• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

রেকর্ড গড়া ইনিংসের ক্রেডিটটা সতীর্থদের দিলেন তামিম

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে

  ০৪ মার্চ ২০২০, ২০:২৮
রেকর্ড গড়া ইনিংসের ক্রেডিটটা সতীর্থদের দিলেন তামিম
ছবি- বিসিবি

দীর্ঘদিন ধরে অফ-ফর্মে থাকা তামিম ইকবাল ফর্মে ফেরার ইংগিত দিয়েছেন শতক হাঁকিয়ে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলেছেন ১৫৮ রানের ইনিংস। ছাড়িয়ে গেছেন নিজের করা রেকর্ডও।

২০০৯ সালে হারারেতে খেলেছিলেন ১৫৪ রানের ইনিংস। যা এতদিন ছিল টাইগার ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। প্রায় ১২ বছর পর নিজের রেকর্ড ভেঙ্গেও পুরনো ইনিংসটাকেই এগিয়ে রাখছেন দেশ সেরা এই ওপেনার।

আর এই ইনিংসটা উৎসর্গ করেছেন সতীর্থ, টিম ম্যানেজমেন্টকে। খারাপ সময়ে যারা সাহায্য করেছেন মানসিক ভাবে ঠিক থাকতে। দীর্ঘ ২৩ ম্যাচ পর হাকানো ইনিংসটাও নিশ্চয় তামিমের কাছে অনেক বেশি স্পেশাল।

আজ বুধবার টিম হোটেলে গণমাধ্যমকে বলেন দুঃসময় পেরিয়ে আসার গল্প। সেসবই তুলে ধরা হলো আরটিভি অনলাইন পাঠকদের জন্য।

প্রশ্ন: দারুণ একটা ইনিংস খেলেছেন। এখন কি চাপ মুক্ত মনে হচ্ছে?

তামিম: হ্যাঁ অবশ্যই, একটুতো প্রেশারে ছিলাম। এটা না বললে মিথ্যা কথা বলা হবে। একটা জিনিস কি, আমি ব্যাটিংটা ভালো করছিলাম। যদিও বড় ইনিংস খেলতে পারছিলাম না। ইভেন টেস্টে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যা করলাম, পাকিস্তানে ৩৫-৩৬ রানের ইনিংস খেললাম, সেটাও রিয়েলি ওয়েল। এমনকি প্র্যাকটিসে খুব ভাল ব্যাটিং করতেছিলাম। তো একটা বিশ্বাস অবশ্যই ছিল, ইটস অ্যা ম্যাটার অব টাইম। বড় ইনিংস হয়ে যাবে হয়ে যাবে করে অনেক দিন ধরেই হচ্ছিল না। আর এটার পেছনে অনেককেই ক্রেডিট দেয়া উচিৎ। টিম ম্যানেজমেন্ট বলেন, টিম ম্যাটরা বলে, তারা সবাই আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। কোনো সময় একটা মিনিটের জন্যও তারা বিশ্বাস হারায়নি। মাঝে মাঝে যখন আমি ফ্রাস্টেটেড হয়ে যাচ্ছিলাম তারা আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে যাতে সেটা না হই। নরমালি এই ধরণের সময় গেলে আশে পাশে খুব কম মানুষকেই খুঁজে পাওয়া যায়। যারা আমার জন্য ইম্পরট্যান্ট ছিল তারা হচ্ছে টিম মেটস আর ম্যানেজমেন্ট। এমনকি বোর্ড থেকেও সাপোর্ট পেয়েছি। খেলার আগের দিন বোর্ড প্রধানও আমাকে ফোন করেছেন, উনিও আমাকে ভালো ভালো কিছু কথা বলেছেন যা ভালো লাগার মতো। তো এটাই আর কি। খুব সুন্দর একটা স্টার্ট হয়েছে, আমিও আশা করি এটা যেন ধরে রাখতে পারি।

প্রশ্ন: ভালোভাবে কামব্যাক করলেন, এর জন্য নিজেকে কতটা চেঞ্জ করেছেন?

তামিম: সত্যি কথা বলতে কালকে আমি কোনো কিছুই ডিফারেন্ট করিনি। একটা জিনিস আমার পক্ষে ছিল যেটা শুরুতেই আমি কয়েকটা বাউন্ডারি বেশি পেয়ে গেছি। আপনি যদি দেখেন, একটা ওভারে দুইটা বল আমার পায়ে ছিল আমি ফ্লিক করে চার মেরে দিয়েছিলাম। তাছাড়া আপনি যদি দেখেন আমি একশ রানের আগে বেশ কয়েকটা বড় শর্টস খেলছি, যা আগে কখনও হয়নি। আমি সব কিন্তু ক্রিকেটিং শর্টস খেলছি। অনেক সময় হয় কি, কাল অনেকগুলা শর্টস গ্যাপে চলে গেছে তাই বাউন্ডারি হয়েছে। তার আগের ম্যাচে গ্যাপে যায়নি, বাউন্ডারিও হয়নি। কাল বল আর রান সমান সমান ছিল বলে মনে হয়েছে অনেক কিছু চেঞ্জ করেছি আমি। এটা আসলে ঠিক না। আমি সব সময় যেভাবে খেলি কালও একই ধরণের মাইন্ড সেটে ব্যাট করেছি। আমার কাছে মনে হয় যে, আপনার ইনটেন্টটা যদি ঠিক থাকে পজিটিভ থাকে তাহলে, আমি ওই ইনটেন্টটা নিয়ে ব্যাটিং করতে চাই। এখন অনেক সময় যেটা বললাম, এই শর্টটা যদি হাতে চলে যেত তাহলে এরকমটা হতো না। আসলেই সত্যি কথা এরকম কিছু চেঞ্জ হয়নি।

প্রশ্ন: ২০০ হবার আশা করেছিলেন?

তামিম: দুইশ রান হতে তো পঞ্চাশ রান দূরে ছিল। প্রায় ৪২ রান দূরে ছিল। সত্যি কথা, ওইসময় ওরকম কিছু ভাবিনাই। বাট, নরমালি আরও পাঁচ ওভার যখন ছিল তখন যদি ১৫-২০ রান বেশি করতে পারতাম তাহলে একটা চান্স থাকতে পারত। বাট, ৪২ রান দূরে থেকে যদি বলি তাহলে সেটা ঠিক হবে না। যদি ২০ রান দূরে থাকতাম তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার ছিল। বাট আমি ওরকম কিছু ভাবিনাই। নরমালি সেকেন্ড হাফে উইকেটটা বেটার হয়ে যায় প্রথম হাফের তুলনায়। প্রথম হাফে একটু আনইভেন্স বাউন্স থাকে আর রানটাও আপনি ইজিলি করতে পারবেন না। তো আমরা, আমাদের একটা ব্যাটসম্যান শর্টও ছিল, আমি এটাই চেষ্টা করছিলাম যে ওভার বেশি থাকতে যেন আমি আউট না হয়ে যাই। কারণ আমি আউট হয়ে গেলে ওরকম কোনো ব্যাটসম্যান ছিল না। আমি চাইছিলাম যে আরেকটু থাকতে। বাট যে শর্টটা খেলছিলাম সেটার হাইট যদি আরেকটু বেশি থাকত তাহলে ফলাফলটা অন্যরকম হতো।

প্রশ্ন: ১৫৪ নাকি ১৫৮ রান, কোন ইনিংসটা এগিয়ে রাখবেন?

তামিম: অবশ্যই ২০০৯ সালের ইনিংসটা এগিয়ে রাখব। কারণ, আমরা ৩০০ রান চেজ করে ম্যাচটা জিতছিলাম। এখন ৩০০ রান মানুষ যত ইজিলি দেখে তখন ৩০০ রান ওত ইজি ছিল না। তখনকার ৩০০ রান এখনের ৪০০ রান। সো, তখন যে তিনশ রান চেজ করে জিতব এটা খুব বেশি মানুষের বিশ্বাসে ছিল না বা আমার নিজের কাছেও ছিল না। বাট আমরা যেভাবে ওই ম্যাচে ইনিংস বিল্ডআপ করেছিলাম, সো অবশ্যই আগের ইনিংসটাকে এগিয়ে রাখব আমি।

প্রশ্ন: জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করা সম্ভব?

তামিম: দেখেন ক্রিকেট কতটা আনপ্রেডিক্টেবল খেলা সেটা কালকে যে কেউ ভাবেনাই যে এই ম্যাচটা এত দূরে চলে যাবে। একটা ভালো দিক যে আমরা অলরেডি সিরিজ জিতে গেছি। আর যখনই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলি তখন আমরা চিন্তা করি রেজাল্টটা যেন আমাদের দিকে থাকে। আমাদের এটাই চেষ্টা থাকবে লাস্ট ম্যাচে, আমরা যে ভুল গুলা করেছি লাস্ট ম্যাচে। বিশেষ করে বোলিং ডিপার্টমেন্টে। প্লাস ব্যাটিংয়ে, আমরা যে সিচুয়েশনে ছিলাম সেক্ষেত্রে আমাদের ১৫-২০টা রান বেশি হতে পারত। আর ওই ভুলগুলা না করে আরেকটা ক্লিন গেম খেলা, এটাই চেষ্টা থাকবে।

প্রশ্ন: আপনার ১৫৮ রানের ইনিংসটা ভাঙ্গা সম্ভব?

তামিম: আমি মনে করি ও (মুশফিক) মোর দ্যান কেপাবল আমার রেকর্ড ভাঙ্গার জন্য। নট অনলি হিম, আমাদের টিমে আরও যারা আছে তারাও। যেমনটা লিটন, শান্ত দেয়ার ভেরি ক্যাপাবল। শান্ত তো গত ম্যাচেও ফিফটির খুব কাছে চলে গিয়েছিল। আমার কাছে মনে হয় না এই রেকর্ডটা বেশি দিন থাকবে। আমি প্রেডিকশন করছি, আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে এই রেকর্ডটা ভেঙ্গে যাবে। অথবা নেক্সট ইয়ারেও ভেঙ্গে যেতে পারে।

প্রশ্ন: কখন মনে হয়েছিল এমন ইনিংস খেলবেন?

তামিম: দেখেন, যখন আমি ডিফরেন্টলি করতে পারছি বা ম্যাচে হচ্ছিল না। ডিফরেন্টলি করতে হলে নেটেই করছিলাম। চাচ্ছিলাম নেটে আউট না হতে। আমি কিছু টুকটাক জিনিসও চেঞ্জ করেছি। বাট এটা একটা লম্বা প্রসেস, সত্যি কথা। ওইদিন (ম্যাচের আগের দিন দীর্ঘক্ষণ নেটে অনুশীলন) করেছি বলে কাল রান করেছি এটা ঠিক না। আমি কিছু জিনিস চেঞ্জ করেছি, চেষ্টা করছি নিজেকে আরও বেটার কিভাবে করা যায়।

প্রশ্ন: এমন ইনিংস খেলার রসদ কি?

তামিম: যেটা সত্যি কথা, ইভেন ইউ আর নট এনজয় ওর ওয়ান্টস থিংস আর নট হ্যাপেনিং ফর ইউ। দ্য আর ভেরি পিপল ইউ উইল ফাইন্ড এরাউন্ড। সমর্থক বলেন যেই বলেন, দে উইল গেট ফ্রাস্টেটেড বিকজ ইউ ওয়ান্ট টু ডু ওয়েল। সো, এই কারণেই আমি হ্যাপি টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি, টিম মেটদের প্রতি যাতে আমি একটা মিনিটও ওইরকম ফিল করতে দেয়নাই যে আমি যেরকম আশা করছি বাট ডেলিভার করতে পারছি না। সো, দে কিপ্ট অন বিলিভ ইন। আমার এই ইনিংসটার পুরোপুরি ক্রেডিট ওদেরকেই।

প্রশ্ন: নেইল ম্যাকেঞ্জির পরামর্শ কতটা কাজে দিয়েছে?

তামিম: না আসলে ওরকম কিছু না। দেখেন ও আমাদের ব্যাটিং কোচ। নরমালি যখন যে সমস্যায় পড়ে তখন আমরা ওর কাছেই যাই। ওর এডভাইস আমরা নিতে পছন্দ করি। ওর অনেক এডভাইস যা আমার জন্য ভালো আবার লিটনের জন্য ভালো নাও হতে পারে। এটা আসলে ডিপেন্ড করে। আর ও আসলে এমন একজন ব্যক্তি, যে সব সময় সবাইকে হেল্প করতে চায়। সেম আমাকেও যতটুক পেরেছে হেল্প করার চেষ্টা করছে। সত্যি বলতে আমি গতকাল কিছুই চেঞ্জ করিনি আর সেও আমাকে বলেছে, কিছু চেঞ্জ করার দরকার নেই।

প্রশ্ন: একজন ওপেনিং পার্টনার পেলে আপনার ব্যাটিংটা আরও ভালো হতে পারত?

তামিম: না, দেখেন একটা স্টেবল ওপেনিং পার্টনারশিপ থাকলে দলের জন্য অবশ্যই ভালো। ক্রিকেটের হিস্ট্রি তাই বলে। বড় প্লেয়ারদের যেটা ছিলেন অন্যান্য দেশে, একজন সেটেল ওপেনিং পার্টনার থাকলে ভালো। বাট আমি যেটা বললাম যে, লিটন ইজ ডুইং ওয়েল নাউ। আমিও যদি আরও ভালো করা শুরু করি, আমরা যদি বড় পার্টনারশিপ করতে পারি। মানে, অনেক দিন ধরে সব ফরম্যাটেই যদি থাকতে পারি তাহলে আই এম শিওর, টিম উইল গেট বেনিফিট।

প্রশ্ন: ৭ হাজার রানের রেকর্ড এবং আপনি কতটা পরিণত এখন?

তামিম: দেখেন কত রান করব সেটা নিয়ে কখনও গোল সেট করি না। যেকোনো ক্রিকেটারকে জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি দশ হাজার রান করতে চাই। সত্যি কথা আমি ওভাবে করে চিন্তা করি না যে, এতটুক করতেই হবে। আমি যখন যা হচ্ছে ওটা নিয়েই চিন্তা করি।

খারাপ সময়গুলা দেখেন ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আমি যখন খুব ভালো ফর্মে ছিলাম, তখন আমি বিভিন্ন ইন্টারভিউ তে একটা কথা বলেছিলাম, দিজ টাইম উইল কাম। খারাপ সময়টা আবার আসবে। এটা ক্রিকেটের একটা একটা জীবন। কম বেশি সবারই এই সময়টার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটাই আমি চেষ্টা করি যে, সময়টা কত দেরিতে আসে।

প্রশ্ন: লিটনের মত বিশ্বাস করেন, ক্রিকেট হতাশার খেলা?

তামিম: ক্রিকেট হতাশার কথা বলা ঠিক না। আপনি একদিন খুব খুশি হবেন, একদিন হতাশ হবেন।

এমআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ ২০২০ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh