• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মেসি জাদুতে শিরোপার স্বপ্ন আর্জেন্টিনার

স্পোর্টস ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১৩ জুন ২০১৮, ১১:১৪

বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে অনেক বড় দল হতে পারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে আর্জেন্টিনার যাত্রাটা বলতে গেলে প্রায় উল্টো। অথচ শুধু জনপ্রিয়তা হিসেব করলে আর্জেন্টিনার সমকক্ষ পাওয়া যাবে কেবল ব্রাজিলকে। এই দলটার শো-কেসে বিশ্বকাপ কি না মাত্র দুটি।

আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দল বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করে। এটি আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থা (এএফএ) দ্বারা পরিচালিত হয়, যা আর্জেন্টিনাতে ফুটবলের পরিচালক। আর্জেন্টিনার ঘরের মাঠ ইস্ত্যাদিও আন্তনিও ভেসপুসিও লিবের্তি এবং তাদের প্রধান কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। দলটি বর্তমানে ফিফা বিশ্ব র‍্যাংকিংএ পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

আর্জেন্টিনা মোট পাঁচবার ফিফা বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপ, যেখানে তারা উরুগুয়ের বিপক্ষে ৪–২ ব্যবধানে পরাজিত হয়। এরপরের ফাইনাল ১৯৭৮ সালে যেখানে তারা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩–১ ব্যবধানে জয় লাভ করে এবং তাদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। ১৯৮৬ সালে দিয়াগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৩–২ ব্যবধানে হারিয়ে তারা তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। আর্জেন্টিনা ১৯৯০ সালে ফাইনালে উঠে এবং যেখানে তারা জার্মানির বিপক্ষে বিতর্কিত পেনাল্টিতে ১–০ ব্যবধানে পরাজিত হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে দলটি ফাইনালে উঠে এবং অতিরিক্ত সময়ের গোলে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে পরাজিত হয়।

দলটি কোপা আমেরিকায় দারুণ সফল। তারা মোট চৌদ্দবার এই শিরোপা জিতেছে। ১৯৯২ সালে তারা ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ শিরোপাও জেতে। এছাড়া ২০০৪ এথেন্স এবং ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও জেতে আর্জেন্টিনা।

জাতীয় দলগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্স ফিফা দ্বারা স্বীকৃত তিনটি সর্বোচ্চ শিরোপা জিতেছে। যেগুলো হল: ফিফা বিশ্বকাপ, ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ এবং অলিম্পিক স্বর্ণপদক। এছাড়া তারা তাদের মহাদেশীয় শিরোপাও জিতেছে (আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা এবং ফ্রান্স উয়েফা ইউরোপীয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ)। উরুগুয়ে, ব্রাজিল, জার্মানি এবং বিশেষ করে ইংল্যান্ডের সাথে আর্জেন্টিনার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা রয়েছে। ২০০৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মত আর্জেন্টিনা ফিফা বিশ্ব র‍্যাংকিং-এ শীর্ষস্থান অর্জন করে।

যদিও আর্জেন্টিনাতে ফুটবল খেলা শুরু হয় ১৮৬৭ সালে, আর্জেন্টিনার প্রথম জাতীয় ফুটবল দল গঠিত হয় ১৯০১ সালে। তারা উরুগুয়ের বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় প্রথম মুখোমুখি হয়। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯০১ সালের ১৬ মে, যেখানে আর্জেন্টিনা ৩–২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। আর্জেন্টিনার প্রথম অফিসিয়াল শিরোপা ছিল কোপা লিপতন। ১৯০৬ সালে, উরুগুয়েকে ২–০ ব্যবধানে হারিয়ে এই শিরোপা জেতে তারা। ঐ বছর আর্জেন্টিনা নিউটন কাপেও অংশগ্রহন করে এবং উরুগুয়েকে ২–১ ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জেতে। ১৯০৭ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত টানা আরও চারবার এই শিরোপা জেতে তারা। এছাড়া তারা ১৯০৬ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত চারবার লিপতন কাপও জেতে।

১৯১৬ সালে কনমেবল পরিচালিত দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপে (বর্তমান: কোপা আমেরিকা) অংশগ্রহন করে আর্জেন্টিনা। এই প্রতিযোগিতায় শিরোপা জেতে উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনা তাদের প্রথম দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপ জেতে ১৯২১ সালে। প্রতিযোগিতায় তারা উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে এবং ব্রাজিলের বিপক্ষে সবকয়টি খেলায় জয় লাভ করে।

১৯২৪ সালের ২ অক্টোবর, উরুগুয়ের বিপক্ষে একটি প্রীতি খেলায় অংশগ্রহন করে আর্জেন্টিনা। খেলার ১৬তম মিনিটে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার সিজারিও ওঞ্জারি কর্ণার কিক থেকে একটি গোল করেন। তিনি কর্ণার কিক নেন এবং কোন খেলোয়াড় বল স্পর্শ না করলেও তা উরুগুয়ের গোলপোস্টের ভেতরে ঢুকে যায়। এই গোলটির নাম দেওয়া হয় ‘‘গোল অলিম্পিকো’’ বা ‘‘অলিম্পিক গোল’’।

১৯২৭ সালে আর্জেন্টিনা তাদের তৃতীয় দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা জেতে। এই প্রতিযোগিতার তিন খেলার সবকয়টিতেই জয় লাভ করে তারা। আর্জেন্টিনা ১৯২৮ আমস্টারডাম অলিম্পিকে অংশগ্রহন করে। উরুগুয়ের বিপক্ষে ফাইনালে ২–১ ব্যবধানে হেরে রৌপ্যপদক জিতে তারা। ১৯২৯ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপ জিতে আর্জেন্টিনা। এই প্রতিযোগিতায়ও আর্জেন্টিনা সবকয়টি খেলায় জয়লাভ করে। ১৯৩০ সালে ফিফা প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় আজেন্টিনাসহ মোট ১৩টি দেশ অংশগ্রহন করে। সবকয়টি খেলায় জয়লাভ করে ফাইনালে পৌছালেও, উরুগুয়ের বিপক্ষে ৪–২ ব্যবধানে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় তাদের। প্রতিযোগিতায় আট গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন আর্জেন্টিনার গুইলেরমো স্তাবিল। ১৯৩৪ ইতালি বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করলেও প্রথম পর্বে সুইডেনের বিপক্ষে ৩–২ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপের এটি ২১তম আসর। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা খেলেনি ৪ বার। ১৬৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড, আর ১৯৭০ সালে মেক্সিকোতে নিজেদের অযোগ্যতায় বিশ্বকাপে অংশ নিতে ব্যর্থ হয় আর্জেন্টিনা। আর ১৯৩৮ সালে ফ্রান্স এবং ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে নিজেরাই খেলতে যায়নি তারা। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসর, ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপ এবং সবশেষ ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে রানারআপ দলের তালিকায় নাম ওঠে আর্জেন্টিনার। ১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল এছাড়া সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি আর।

১৯৭৪ সালের পর থেকে নিয়মিতই বিশ্বকাপে খেলছে আর্জেন্টাইনরা। ১৯৭৮ সালে মারিও কেম্পেসের হাত ধরে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল দেশটিকে। এরপর ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপটা শুধুই আর্জেন্টিনাময়। আরও নির্দিষ্ট করে বললে এই বিশ্বকাপেই বিশ্ববাসী দেখতে পেলো দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো এক জাদুকরকে। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার অসাধারণ গোলের আগের ম্যাচেই (কোয়ার্টার ফাইনালে) ইংল্যান্ডকে উপহার দেন ‘ঈশ্বরের হাত’ এবং ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। এমন দুটি গোলে পুরো পৃথিবীকে তিনি এমনই হতভম্ব করে দিলেন যে সেই ‘দিয়েগো-ক্রেজ’ ধরাধামে আর্জেন্টিনাকে অন্যতম জনপ্রিয় দলে পরিণত করল। আজও আর্জেন্টিনা জগৎজোড়া খ্যাতির মূল কারণ দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা।

তবে গত এক দশকেরও বেশি সময়ে ম্যারাডোনার মতোই আরেক ক্ষুদে জাদুকর লিওনেল আন্দ্রেস মেসি তার বাঁ পায়ের জাদুতে বিমোহিত করে রেখেছেন পুরো ফুটবল বিশ্বকে। ১৯৮৬ সালে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান ম্যারাডোনা, ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেও তার অসাধারণ ফুটবলের কারণেই ফাইনালে পৌঁছেছিল আর্জেন্টাইনরা।

১৯৯৪ সালে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় যতোটা না পোড়ায়, তার চেয়ে বেশি পোড়ায় আসলে ম্যারাডোনার ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে বিদায় নেয়াটা। এরপর গত ৫টি বিশ্বকাপেই ফেবারিটের তকমা গায়ে নিয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেয় আর্জেন্টিনা। এই ৫ আসরে সেরা সাফল্য ব্রাজিল বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়া।

ব্রাজিল বিশ্বকাপে সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিল লা আলবিসেলেস্তেরা। একে একে সব বাধা পেরিয়ে লিওনেল মেসির নেতৃত্বে দুরন্ত গতিতে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে নাম লেখায় আর্জেন্টিনা। ফাইনালে তাদের সামনে জার্মানি। ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পরও কেউ গোল করতে পারেনি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে মারিও গোৎসের দুর্দান্ত এক গোলে শিরোপা জিতে নেয় জার্মানি। বিশ্বকাপ বঞ্চিত থাকতে হয় সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি এবং আর্জেন্টিনাকে।

রাশিয়া বিশ্বকাপে এবারের আসরেও অন্যতম শক্তিশালী দল তারা। কিন্তু বাছাইপর্বে হতাশাজনক পারফরম্যান্স বড় কিছুর স্বপ্ন দেখার সাহস দিচ্ছে না আলবিসেলেস্তেদের।

ডাকনাম

:

লা আলবেসিলেস্তে

অ্যাসোসিয়েশন

:

আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থা

কনফেডারেশন

:

কনমেবল (দক্ষিণ আমেরিকা)

হেড কোচ

:

জর্জ সাম্পাওলি

অধিনায়ক

:

লিওনেল মেসি

সর্বাধিক ম্যাচ

:

হাভিয়ের জেনেত্তি ও হাভিয়ের মাসচেরানো (১৪৫)

সর্বাধিক গোলদাতা

:

লিওনেল মেসি (৬৪)

হোম ভেন্যু

:

আন্তনিও ভেস্পসিয়া লিবেরতি (এল মনুমন্তোল)

বর্তমান র‌্যাংকিং

:

০৫

সেরা সাফল্য

:

চ্যাম্পিয়ন ১৯৭৮ ও ১৯৮৬

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ

:

১৯৩০, ১৯৩৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬

১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮

সেরা খেলোয়াড়

:

লিওনেল মেসি

এএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘গিনেস বুকে’ স্থান পাবে : প্রতিমন্ত্রী
টিভিতে আজকের খেলা
‘ফুটবলের উজ্জ্বল তারকারা অবশ্যই ফর্মে ফিরবে’
ঈদের শুভেচ্ছা ভাগাভাগি করল ইউরোপের ফুটবল ক্লাবগুলো
X
Fresh