• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সেদিন কার্ডিফ হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৮ জুন ২০২০, ১৬:৫৫
সেদিন কার্ডিফ হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ
জয়সূচক রানের পর আফতাব

ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে উঠতি একটা দলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেবার কোনো ভুল করেনি আয়োজক ইংল্যান্ড। ক্রিকেটে তখন বাংলাদেশকে বলা যায় এখনকার আফগানিস্তান। মাঝে মধ্যে এক, দুইটা জয় হাসি ফোটাতো দেশের মানুষকে।

তবে যে তখনকার ওয়ানডের এক নম্বর দলকে হারিয়ে দেবে বাংলাদেশ এমন চমকের অপেক্ষায়ও বোধহয় কেউ ছিল না। যা কেউ ভাবেনি সেটাই করে দেখিয়েছিল উঠতি টাইগাররা।

কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস এদিন থেকে যেন বাংলাদেশেরই একটা অংশ। এদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে কার্ডিফ আর সোফিয়া গার্ডেনস মানেই ২০০৫ সালের অস্ট্রেলিয়া জয়ের স্মৃতি। এখানে যতবারই খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ ততবারই মনে হয়, আজ আমরা জিতবো।

১৮ জুন ২০০৫, ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এক-ঝাঁক তারুণ্যে গড়া বাংলাদেশ দল। আগেই দেখে নেয়া যাক দুই দলের একাদশে কারা ছিলেন।

অস্ট্রেলিয়া: অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং (অধিনায়ক), ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্ক, মাইক হাসি, সায়মন ক্যাটিচ, ব্র্যাড হগ, জেসন গিলেস্পি, মিচেল ক্যাসপ্রোউইকজ ও গ্ল্যান ম্যাকগ্রাথ।

বাংলাদেশ: জাবেদ ওমর, নাফিস ইকবাল তুশার ইমরান, মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার (অধিনায়ক), আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাসুদ পাইলট, মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, তাপস বৈশ্য ও নাজমুল হোসেন।

রৌদ্রজ্জ্বল দিনে অস্ট্রেলিয়া টস জিতে অবশ্য ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেনি। তখনকার সময়ের সেরা ওপেনিং জুটি ছিল এই অস্ট্রেলিয়ারই। ম্যাথু হেইডেন আর অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

দুনিয়ার বাঘা বাঘা বোলাররাও যাদের সামনে মথা নত করতে বাধ্য হতো তাদেরই কী না হতাশায় ডুবালো মাশরাফি-তাপসরা!

ইনিংসের প্রথম ওভারেই মাশরাফির বলে শূন্য রানে এলবিডব্লুর ফাঁদে কাটা পড়েন গিলক্রিস্ট। ওপেনিং জুটি ভাঙার পর হেইডেনও যেন শক্তি পাচ্ছিলেন না বাউন্ডারি হাঁকানোর।

রিকি পন্টিংকে সঙ্গে নিয়ে থিতু হবার চেষ্টা কিন্তু সফল হতে দেননি তাপস বৈশ্য। পন্টিংও ১ রানে বিদায় নেন তাপসের বলে এলবিডব্লু হয়ে।

হেইডেনও আর টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ১৫ ওভার ৪ বলের সময় নাজমুলের বল স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে সাজঘরের পথ ধরান মারকুটে এই ব্যাটসম্যানকেও। ৩৭ রানে শেষ হেইডেন।

চতুর্থ উইকেট জুটিটা ভাঙতে একটু সময় লেগেছে মাশরাফিদের। ডেমিয়েন মার্টিন আর মাইকেল ক্লার্ক বাঁধেন ১০৮ রানের জুটি। তাদের এই জুটি ভাঙেন তাপস মার্টিনকে ৭৭ রানে বিদায় করে।

ক্লার্ক-হাসির জুটিতে রান আসছিল ধীরে। ক্লার্ক ছুঁয়ে ফেলেন অর্ধশতকের ঘর। দলীয় ১৮৩ রানের মাথায় ৪৩ ওভার ৩ বলের সময় মাশরাফির ওভারে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ৫৪ রান করে।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে হাসি-ক্যাটিচ মিলে ৬৬ রান যোগ করলেও তখনকার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে অন্তত বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫০ ওভার শেষে ২৪৯ রান বেমানানই ছিল বলা যায়।

নাজমুল, তাপস, মাশরাফি ১টি করে উইকেট নিলেও মাশরাফি তার পরিচয় রেখেছিলেন ১০ ওভারে মাত্র ৩.৩০ ইকোনোমিতে ৩৩ রান দিয়ে।

অজিরা হয়তো ভেবেছিল এই ছোট সংগ্রহতেও বেঁধে ফেলা যাবে বাংলাদেশকে। তবে দিন যত গড়াচ্ছিল পন্টিংয়ের নোখ কামড়ানোটা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, দিনটা আজ বাংলাদেশের।

ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার জাবেদ ওমর আর নাফিস ইকবাল সাজঘরে ফেরেন ১০ ওভারের মধ্যেই। দুই নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তুষার ইমরান আশরাফুলের সঙ্গে ২১ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন ২৪ রান করে।

টপ-অর্ডারের বিদায়ে ভেঙে পড়েননি আশরাফুল। হাবিবুল বাশারকে সঙ্গে নিয়ে তুলোধুনো করেছেন বিশ্বসেরা বোলারদের। ম্যাকগ্রাথ, হগদের একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশরাফুল তুলে নেন শতক।

বাংলাদেশ ততোক্ষণে জয়ের ক্ষণ গুনছে। কিন্তু একশ রান করেই আশরাফুলের সাজঘরে ফেরা। তার খানিকক্ষণ আগেই আচমকা রান আউটে কাটা পড়ে ৪৭ করে ফেরেন হাবিবুল বাশার। জিততে হলে শেষ ২ ওভার ৫ বলে লাগে ২৩ রান। ভরসা মোহাম্মদ রফিক আর আফতাব আহমেদ।

শেষের দিকে পন্টিংয়ের মলিন চেহারা বলে দিচ্ছিল কার্ডিফের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ যেন ভারি হয়ে আসছিল অজিদের মাথার উপর।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লাগে ৭ রান। জেসন গিলেস্পির করা ওভারের প্রথম বলটাই মিড উইকেট দিয়ে হাওয়ায় বাসিয়ে দিলেন আফতাব। ড্রেসিং রুমে তখন বিজয়ের উচ্ছ্বাস।

পরের বলেই ১ রান নিয়ে বাংলাদেশকে অজিদের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয় উপহার দেন আফতাব। সেদিনের আজ ১৫ বছর পার। তবু স্মৃতি যেন টাটকা। এমন রূপকথার জয়গুলো সব সময় টাটকাই থেকে যায়, ইতিহাস যত পুরোনোই হোক না কেন।

এমআর/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সাকিব-মাশরাফি
X
Fresh