• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যত কথা অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে

  ০৫ মার্চ ২০২০, ১৯:৫০
যত কথা অধিনায়ক মাশরাফির বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে
মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা

বাংলাদেশ দলে দীর্ঘ ছয় বছরের অধিনায়ক হয়ে থাকা চাট্টিখানি কথা নয় নিঃসন্দেহে। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা পেরেছেন ঠিকই। একটা দলকে ছায়ার মতো করে আগলে রেখেছেন লম্বা সময় ধরে।

তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দেখেছে এখন পর্যন্ত নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সফলতা। তার অধীনে এখন পর্যন্ত ৮৭ ম্যাচে ৪৯টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

কিন্তু থামতে তো হবে একটা সময়। সেই দিনটা আজ বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২০। ঘোষণা দিলেন অধিনায়কত্ব ছাড়ার। আগামীকাল শুক্রবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডে ম্যাচটাই হবে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দলের শেষ ম্যাচ।

প্রায় ৩৫ মিনিট লম্বা সময় ধরে মাশরাফী কথা বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে। যেখানে উঠে এসেছে গত ঊনিশ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অনেক অজানা কথাও। সেসব কথা তুলে ধরা হলো আরটিভি অনলাইন পাঠকদের জন্য।

‘কাল অধিনায়ক হিসেবে আমার শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি এতো দীর্ঘসময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই আমার নেতৃত্বে যারা খেলেছে বাংলাদেশ দলে তাদেরকে। আমি নিশ্চিত যে, গত ৫-৬ বছরের এই যাত্রা সহজ ছিল না। টিম ম্যানেজমেন্টে যারা ছিলেন, যাদের অধীনে আমি খেলেছি বা আমি অধিনায়কত্ব করেছি, তারা সবাই আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমি এর আগে দুই-তিন দফা অধিনায়কত্ব পেয়েছি। কিন্তু ইনজুরির কারণে করতে পারিনি। আমার অধিনায়কত্ব হাথুরুসিংহের সময় শুরু হয়েছে। এরপর খালেদ মাহমুদ, স্টিভ রোডস এবং আমার মনে হয় ডমিঙ্গো দিয়ে শেষ হচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ডের স্টাফ থেকে শুরু করে যারা আছেন, তাদের ধন্যবাদ সহযোগিতার জন্য। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ জানাই সহযোগিতা করার জন্য। সব শেষে বাংলাদেশের সমর্থক, ভক্তদের আমি ধন্যবাদ জানাই। আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কালকের ম্যাচের মাধ্যমে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। অধিনায়ক হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি আমার শেষ ম্যাচ। আমি চেষ্টা করব আমার সেরাটা দেয়ার, যদি আমার সুযোগ আসে। আমার শুভকামনা থাকবে পরবর্তীতে যে অধিনায়ক হবে তার জন্য। বাংলাদেশ পরের ধাপে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

যদি আমি দলে থাকি তাহলে চেষ্টা করব নতুন অধিনায়ককে আমার মধ্যে যা আছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ সবাইকে।

সিদ্ধান্তটা আমিই নিয়েছি।

কারো নাম বলা তো কঠিন। এটা অবশ্যই বোর্ডের সিদ্ধান্ত যে কে হবে। সিনিয়র যারা আছে, সাকিব তো বাইরে। যারা আছে, সে প্রক্রিয়াটা কী আমি জানি না। সাকিব আসার পর কী হবে বা প্রক্রিয়াটা কী কাউকে দিয়ে শুরু হবে কি না। আমি নিশ্চিত যে, বাকি তিনজন যারা আছে তাদের অধিনায়কত্ব করার সক্ষমতা আছে। বোর্ড সেরা একজনকে বেছে নেবে।

অধিনায়কত্ব জিনিসটাকে আমি কখনোই এমন গুরুত্বের জায়গায় আনিনি। আমি গর্বিত যে আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলি বা খেলেছি। অধিনায়কত্ব আমাকে বিসিবি সুযোগ দিয়েছে, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কখনো হয়েছে কখনো হয়নি। সিদ্ধান্ত যা নেয়ার তা তো নিতেই হবে। সামনে বিশ্বকাপ আছে ২০২৩ সালে, যেহেতু সবাই বলছিল যে পরিকল্পনা আমাদের করতে হবে। আমি চাই যে নতুন কেউ এখনই আসুক, দল গুছিয়ে নিক। আমি আশা করব যেটা পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটা যেন ঠিক থাকে। ২০২৩ সালের জন্য সেরা অধিনায়ক বেছে নিতে হবে।

আমার ক্যারিয়ারটাই তো অনেক আগে শেষ হয়ে যেতে পারতো। যতটুকু পেয়েছি, আল্লাহ্‌র কাছে হাজার শুকরিয়া যে, এতটুকু আসতে পেরেছি। প্রাপ্তির বিষয়টা আসলে এখনই বেছে নেয়া কঠিন। অপ্রাপ্তি খুব সহজেই বলতে পারা যায়। অনেক অপ্রাপ্তি আছে, সেটাও আমার কাছে প্রাপ্তির কারণ, একটা আবহে কখনো জীবন চলে না। ভালো- খারাপের ভেতর দিয়েই যেতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ওটাই হয়েছে। সত্যি কথা বলতে আমি এই দায়িত্বকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন তো প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি আপনারা যারা আছেন বা দর্শকরা- তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি এগুলো আলাদা করার চেষ্টা করিনি কখনো।

আপনি যদি বাইরে চিন্তা করেন সবাই ভাবছে ২০২৩ সালে নতুন অধিনায়ক আনার সময় হয়েছে। আমাকে কিন্তু ভাবা উচিত, আমি মনে করি। আমার ভাবা উচিত ছিল। ভাবার চেষ্টা করলেও আমি অতো ভাবতে পারি না। আমি আসলে অতো ভাবিনি। আজকে সকালে মনে হয়েছে যে যথেষ্ট হয়েছে। সত্যি বলতে আজকে সকালেই মনে হয়েছে। কালকেও কিন্তু এই সিদ্ধান্তে ছিলাম না। আজকে সকালেই মনে হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। তবে এটা সত্যি যে কথাগুলো আমাকে নিয়ে হচ্ছিল সেটা অবশ্যই আমার জায়গায় আপনি হলেও এটা আপনাকে ভাবাবে। এটা অবশ্যই সাধারণ প্রক্রিয়া।

যে কথাগুলো হয়েছে, আমি আশা করব এই কথাগুলো যেন শক্ত থাকে। পরের অধিনায়ক কিন্তু ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য। এমন না যে, এক বছরের জন্য। খারাপ করলেই হুট করে যেন কাউকে বাদ না দেয়া হয়। যেটা বাংলাদেশে হচ্ছে। কিন্তু আমাকে নিয়ে যে প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটাতে শক্ত থাকা হলো না। আমি বিশ্বাস করি আমি সিদ্ধান্তটা পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমি আশা করব যারা পরের অধিনায়ক নিয়ে যে পেশাদারিত্বে আলোচনা করেছে, সেটা যেন ধরে রাখে। অধিনায়ককে ভালো খারাপ মিলিয়ে যথেষ্ট সময় দিয়েই যেন ২০২৩ বিশ্বকাপ চিন্তা করা হয়।

আমি ভাবতে পারব তখনই যখন আলোচনার ভিত্তিতে অনেক কিছু হতে পারে। এতো আলোচনায় আমার যাওয়ার কিছু ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা যথেষ্ট।

পৃথিবীর কেউই বলতে পারবে না যে সে পরিপূর্ণ করে গিয়েছে। আমি বললাম যে প্রাপ্তির কথা আমি বলতে পারব না। অপ্রাপ্তির কথা মানুষ চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারে। আসলে ব্যর্থতাগুলো কী ছিল। আমি আসলে জানি না প্রাপ্তি কী ছিল বা অপ্রাপ্তি। এতোটুকু বলতে পারব যে, আমাকে যখন জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করতে দেয়া হয়, তখন আমি জানতাম এটার দায়িত্ব কত বেশি। এখানে চাপ বেশি। এখানে কত আবেগ জড়িয়ে আছে। কত মানুষ তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের খেলায়। বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য বসে থাকে। ওই দায়িত্বের গুরুত্ব আমার কাছে যেকোনো কিছুর চাইতে বেশি। সেই জায়গা থেকে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি।

আমি আগেই বলেছি যে অভিমান বা রাগ দেখানো বা ক্ষোভ দেখানো এগুলো কেন দেখাবো। আপনারা সবসময় যদি এসব বের করতে চান তাহলে খারাপ। অনেকের থাকে বা থাকে না। অনেকে বলতে পারে। এরকম সামনে বলার আমি তো না। আর সত্যি বলতে এটা অভিমান না। আমাকে একটা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আপনাদের সামনেই বললাম, আমি শেষ। এটা এখানেই শেষ। এর মধ্যে যা কিছুই হয়েছে মতের পক্ষে বা বিপক্ষে সবকিছু নিয়েই কিন্তু এই পর্যন্ত এগিয়ে আসতে হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি, তাহলে আমাকেও সেটা বলেছে তারা যে ঠিক আছে। সামনের ম্যাচে ঠিক করতে হবে। আবার আমার কাছেও যদি কিছু খারাপ লেগে থাকে। আমিও সেভাবে বলেছি। যেকোনো কম্বিনেশনে এভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

প্রথম বিষয়টা হচ্ছে আপনি যদি ঘুম থেকে উঠে আপনার সামনে নাস্তা রাখা হয়, আপনি আবার শুয়ে থাকলেন, টিভি দেখলেন, দুপুরের খাবারটা রাখা হলো। বিকেলে একটু ঘুরে আসলেন। সন্ধ্যায় আবার নাস্তা দেয়া হলো। রাতে ডিনার রেখে গেল, তাহলে আপনার জীবনের মূল্যটা কী থাকল? কিছুই থাকল না, তো মানুষ হিসেবে প্রত্যেকটা কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমি উপভোগ করি সব যখন বিপক্ষে থাকে। এটাই আমার জীবনের উপভোগের অংশ। সবকিছু যখন পক্ষে থাকে তখন আমার কাছে মনে হয় জীবনের মূল্য কিছুই না। সবকিছু যখন আপনার জীবনের বিপক্ষে থাকবে, তখন আপনি কতটুকু সামনে যেতে পারেন, তখন আপনি নিজের সার্থকতা বা চ্যালেঞ্জের মুখে আনতে পারবেন। সেটা আপনার পরিবার বা আপনার সাথে যারা থাকে তাদের জন্য একটা শিক্ষা হতে পারে। এছাড়া আপনি আরামেই জীবনটা পার করলেন।

এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে পরিবারকে আমি কিছু বলি না। ভালো লাগার জায়গা সবসময় থাকে, ছেলে ভালো করছে বা পরিবারের কেউ ভালো করছে। খারাপ তো লাগেই এভাবে যে তার খারাপ হচ্ছে। এটা তো খারাপ লাগবেই। আমার কথাটা আমি শুধু বাসায় ফোন করে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। যে, ডান। তারা শক্তভাবেই আমার পাশে আছে। টি-টোয়েন্টি থেকে যাওয়ার সময় তারা আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। তারা ঠিক সেভাবে আমার পাশে আছে।

এগুলো কিন্তু ছোটোখাটো টেকনিক্যাল সিদ্ধান্ত। এগুলো অধিনায়কও নিতে পারে না। আমি মনে করি যে মুশফিক এমন একজন ক্রিকেটার, আমার কাছে মনে হয় যে সে যদি কখনো খারাপ সময়ে যায়, আমার চিন্তা করতে হবে যে সে কী পরিমাণ রান করেছে। বাংলাদেশ জেতার পেছনে তাঁর অবদান। আপনারা যারা ঘাটাঘাটি করছেন, জানেন যে চার নম্বরে মুশফিকই বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেটার। সব যদি আপনি কন্সিডারের জায়গায় আনেন, যে ছেলেটা বাংলাদেশের হয়ে ১০-১২টা বছর খেলেছে। ও যেন মানসিক চাপে না থাকে সেটা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেয়াল রাখা উচিত। আমি মনে করি এটা। এই যে একটি প্রক্রিয়া এটা যদি মুশফিকের সাথে স্বাভাবিকভাবে আলোচনা করা হয়, মুশফিককে যদি বোঝানো সম্ভব হয় যে এটা হচ্ছে আমার প্রক্রিয়া, তোমার ধারণা কী। তখন যদি দুই পক্ষ একটা বিষয়ে আসতে পারে তাহলে এটা আলোচনার বিষয় না। বোর্ড থেকে মুশফিকের প্রতি একটা সিদ্ধান্তে আসা বা তাকে জানিয়ে দেয়া। যেটাতে মুশফিকও মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকবে, এবং বোর্ডের পরিকল্পনাও সফল হবে। সেই জায়গাটা আসতে পারলে আমি মনে করি ঠিক আছে।

অবশ্যই অনেক ভালো স্মৃতি আছে অনেক অনেক ভালো স্মৃতি। একজন অধিনায়ক হিসেবে একজন মেম্বার হিসেবে টিমের। তবে অধিনায়ক হিসেব যে অংশটা সেখানে ভালো স্মৃতি যেমন আছে খারাপ স্মৃতিও আছে যেগুলো আমরা খেলোয়াড়েরা বেয়ার করি সবসময়। আমার পাশে সবসময় খেলোয়াড়েরা ছিল, সমর্থন দিয়েছে। কোচেরা ছিল, মানে ফিগার আউট করা কঠিন আসলে কোন জায়গাগুলো। অনেক মুহূর্ত যেগুলো হয়তো তখন দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে কঠিন বা অবিশ্বাস্য, হবে কি না? কিন্তু তারপরও হয়েছে। আবার এমনও আছে যেগুলো কেউ চিন্তাই করছে না যে বাংলাদেশ টিম এটা পারবে না কিন্তু আমরা পারিনি। তো দুই জায়গায়ই আছে।

একটা প্লেয়ারের সিদ্ধান্তটা আসলে, বোর্ডের সিদ্ধান্ত। যখন মুশফিকের হাত থেকে আমি পেয়েছি তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। এটা মুশফিকের হাতে না। এখন আমি যখন যাচ্ছি আমি বলবো আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। তারা কিন্তু ক্যাপাবল। এটা বোর্ডের ভাবনা যে এখন থেকে যাকে দিলে আমাদের টিম এখন থেকে আরেক ধাপ উপরে যাবে তাদের সাথে আলোচনা করে যদি আনা হয় সেটাই ভালো, তবে এই মুহূর্তে যারা সিনিয়র আছে সবাই ক্যাপাবল। এখন দেখার বিষয় কাকে বিসিবি দেয়, এটা বিসিবির ব্যাপার।

সব থেকে কষ্টের ছিল ভারতের সাথে যখন ১ রানে হারলাম বিশ্বকাপে ওই রাতটা আমি না শুধু, পুরো দলের জন্যই বীভৎস ছিল। আমরা সবাই হোটেলে এসে করিডোরে বসে ছিলাম ঐটা আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে সতীর্থদের দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। তারপরও অনেক চ্যালেঞ্জিং পিরিয়ড গিয়েছে, লাস্ট বিশ্বকাপ অবশ্যই। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা টুর্নামেন্টে টিকে ছিলাম কিন্তু যেভাবে বের হয়ে এসেছি ওটা টাফ ছিল। তবে এই যে বললাম অধিনায়ক হিসেবে তো একটা ম্যাচে যেই থাকে প্ল্যান করে জেতার জন্য। কিন্তু সেটা না হলে... বাংলাদেশ যে কোনো ম্যাচ হারাটাই তো ইনডিভিজুয়ালি আমি বলবো প্রত্যেকটা হারই আমার জন্য কঠিন ছিল।

আমি আগেই বলেছি ঘুম থেকে উঠে রাত পর্যন্ত সব কিছু আরামে গেলো তো লাইফ চ্যালেঞ্জের জায়গায় দাঁড়ালো না। এটা টাফ অবশ্যই টাফ আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। আমি মনে করি গিভ আপ শব্দটা কান্ট বি এন অপশন। সো আমরা এটা মুখে বলি কাজে প্রমাণ করতে কেউ চাই না। টাফ টাইমটা যেতেই পারে, এর চাইতেও টাফ টাইম যেতে পারে। সো এটাকে গিভ আপ করা এক জিনিস না করা এক জিনিস।

দেখেন আপনাদের সামনে এসে আমার লাইফে যা হয়েছে বা কে কী বলেছে দোষারোপ করার অভ্যাস এটা আমার নীতির ভেতর পড়েই না। আপনি যেভাবে বলেছেন আমি একটু ঘুরিয়ে এটা বলতে পারি যে অবশ্যই ডিফিকাল্ট ছিল। সময়মতো মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়া আমি মনে করি সময় দেওয়া উচিত। আমি সিউর যে কেউ একমত হবে। কারণ আপনি যখন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ১৫ বছর, কারণ এটাতো এক দুই বছরের ব্যাপার না। আমি যেহেতু ১৫-১৮ বছর বা খেলাটা আমি ২০ বছর ধরে খেলি। আমি সবসময় বলে আসছি খেলাটা আমার লাইফ না তবে লাইফের বড় একটা পার্ট। আজকে আমি এখানে বসে আছি তা খেলার জন্য, জীবনের সর্বোচ্চ যা কিছু অর্জন করেছি সব এই খেলার জন্যই। এটা আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ। তো এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে বা যেকোনো খেলোয়াড়কে যে ৫ দিন খেলেছে তার ক্ষেত্রেও যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাকে মিনিমাম একটা সময় দিতেই হবে আপনাকে। তো সিদ্ধান্তগুলো কঠিন অবশ্যই আমি আপনাকে বলবো। কিন্তু এর পেছনে কারও জড়িত থাকা বা কোনো কিছু আছে কি না সেটা আমি আমার প্লেয়িং লাইফে আলোচনাই আসতে চাই না। যদি কোনো দিন আলোচনায় আসতে চাই আপনারা অবশ্যই জানতে পারবেন।

যেভাবেই হোক আমি বলবো যে, তারা আমাকে হেল্প করেছে, যেভাবেই হোক। আর যে কঠিন প্রক্রিয়ার কথা আপনি বললেন সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যদি মাইকটা সরায় দেন হয়তো থলি খুলে বসা যাবে এটা সত্য কথা। কিন্তু এটাও সত্যি কথা সহযোগিতা করে না ভালো সময়ে তাও না। আপনি যখন ভালো করবেন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনাকে আস্থা দেখাবে, আস্থা রাখবে। দেখেন সবাই, আসলে আমি একজন প্লেয়ার বা অন্যরাও সিউর এটাই ভাবে যে এটা একটা বড় দায়িত্ব। আমরা যখন নামি তখন কিসের জন্য নামি বাংলাদেশের জন্য নামি। যখন আমার ভুল ধরা হয় তখন স্বাভাবিকভাবে আমি কিন্তু প্রটেস্ট করতে পারি না। মনে হয় যে হয়তোবা আমি ভুলই করেছি। কিন্তু এটা যদি আমার পরিবারের জন্য হতো যে পরিবারের জন্য মাঠে নামছি তাহলে হয়তো আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম। কিন্তু নামটা যখন বাংলাদেশ নিয়ে নামি আসলে তর্কের জায়গা থাকে না। কারণ এটা অনেক বড় দায়িত্ব, সবারই আবেগ জড়িয়ে আছে সবার মতামত থাকে, দিচ্ছে। সুতরাং এটা ফেলে দেওয়ার সুযোগ থাকে না। যারা অ্যাক্টিং করেন মানে আমরা যারা অ্যাক্টিং করি তাদেরই কিন্তু মাথা নত করে থাকতে হয়। দেখেন আলোচনা সমালোচনা প্লেয়ারদের নিয়ে হয় যে, আমরা সহজেই বলে ফেলি এখন ও ইয়ে হয়ে গেছে এখন আর ডিসিপ্লিন নাই বা অনেক কিছু। দেখেন আমাদের অনুর্ধ্ব-১৯ ছোট ভাইয়েরা বিশ্বকাপ জিতে আসলো এরা কি কেউ এসে আপনাদের সামনে বা মিডিয়ার সামনে বা অন্য কোথাও কি বলেছে আমরা অনেক বড় কিছু করেছি। এরা কিন্তু বাচ্চা ছেলে এটা কি একজনও বলেছে? কিন্তু আপনি দেখবেন এরা যখন ন্যাশনাল টিমে পিক হবে বা অনূর্ধ্ব-১৯ আরেকটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাবে বা এশিয়া কাপ খেলতে গিয়ে ফেল হলে হয়তোবা এই আলোচনাটা শুরু হয়ে যাবে এরা হয়তো এই হয়ে গেছে সেই হয়ে গেছে এই জন্য এটা হয়েছে ওটা হয়েছে। প্লেয়াররা তো এটা চায় না যে আপনারা আমাদের খুব বড় করে ফেলেন, আমাদের বাবা মায়ের কাছে আপনারা বা অন্য কেউ গিয়ে বলে যে আসেন আমার বাবা মায়ের সাক্ষাতকার নেন। এগুলো আপনারাই করেন বা অন্য কেউ। আসলে এসব পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গিয়ে একটা প্লেয়ারকে খেলতে হয়। কেউ কিন্তু এসব পয়েন্ট আউট করে না। তারপরও এসব কিছুই মেনে নিতে হবে। এটাই প্রক্রিয়া এটাই বাস্তবতা। আমি মনে করি আমাদের পরিবারের অনেক দায়িত্ব আছে এসব ক্ষেত্রে যে এখনও ছেলের ভালো সময় যাচ্ছে খুব স্বাভাবিক সবাই আছে। কিন্তু যখনই খারাপ সময় আসবে এই জিনিসগুলোই উলটে যাবে। সিম্পল তাসকিনের উদাহরণ দেই যখন ৫ উইকেট পাইলো ডেব্যু ম্যাচে আর এখন তাসকিনকে ঠিক অইসব কারোনেই বলা হচ্ছে তাসকিন ডিসিপ্লিন না বা অন্য কিছু। তো আমি এটাই বলতে চাচ্ছি তখন পরিবারেরও অনেক দায় দায়িত্ব থাকে। তো এটার উত্তর আমি আসলে অন্যভাবে আর দিতে পারবো না (হাসি) ।

আর আপনি যেটা বললেন দূতের মতো, আমি আসলে যখন খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেছি তখনও এটা ফিল করিনি। যখন অধিনায়ক হয়েছি তখনো এটা মনে করিনি আবার যখন আমার তো আরেকটা পরিচয় আমি এমপি সেটাও আমি ফিল করিনি। কারণ রেড পাসপোর্ট নিইনি, আমি গাড়ি নিইনি, বাড়ি নিইনি কিছুই নিইনি। সো আমি আসলে এসব থেকে সবসময় দূরে থাকতেই পছন্দ করেছি। আমি যখন অধিনায়ক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার সম্ভাব্য সবকিছুই কিন্তু ছিল এই চেয়ারকে ঘিরে। যে আমি যত ভালো করব বা যত কিছুই করবো এই চেয়ারটা আস্তে আস্তে আমার কাছে আসতে থাকবে। যখনই আমি চেয়ারটা পেলাম তখনই ওটা শেষ লেখা হয়ে গেছে। তখন এই চেয়ার পাওয়ার কিন্তু আমার আর আকাঙ্ক্ষা নাই। চেয়ারটার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা উচিত আমার পজিটিভ ওয়েতে। র‍্যাদার দ্যান প্রভাবটাকে অন্যভাবে ব্যবহার করার চাইতে। সো আমি জিনিসটাকে এভাবে দেখি।

যে জিনিসটা আমি অর্জন করতে যাচ্ছি বা অর্জন করেছি তার মূল্য কিন্তু আর নাই। তখন সেটার মূল্যায়ন হবে যে আমি কীভাবে এর প্রয়োগ করেছি, জিনিসটা এভাবে দেখি।

দেখেন আমি সবসময় বলেছি আজকে আমি যা কিছু করেছি ক্রিকেট দিয়ে। ক্রিকেট যদি শেষ করতে না পারতাম তাহলে হয়তো মাছের ব্যবসা করতে হতো কারণ আমার পারিবারিক ব্যবসা কিন্তু মাছের, মানে ঘেরটের আছে (হাসি) । আমার জীবনে হয়তো ওভাবে করেই চলে আসতে হতো। সুতরাং যা কিছু করেছি আমি এই ক্রিকেট দিয়েই করেছি এবং সামনে আমার যে পরিকল্পনা তার একটা বড় অংশজুড়ে থাকবে অবশ্যই ক্রিকেট।’

এমআর/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • ক্রিকেট এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সাকিব-মাশরাফি
X
Fresh