• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বড় হয়ে ছেলেটাকে একদিন শিক্ষা দিব

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১১:৩৯

আমি তখন স্কুলে ক্লাস টু-তে পরি। একদিন টিফিন টাইম এ খেলার সময় একটা ছেলে স্লিপার থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি তখন কাঁদতে থাকি। আমাকে কাঁদতে দেখে একটা ফর্সা রোগা টাইপ ওই ছেলেটি প্রচুর মজা পেয়ে হেসে কুটিপাটি। সেদিন স্কুল ছুটি শেষে আমি আম্মুর কাছে কমপ্লেইন দেই আর অনেক বকা দিতে বলি। ছেলেটার নাম ছিল সাকিব। সাকিব এর মা এই ঘটনা শোনার পর ওকে অনেক বকা দেয় আর আমি মিটিমিটি হাসি। আম্মু আমাকে পরে বুঝায় বলে যে, এরকম খেলতে গিয়ে ছোটোখাটো ব্যথা পাওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি মনে মনে চিন্তা করি যে, বড় হয়ে কখনও দেখা হলে এমন শিক্ষা দেব যেন ও সারাজীবন মনে রাখে। স্কুলে দেখা হলেই আমি ওকে এড়িয়ে চলতাম। পরের বছরই সাকিব সরকারি স্কুলে ভর্তি হয়ে যায় আর আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। আস্তে আস্তে সাকিবের চেহারা ভুলে যাই।

২০০৭ সালে এসএসসি পাস করি। ২০০৮ সালে ইংলিশ পরার জন্য আমি বাসার কাছেই এক মিস এর কাছে ভর্তি হই। আমি সবসময় মনযোগী ছাত্রী ছিলাম আর সামনের বেঞ্চে বসতাম। ক্লাসে কেউ কথা বললে আমার চরম মেজাজ খারাপ হতো। একদিন হঠাৎ মিস আমাদের লিখতে দিয়ে ভেতরের রুমে যায়। আর তখনই ক্লাসের ২টা ছেলে হাসাহাসি করে ডিস্টার্ব করছিল। আমি পেছন ফিরে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলি। তার মধ্যে একটা ছেলে আমার ধমক খেয়ে আরও জোরে হাসে। ক্লাস শেষে নোট ফটোকপি করার সময় ওই ছেলেটা আমার কাছে এসে বলে যে, এক্সকিউজমি! তুমি কি কখনও অমুক স্কুলে পরতা?

আমি: হা। ওই স্কুল থেকেই আমি এসএসসি দিয়েছি। কেন?

সে: তোমার চেহারাটা খুবই চেনা চেনা লাগছে।

আমি: কী নাম তোমার?

সে: আমি সাকিব। তুমি?

আমি: কোন সাকিব??? ছোটবেলায় একবার যে ধাক্কা দিছিলা আমাকে?

সে: মানে?

আমি: কিছু না। ভালো থেক।

ওর কিছুই মনে পড়ে না আর আমি বাসায় চলে আসি।

পরের দিন আবার ক্লাসের পর দাঁড়ায় থাকে।

সাকিব: কেমন আছ?

আমি: ভালো। কী দরকার বলো।

সাকিব: তোমার নামটা বলা যায়?

আমি: প্রিয়া

সাকিব: বাহ! তুমি কার প্রিয়া?

আমি: আর যারই হই কিন্তু তোমার না।

আমি চলে যেতে থাকি আর তখনি সাকিব বলে যে- এই! শুনো! আজকের লেকচারটা একটু ফটোকপি করা যাবে?

আমি: কেন? ক্লাস করনি?

সাকিব: ক্লাসে ছিলাম কিন্তু মনোযোগ ছিল তোমার সুন্দর চুলের দিকে।

আমি: অভদ্র কোথাকার বলে বাসায় চলে যাই।

ক্লাসের পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার ছলে আমার দিকে চুপিচুপি তাকাত, আমি বুঝতাম কিন্তু কিছু বলতাম না। বন্ধুরা গান গাইত, মজা করত।

এরপর কামরুল স্যারের কাছে বাংলা মডেল টেস্ট দেয়ার জন্য ভর্তি হয়ে দেখি সেখানেও রেহাই নেই। সাকিব পরীক্ষা দিতে হাজির। আমি সবসময় তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যেতাম যাতে কোনোভাবেই ও আমার সাথে কথা বলতে না পারে।

২০০৯ সালে আমি ফেসবুক খুলি। একদিন হঠাৎ দেখি সাকিবের ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট আমিও যেন কী বুঝে সাড়া দেই।

আমাদের প্রথম ফেসবুক এর কথা-

সাকিব: প্রিয়া!! কেমন আছ?

আমি: ভালো। তুমি?

সাকিব: ভালো। কী করো?

আমি: পিসিতে সাউন্ড সমস্যা হইসে ওইটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।

সাকিব: আমি ঠিক করে দেব?

আমি: না থ্যাংকস।

তার কয়েকদিন পর আমি বাসায় যাচ্ছি দেখি যে বাসার কাছের ওষুধের দোকানে সাকিব।

আমি: তুমি আবার!!

সাকিব: আরে বাবা ওষুধ কিনতে আসছি! তুমি কী এইখানেই থাক?

আমি: হুম। এইটা আমার বাসা।

ফেসবুকে ২য় বার কথার মাধ্যমে জানতে পারি যে, ও গাজীপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে ভর্তি হইসে। ঢাকায় মাসে ২ বার আসে। একদিন ও আমাকে দেখা করতে বলে আর ২২ সেপ্টেম্বর আমার বাসার কাছের এক খাবার দোকানে আমরা বসি। আমি সেদিন অনেক সেজে যাই আর ও আমার সাজগোজ দেখে হাসতে থাকে। ওইদিন আমরা বসে অনেক গল্প করি, ছোটবেলার কথা মনে করে হাসি। ওইদিন আমরা প্রথম একসাথে রিকশায় উঠি আর সাথে সাথেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। কেউ কোনো কথা না বলে বৃষ্টি উপভোগ করি।

বাসায় আসার পর ও আমাকে ফোনে পছন্দের কথা বলে। আমি চিন্তা করার সময় নিই। তার কয়েকদিন পর ৫ অক্টোবর আমি ওকে হ্যাঁ বলি। টানা ৫ বছর চলে আমাদের প্রেম।

ও নিয়ম করে আমার সাথে দেখা করতে আসত। মাঝেমধ্যে বাসার নিচে এসে আমাকে চমকে দিত, কখনও কখনও যেই বাসে আসত, আমার সাথে ১০ মিনিট দেখা করেই ওই বাসে ফিরে যেত। ওর দিক থেকে কখনই আমার প্রতি ভালোবাসার কমতি ছিল না।

চাকরি জীবনে প্রবেশ করার পর ২০১৬ সালে কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের ঝগড়া লাগে যা পরে পারিবারিক পর্যায়ে চলে যায়। ১ বছর ৩ মাস আমরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখি কিন্তু বন্ধুদের কাছ থেকে আমরা দুজনই দুজনের খবর নিতাম। খবর নিয়ে দেখি কেউই ভালো ছিলাম না। ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ও আমাকে ফোন করে। এতদিন পর দুজনের গলার আওয়াজ শুনে দুজনই কেঁদে ফেলি। তারপর দুজনই সিদ্ধান্ত নিই যে যত কষ্টই হোক না কেন সবঠিক করব। আমরা জানতাম যে আমাদের কারও পরিবারই আর মেনে নিবে না। কিন্তু হার মেনে নেয়ার জন্য তো এতদূর আসিনি। ৬ মাস সময় নিয়ে দুজন দুজনের পরিবারকে মানাই। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়।

ছোটবেলায় ভাবতাম যেই ছেলেটাকে বড় হয়ে একদিন শিক্ষা দিব, আজ তাঁকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকা আমার জন্য যেন সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমি বিশ্বাস করি মন থেকে ভালোবাসলে সেই ভালোবাসার জয় হবেই।

❤ Asfia Ahmed Pria

* BiskClub-ভালোবাসার গল্পসল্প থেকে বাছাই করা পাঠকদের গল্প নিয়ে rtvonline ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত প্রকাশ করা হবে।

সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • চলুন ভালোবাসার গল্প শুনি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প এবার স্টার সিনেপ্লেক্সে!
শেষ বিদায়ে ভালোবাসায় সিক্ত জাতীয় পতাকার নকশাকার
সমুদ্রের রোমাঞ্চকর গল্প বলেন তারা, শোনান গান
‘শেষমেশ’, যে গল্প কাঁদিয়েছে দর্শকদের
X
Fresh