মাঙ্কিগেট, যে বিতর্কে থমকে যায় সায়মন্ডসের ক্যারিয়ার
অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস, অস্ট্রেলিয়ার সোনালী প্রজন্মের অন্যতম প্রভাব বিস্তারকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মাঠে যার উপস্থিতি ছিল প্রতিপক্ষের জন্য নিশ্চিত আতঙ্কের নাম। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব সেক্টরে যিনি ছিলেন অসাধারণ। মাঠের পারফরম্যান্সের বাইরে প্রতিপক্ষকে নিজের কথা কিংবা ভাবমূর্তি দিয়েও গুড়িয়ে দেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল সায়মন্ডসের।
সেই সায়মন্ডস কিনা আচমকাই বিদায় নিলেন একাকী, রাতের অন্ধকারকে সাথী করে। মাস দুয়েক আগে শেন ওয়ার্নের বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়া এবং ক্রিকেট ভক্তদের দুঃখে ভাসিয়ে মারাত্মক এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেন সায়মন্ডস। ৪৬ বছর বয়সে বিদায়ের সময়ে যার পাশে ছিল, তারই পোষ্য কুকুর।
মাঠের ক্রিকেটে প্রভাব বিস্তার করা সায়মন্ডসের ক্যারিয়ারও থমকে যায় দৃশ্যপটের অন্তরালে। যেখানে অবশ্যই বিতর্ক ছিল সঙ্গী। সেই সব বিতর্কের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হয় ‘মাঙ্কিগেট’ নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেটার হরভাজন সিংয়ের সঙ্গে যে বিতর্কের সূত্রপাত।
২০০৮ সালের সেই বিতর্ক নিয়ে হরহামেশাই উঠতো আলোচনা। ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কের শুরু সিডনি টেস্টকে ঘিরে। সেই টেস্ট চলাকালীন ভারতের হরভাজন নিজ ভাষায় ‘বানর’ বলে ডাক দিয়েছিলেন সায়মন্ডসকে। এমনটাই দাবি করেছিলেন সায়মন্ডস। তার সঙ্গে একই দাবি তুলেছিল রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্করা।
হরভাজনের এমন বর্ণবিদ্বেষী আচরণের জন্য সেই টেস্ট চলাকালীন এই ভারতীয় স্পিনারের শাস্তির দাবি করেন অজি ক্রিকেটাররা। শাস্তির মুখোমুখি হোন হরভাজনও। তাকে দেওয়া হয় তিন টেস্টের সাসপেনশন। তবে হরভাজন জানান, এমন কিছু বলেননি তিনি। নিজের সেই দাবিতে অটুট ছিলেন হরভাজন। তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন শচীনও।
ফলে হরভাজনকে দেওয়া তিন টেস্টের সাসপেনশন মানতে নারাজ বলে জানায় ভারতীয় বোর্ড। হরভাজনের টেস্ট খেলার নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে সফর থেকে দেশে ফেরার হুমকিও দেয় ভারতীয় বোর্ড। শেষ পর্যন্ত আপিল কমিশনার শুনানির জন্য ডাক দেন। যেখানে দুই দেশের ক্রিকেটাররা নিজেদের বলা কথায় অটুট থাকেন।
শেষ পর্যন্ত হরভাজনের অবশ্য তিন টেস্টের নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি মেলে। তবে এই ভারতীয় অফস্পিনারের ম্যাচ ফি এর ৫০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। সেই ঘটনার পর সায়মন্ডসের ক্যারিয়ারে ছিল পড়ন্তের ছাপ। ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারার পাশাপাশি মদ্যপান করে ম্যাচ খেলতে আসা, অনুশীলনে আসার মতো অন্যান্য বিতর্কের কারণে শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারটাই থমকে যায় সায়মন্ডসের।
২০১২ সালে জাতীয় দল থেকে অবসরই নিয়ে ফেলেন ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট ইমপ্যাক্টফুল’ ক্রিকেটার সায়মন্ডস। জাতীয় দলে না খেললেও আইপিএলে খেলেছিলেন এই অজি সুপার অলরাউন্ডার। সেখানে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজিতে একই দলে খেলেছিলেন ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কের দুই নায়ক হরভাজন-সায়মন্ডস।
অজি ক্রিকেটার সায়মন্ডস আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২৩৮ ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে ২৬ টেস্টে ৪০ গড়ে ১৪৬২ রানের পাশাপাশি ২৪ উইকেট শিকার করেন। ১৯৮ ওয়ানডেতে ৫০৮৮ রানের পাশাপাশি ১৩৩ উইকেট আছে সায়মন্ডসের নামের পাশে।
১৪ টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেট ও ৩৩৭ রান নিয়েছেন সায়মন্ডস। আইপিএলেও ছিলেন সফল। ৩৯ ম্যাচে ৯৭৪ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ২০ উইকেট। জিতেছেন আইপিএল শিরোপাও।
মন্তব্য করুন