অবিশ্বাস্য ম্যাচের নায়ক বেন স্টোকস
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে হারের কথাটা বোধহয় হারার সময় মাথায় চলে আসে বেন স্টোকসের। এরপর যত ম্যাচেই এমন কাণ্ড ঘটতে যায় ততো ম্যাচেই দলকে উদ্ধার করেছে একা হাতে। সেই বিশ্বকাপ তাকে খালি হাতে ফেরালেও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি। এরপর আজ যেটা ঘটালেন তা তো রীতিমত অবিশ্বাস্য!
অ্যাশেজ এখন ১-১ ম্যাচে সমতায়। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অজিদের কাছে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করে ইংলিশরা। তৃতীয় ম্যাচে এসে আর জয়হীন থাকা লাগেনি, জিতেই তবে মাঠ ছেড়েছে জো রুটের দল।
এই জয়টাকে শুধু জয় বললে কমই হয়ে যাবে। ইংলিশরা নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এমন জয় আগে দেখেনি। টেস্ট ইতিহাসে তারা এই প্রথমবার চতুর্থ ইনিংসে সাড়ে তিনশ রান পার করে জয় পেয়েছে। যা অ্যাশেজের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার!
হেডিংলির লিডসে বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রথম দিনে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জো রুট। তাতে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ১৭৯ রানে অল-আউট করে দেয় ইংলিশরা। জোফরা আর্চার তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই তুলে নেন ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে অজিদের হয়ে মার্নাস লাবুশানে করে সর্বোচ্চ ৭৪ আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন ডেভিড ওয়ার্নার (৬১)।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অজি পেসারদের তান্ডবে মাত্র ৬৭ রানেই গুটিয়ে যায়। দলের হয়ে জো ডেনলিই করেন সর্বোচ্চ ১২ রান। বাকি দশ জনের কেউই পার করতে পারেনি ১০ রানের কোটা। এই ইনিংসে জশ হ্যাজলউড নেন ৫ উইকেট।
প্রথম ইনিংসের ১১২ রানে এগিয়ে থাকা অজিরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে উইকেট দিয়ে আসলেও প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা লাবুশানে এই ইনিংসেও খেলেন ৮০ রানের ইনিংস। বাকিদের ছোট ছোট ইনিংসে ভর করে ২৪৬ রান তুলতে পারে অজিরা। তাতে ৩৫৮ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকদের।
চতুর্থ ইনিংসে এমন পাহাড় সম লক্ষ্য! তার উপর ইংলিশ দুই ওপেনার ররি বার্নস আর জেসন রয় ফেরেন ৭ আর ৮ রান করে।
ঘোর বিপদে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা জো রুট আর জো ডেনলির। ১২৬ রানের লম্বা জুটিই বদলে দেয় ম্যাচের মোড়। ডেনলি ৫০ রান করে ফিরলেও রুট করেন আরও ২২ রান বেশি(৭৭)।
এই দুই ব্যাটারের ফেরার পরই শুরু আসল খেলার। জনি বেরিস্ট্রোর ৩৬ রানের সঙ্গে বেন স্টোকসের ৩৪ রান। এই জুটিতে থামে ৮৬ রানে। দলীয় ২৪৫ রানের মাথায় বেরিস্ট্রোর ফেরায় দলের যখন ঘোর বিপদ তখন একপ্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়াই চালিয়ে যান স্টোকস।
আরেক প্রান্তে তখন একের পর এক উইকেট দিয়ে আসার মিছিল। মাঝে জোফরা আর্চারের সঙ্গে ২৫ রানের জুটি কিছুটা আশা জাগালেও ১৫ রানে ফেরেন আর্চার। এরপর ২৮৬ রানের মাথায় স্টুয়ার্ট ব্রডের শূন্য রানে ফেরাতে ইংলিশ সমর্থকদের ধুয়োয় রব উঠে গ্যালারি জুড়ে।
তখনও হাল ছাড়েননি স্টোকস। জ্যাক লিচকে একপ্রান্তে রেখে শেষ উইকেটে এমন অবিশ্বাস্য জয় তুলে নেবেন সেটা বোধহয় ইংল্যান্ড দলের ড্রেসিং রুমে থাকা বাকিদেরও বিশ্বাস হয়নি!
লিচের ১৭ বলে ১ রান, স্টোকসের ৪৪ বলে ৭৪ রান। দুজনের ৭৪ রানের জুটি ইংলিশদের এনে দেয় ১ উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয়।
এই ম্যাচ জিতেও স্টোকস মুখ চেপে কেঁদেছেন। একইভাবে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পরও কেঁদেছিলেন।
এমআর/
মন্তব্য করুন