• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ক্রোয়েশিয়ার জয়

স্পোর্টস ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০২ জুলাই ২০১৮, ০৩:৪৬

বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় টাইব্রেকারের সাক্ষী হয়ে থাকল রাশিয়ার নিজনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম ও মাঠজুড়ে খেলা দেখতে আসা দর্শকরা। সঙ্গে বিশ্বের আনাচে কানাচে রাত জেগে খেলা দেখা ফুটবলপ্রেমীরা। রোমাঞ্চকর এক টাইব্রেকার উপহার দিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে ডেনিশরা। তারা হেরে গেলেও মূলত জয় হয়েছে ফুটবলের।

দিনের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেন। শঙ্কায় ছিল টুর্নামেন্টের শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলা ক্রোয়েশিয়াও না আবার সে পথে হাটে। পুরো ম্যাচে কোনও ভুল করেনি দু’দল। কিন্তু অতিরিক্ত টাইমের ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন ক্রোয়েট অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ। তখনই মূলত ক্রোয়েট শিবিরে বিদায়ের সূর লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু সাডেন ডেথের শেষ মুহূর্তে ইভান রাকিটিচের গোলে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া। নির্ধারিত সময় ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে খেলা ১-১ গোলে সমতা থাকায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে নির্ধারিত হয় বিজয়ী দল।

স্নায়ুক্ষয়ী এই টাইব্রেকারে প্রথম শট নেন ডেনিশ তারকা ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। তার শট ডান দিকের গোলপোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম মিলান বাদেলির নেয়া প্রথম শটটা অবশ্য রুখে দেন ক্যাসপার স্মেইকেল। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ডেনিশদের টাইব্রেকার-পরীক্ষা পর্যন্ত তুলে এনেছিলেন স্মেইকেল।

এরপর ডেনিশ অধিনায়ক সিমোন ক্যার লক্ষ্যভেদ করেন। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ডেনমার্ক। ক্রামানিক এসে লক্ষ্যভেদ করে ক্রোয়েশিয়াকে ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফেরান। ক্রন-দেলি ডেনমার্ককে আবারও এগিয়ে দেন ২-১ ব্যবধানে। মডরিচ এসে এবার আর কোনও ভুল করেননি। লক্ষ্যভেদ করে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন ক্রোয়েশিয়াকে। কিন্তু নাটকের তখনও অনেক বাকি ছিল।

লাস শোনের শট রুখে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক সুবাসিচ। পরের দফায় ক্রোয়াট জোসিপ পিভারিচের শটও ঠেকিয়ে দেন স্মেইকেল। ২-২ ব্যবধানে ম্যাচ গড়ায় সাডেন ডেথে। এই অবস্থায় নিকোলাই হোর্গেনসনকেও রুখে দেন সুবাচিস। অর্থাৎ পরের শটে ক্রোয়েশিয়া লক্ষ্যভেদ করলেই তারা উঠে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে।

রাকিটিচ এসে লক্ষ্যভেদ করে ক্রোয়েশিয়াকে শেষপর্যন্ত তুলেছেন শেষ আটে। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলের এই জয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো শেষ আটের দেখা পেল ক্রোয়েশিয়া।

এর আগে ম্যাচ শুরুর ৫৮ সেকেন্ডের মাথাতে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দ্রুততম গোলের দেখা যায় রাশিয়া বিশ্বকাপ। এর আগে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ঘানার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিন্ট ডেম্পসে ২৯ সেকেন্ডে গোল করেছিলেন। ইয়োনাস কুনুডসেনের লম্বা থ্রোয়ে বল পান টমাস ডেলেনি। জটলার মধ্যে বল দেন মাটিয়াস ইয়োরগেনসেনকে। এই ডিফেন্ডারের গড়ানো শট ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের পায়ে লেগে জালে ঢুকে যায়।

তবে এ সুখ বেশিক্ষণ থাকেনি ডেনিশ শিবিরে। চার মিনিটের মাথায় তা পরিশোধ করেন মারিও মানজুকিচ। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা ক্রস ঠিকমতো ‘ক্লিয়ার’ করতে পারেনি ডেনিশ রক্ষণভাগ। বক্সের ভেতর থেকে ক্রোয়াট স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচ শট নিয়েছিলেন। পায়ে ঠিকভাবে লাগাতে না পারলেও বলটা ঠিকই জালে আশ্রয় নিয়েছে।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে দুই দলই ৪ মিনিটের মধ্যে গোলের মুখ দেখল। এর আগে সর্বশেষ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচে এমনটা দেখা গেছে।

প্রথম ৪ মিনিট দুই গোল, এরপর আর গোলের দেখা পায়নি কোনও দলই। তাই ১-১ গোলের সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় উভয় দল। প্রথমার্ধে ৫৬ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৯টি শট নিয়েছেন লুকা মডরিচ-রাকিতিচরা। এর মধ্যে গোলপোস্টে ছিল ৩টি শট। ডেনমার্ক ৪টি শট নিয়ে ২টি শট রাখতে পেরেছে ক্রোয়াট গোলপোস্টে।

দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে সুযোগ তৈরিতে এগিয়ে ছিল ডেনমার্ক। যদিও দুর্বল ফিনিশিংয়ে কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায়নি তারা। ৫৬ মিনিটে ডেনমার্কের ব্র্যাথওয়েটের শট গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৬১ মিনিটে এরিকসেনের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে ভালো বোঝাপড়ায় পৌলসেন শট নিলেও তা গোলের দেখা পায়নি।

৭২ মিনিটে গোলের দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলেন ডেনমার্কের নিকোলাই ইয়ার্গেনসেন। কিন্তু ডি বক্সের ভেতর থেকে সোজা গোলরক্ষকের কাছে বলটি মারেন তিনি। ডেনমার্কের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে ৭৭ মিনিটে মদ্রিচ ডি বক্সের বাইরে থেকে দূরপাল্লার শট করলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের দুই মিনিটের মাথায় রাকিতিচের লক্ষ্যভ্রষ্ট শট কেবল হতাশাই বাড়ায়। ম্যাচে আর কেউ গোল না পেয়ে ১-১ সমতায় থেকে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ করে দু’দল। দ্বিতীয়বারের মতো একইদিনে আরও একটি ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াল।

অতিরিক্ত সময়ে খেলোয়াড়দের শরীরে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। ৯৯ মিনিটে ডেনমার্কের স্কোন শট নিলেও সেটি বাইরে চলে যায়। পুরো ম্যাচের সবচেয়ে উত্তেজনাকর মুহূর্তটি আসে ১১৪ মিনিটের সময়। ডি-বক্সের ভেতর গোলরক্ষক স্মাইকেলকে কাঁটিয়ে পুরো গোলমুখ উন্মুক্ত থাকলেও শট করার আগে রেবিচকে ফাউল করে বসেন ডেনমার্কের ইয়ার্গেনসেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু স্পট কিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেই সময়ে পেনাল্টি মিস করে বসেন গ্রুপ পর্বেই পেনাল্টিতে গোল করা মদ্রিচ।

শেষ মুহূর্তে আর কোনও সম্ভাবনা তৈরি না হলে পেনাল্টি শুট-আউটে গড়ায় ম্যাচ। সেখানেও চলে রঙ বদলের খেলা। ক্রোয়েশিয়ান গোলরক্ষক সুবাসিচ অসাধারণ নৈপুণ্য দেখি ডেনিশদের তিনটি পেনাল্টি রুখে দেন। যেখানে পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলা ডেনিশ গোলরক্ষক মাত্র দুটি পেনাল্টি সেভ করতে পারেন।

মূলত, ডেনমার্কের প্রধান খেলোয়াড় এরিকসেন পেনাল্টিতে গোল দিতে ব্যর্থ হওয়াতেই কিছুটা চাপে পড়ে যায় তারা। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তাদের। ১৯৯৮ সালের পর আবারও বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো ক্রোয়েটরা। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে স্পেনকে হারিয়ে ওঠা স্বাগতিক দেশ রাশিয়া।

এএ/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল শনিবার
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘গিনেস বুকে’ স্থান পাবে : প্রতিমন্ত্রী
টিভিতে আজকের খেলা
‘ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা অবশ্যই ফর্মে ফিরবে’
X
Fresh