• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মরুভূমি থেকে সবুজ গালিচায়

স্পোর্টস ডেস্ক

  ২৪ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:২০

বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলতে তামিম ইকবাল মুখিয়ে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভেঙে পড়া স্টেডিয়ামের উন্নয়নে লর্ডস ম্যাচের অপেক্ষায়। তামিমের কথায়, ক্রিকেট এমন একটি খেলা, যেটি মানুষকে একত্র করে দেয়, দূরত্ব ঘুচিয়ে সম্প্রীতি বাড়ায়।

ক্রিকেট শুধু দূরত্ব কমানো আর সম্প্রীতিই বাড়ায়না, ক্রিকেট মুক্তিও দেয়। বেশি দিন হয়নি, প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে যখন কলার উঁচিয়ে শাকিল বল নিয়ে ছুটছিলেন তখন অনেকেরই জিজ্ঞাসা কে এই বোলার?

এমন প্রশ্ন আসারই কথা। এর আগে কখনও তাকে বল নিয়ে ছুটতে দেখেনি অনেকেই। পরক্ষনে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, তার নাম সালাউদ্দিন শাকিল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এবারই সে প্রথমবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছে। এটা বলার পর অবশ্য তাকে নিয়ে আগ্রহের সমাপ্তি ওখানেই কিন্তু ক্রিকেটের জনপ্রিয় সাইট ক্রিকইনফোতে উঠে এসেছে শাকিলের না জানা অনেক কথা।

শৈশবটা তার ক্রিকেট খেলেই কেটেছে। পরিবারের স্বচ্চলতা আনতে পাড়ি জমান দুবাইতে। চার বছরের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আর থাকা হয়নি সেখানে। বাধ্য হয়েই চলে আসেন দেশে। আসার পর আর যাওয়া হয়নি সেখানে। শাকিল আবারও শুরু করেন ব্যাটে-বলের অনুশীলন।

গত চার বছর আগেও যিনি ছিলেন দুবাইয়ের মরুভূমির বুকে নির্মাণ শ্রমিক, সে কিনা লাল-সাদা বলের আড়ালে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের হয়ে মাঠ কাঁপানোর। শাকিলের গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানিয়ে দেয়।

এবারই প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে শাকিলের অভিষেক সেন্ট্রাল জোনের হয়ে। সাউথ জোনের বিপক্ষে বল করতে নেমে প্রথম দিনেই ৫০ রান দিয়ে দুই উইকেট নেয়া শাকিল শোনালেন তার জীবনের গল্প।

মরুভূমির বুকে ফেলে আশা দিনগুলো নিয়ে ২৮ বছর বয়সী শাকিল বলেন, প্রতিদিন ভোর চারটায় কাজের উদ্দেশ্যে বের হতাম। দুপুরে খাওয়ার জন্য পলিথিনে করে ভাত নিয়ে যেতাম। পলিথিন ছাড়া উপায় ছিলনা কারণ মরুভূমির বাতাস প্লেটের ভাত উড়িয়ে নিয়ে যেত। ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কাজ করা লাগতো।

২০১২ সালে আমার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জের একটি কোচিং ক্লাবের কোচ গোলাম রসুলের নিয়ে যান। সেখানে অনুশীলন করার পর তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে সুযোগ পাই। ভালো খেলায় পরের মৌসুমেই দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে খেলি।

এরপর ২০১৪ সালে একটি ক্লাবে ট্রায়াল দিতে যাই। আমার বুট ছিলোনা। আমার বন্ধু মেহরাব হোসেন জোশি একজোড়া বুট দিয়েছিল। আমাকে দেখে সবাই হাসছিল। ভাগ্যক্রমে আমি নেটে ভালো বল করি।

এরপর একদিন ফতুল্লায় প্রাইম দোলেশ্বরের নেটে বল করার সুযোগ পাই। সেখানেই পরিচয় হয় অনুর্ধ-১৯ দলের কোচ মিজানুর রহমানের সাথে।

শাকিলের বোলিং দেখে মিজানুর বলেন, এখনও সে নিখুঁত বোলার না হয়ে উঠলেও সে অনেক ভালো করবে ভবিষ্যতে। তার শারীরিক গঠন আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি আশা করি সে একসময় জাতীয় দলের হয়ে খেলবে।

কোচ মিজানুরই শুধু নন, মিজানুরকে দেখে মুগ্ধ হয়েছে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হাবিবুল বাশারও।

সেন্ট্রাল জোনের ম্যানেজার মিল্টন আহমেদ বলেন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলা দেখে আমরা তাকে রাজশাহীতে নেট বোলার হিসেবে নিয়ে আসি। নেটে সে তার সঠিক ব্যবহার করতে পেরেছে। তার বোলিংয়ে ইনসুইং টা খুবই কার্যকর। ঘন ঘাসের উইকেটে সে অসাধারণ বোলিং করেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম আইন সংস্থার একটি জরিপে দেখা যায় ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়েছে। জরিপ অনুযায়ী বেশির ভাগ শ্রমিকই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সেখানে শাকিল ব্যতিক্রম। ক্রিকেট তাকে ফিরিয়ে এনেছে মরুভূমির তপ্ত বালু থেকে ঘন ঘাসের সবুজ গালিচায়।

এমআর/এএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ও ম্যাচ রেফারি সুব্বা রাও আর নেই
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের দায়িত্বে বাংলাদেশের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক কোচ
হাথুরুসিংহের ঢাকায় ফেরা নিয়ে যা জানাল বিসিবি
দলে ফেরা প্রসঙ্গে শান্তকে যা বলেছেন তামিম
X
Fresh