ডাক্তারকে ফোন দিলাম, হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। - ওয়ালাইকুম আস সালাম। -আপা কেমন আছেন? - জি ভালো আছি। আপনি? - আলহামদুলিল্লাহ। আপা আমি আহসান হাবীব আপনার পেশেন্ট কণিকার হাজবেন্ড। - জি চিনতে পাচ্ছি। - সেদিন টেস্ট দেখে তো কিছু বললেন না। - কী আর বলবো? আপনাদের দুজনেরই কিছু প্রবলেম আছে। আপনারা কতদিন হয় বিবাহ করছেন? - এইতো প্রায় ছয় বছর হবেই। - আপনাদের কিছু ভুল হয়েছে প্রথমদিকে, যদি একটু সচেতন হতেন তাহলে এই প্রবলেম ফেস করতে হতো না। তবে প্রাথমিক এই সমস্যা তাদেরই হয়, বিশেষ করে যেসব মেয়েদের জরায়ুতে টিউমার হওয়ার পর তারা সন্তান ধারণ ক্ষমতা হাঁরিয়ে ফেলে। মেডিকেল ভাষায় এটাকে বলে Cystitis.আর পুরুষদের স্পার্ম যদি ৮০% এর নিচে থাকে সেক্ষেত্রে সেসব পুরুষ বাবা হতে পারে না। যাকে বলে Azoostermia...ভালো থাকবেন আহসান হাবীব সাহেব। - ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন। ফোন কাঁটার পর লুকিং গ্লাসের সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেলাম চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। দেখার চেষ্টা করছি চোখে ময়লা-টয়লা পড়ছে কিনা। এ কথা এখনও কণিকাকে বলিনি। ভাবছি ও যদি নীরবে কাঁদতে পারে, আমি পারবো না কেন?