নন্দিত সিজার, নিন্দিত সিজার
বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছেন ব্রাজিলের হয়ে এক দশক মাঠ মাতানো তারকা। সেলেকাওদের জার্সিতে তিনটি বিশ্বকাপে গোল পোস্ট সামলিয়েছেন। দুটি কোপা আমেরিকা ও দুটি ফিফা কনফেডারেশন কাপের শিরোপা জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। নাম জুলিও সিজার।
জাতীয় দলের মতো ক্লাব ফুটবলেও উজ্বল ছিলেন ৬ ফিট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলরক্ষক। পেশাদার ফুটবলে ইন্টার মিলান, বেনফিকা, কুইনস পার্ক রেঞ্জার ও ফ্লেমেঙ্গোর মতো দলে খেলেছেন।
ইন্টারে পাঁচটি সিরি আ’, তিনটি কোপা ইতালিয়া, চারটি সুপার কোপা ইতালিয়ানা জিতেছেন। একটি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপাও তুলেছেন। ইতালিয়ান দলটির পক্ষে ২০০৯/১০ মৌসুমে ট্রেবল জেতার রেকর্ড রয়েছে তার নামের পাশে।
ক্যারিয়ারে ব্যক্তিগত অর্জন কম নয় তার। সিরি আ’র সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন দুই দফা। উয়েফার পক্ষ থেকেও একবার এই খেতাব জিতেছেন। ফিফা কফেডারেশনের স্বপ্নের একাদশে জায়গা পেয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্টরি অ্যান্ড স্ট্যাটিকটিসের (আইএফএফএইচএস) কনমেবল দশক সেরা একাদশে ছিল তার নাম।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে কলঙ্কজনক এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে হয়েছে সিজারকে। ২০১৪ সালের ৭ জুলাই বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে বসেছিল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ। ব্রাজিলের সামনে প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি। গোলপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন সিজার। বাকিটা সবার জানা। ৭-১ ব্যবধানে হারতে হয়েছিল বিশ্ব আসরের স্বাগতিকদের।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ চলাকালে বাংলাদেশ এসেছিলেন সিজার। ফিফার কিংবদন্তি হিসেবে এই সফর করার সময় ঢাকায় নানা আয়োজনে যোগ দেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্রাজিলের হয়ে ৮৭ ম্যাচ খেলা এই তারকা।
যেখানেই পা বাড়ান সিজার, ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ওই ম্যাচের বিষয় চলে আসে সামনে। ঢাকায়ও একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার।
নিজের জালে সাত গোল হজম নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুহূর্তটা ছিল অদ্ভুত। আমাদের জন্য, সমর্থকদের জন্য, সবার জন্য। আসলে ব্যখ্যা করার মতো না। আমি স্তব্ধ ছিলাম।’
ওই ম্যাচ থেকে জীবনের অন্যতম সেরা শিক্ষা পেয়েছিলেন বলে মনে করেন সিজার। হতাশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছেন তিনি।
‘তখন আমার মাথায় আসে, অনেক তরুণ রয়েছে আমাদের দলে। এখানেই থেমে থাকলে হবে না। তাদের জন্য ভালো কিছু করতে হবে। পুরো দল একেবারেই নিশ্চুপ ছিল। এরপর তৃতীয় স্থানের ম্যাচ ছিল নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে। আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে এমন পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়া।’
বিশাল ব্যবধানে হারের পর সবার আগে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ তাকে স্বান্তত্বনা দেন।
‘ম্যাচ শেষ হতেই ড্রেসিং রুমে প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন। ফুটবলে এমন হতেই পারে। এখানেই থামলে চলবে না। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তার মুখ থেকে এমন কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাফুফের বিশেষ আয়োজন হিসেবে আনা হয়েছি ব্রাজিলের এই কিংবদন্তিকে।
ইন্টার মিলানের জার্সিতে ২২৮ ম্যাচে অংশ নিয়েছেন ৪১ বছর বয়সী তারকা। ইতালিয়ান ঐতিহ্যবাহী এই দলের হয়ে খেলেছেন রোনালদো নাজেরিও, রোনালদিনহো ও জাভিয়ের জানেত্তির মতো কিংবদন্তি ফুটবলার। এদের মধ্যে সেরা কে?
‘কঠিন প্রশ্ন। তবে আমার চোখে সেরা অবশ্যই রোনালদিনহো। তার মধ্যে বিশেষ কিছু ছিল। এক কথায় তিনি একজন জিনিয়াস ফুটবলার।’
লিওনেল মেসি নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? বর্তমান প্রজন্মের সেরা ফুটবলার কে? এই নিয়ে বিশ্বজুড়েই বিতর্ক। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও জুলিও সিজারের চোখে এগিয়ে রয়েছেন মেসিই।
মেসির প্রসঙ্গ টেনে এই তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। দীর্ঘ দিন ধরে মেসি-রোনালদো একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন। সব বিবেচনা করে আমি মেসিকেই এগিয়ে রাখছি।’
পর্তুগিজ কোচ হোসে মোরিনহোর অধীনে ইন্টারের হয়ে ট্রেবল জেতার রেকর্ড রয়েছে। সে সময়কার স্মৃতিচারণ করে এই গোলরক্ষক বলেন, ‘২০০৯/১০ মৌসুম আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময়। মোরিনহো ও দলের অন্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। মরিনহো স্পেশাল কোচ। তার থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’
বাফুফের টার্ফে নারী ফুটবলারদের নিয়ে বিশেষ সেশনেও অংশ নিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই গোলরক্ষক।
সফরটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই ফিফা ও বাফুফেকে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি আনন্দিত।’
ওয়াই
মন্তব্য করুন