• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ফ্রাঞ্চাইজি লিগ যেভাবে পাল্টে দেয় ভারতীয় ফুটবলের চিত্র

  ০৯ জুন ২০২১, ১৯:৫১
asian tournament india football, Indian Super League, rtv online
২০১০ বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় উরুগুয়াইয়ান তারকা ডিয়েগো ফরল্যানের সঙ্গে আইএসএলে জুটি বাধেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী

ভারতের সর্বোচ্চ ফুটবল লিগের নাম আই-লিগ। ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) নামে নতুন এক লিগ গঠন করে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। পরের বছর মাঠে গড়ায় ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট। লিগের সেরা চার দল প্লে-অফের মাধ্যমে ফাইনাল খেলে। ফাইনালে শিরোপা জয়ীদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারা এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। অন্যদিকে যে দলটি লিগের সর্বোচ্চ পয়েন্ট আদায় করে তাদের দেয়া হয় লিগ উইনার শিল্ড ট্রফি। পাশাপাশি এএফসি কাপ খেলার টিকিটও পেয়ে যায় তারা।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ মাঠে গড়ানো পর থেকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ফুটবলাররা যোগ দিতে থাকে ভারতে। স্থানীয় দলের সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজি হিসেবে যুক্ত হয় ইউরোপের দলগুলো। দলের মালিকানা নিতে দেখা যায় বলিউড তারকাদেরও। বিশ্বমানের কোচদের সহায়তায় দিনের পর দিন বাড়তি তালিম পেতে থাকেন স্থানীয় ফুটবলাররা। ডিয়েগো ফরল্যান, লুইস গার্সিয়া, নিকোলাস এনেলকা, মাইকেল সিলভেস্টারের মতো ফুটবলের বড় নাম গুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলেছেন সুনীল ছেত্রীদের সঙ্গে।

ভারতীয় ব্যবসায়ী, অভিনেতা থেকে ক্রিকেটার পর্যন্ত সম্পৃক্ত হন আইএসএলে

আইএসএল আয়োজনের পরই পাল্টে যেতে থাকে ভারতীয় ফুটবলের চিত্র। ক্লাব ফুটবলে এশিয়ান পর্যায়ে আশানুরূপ কিছু না করতে পারলেও আন্তর্জাতিক ফুটবলে নতুন এক ভারতকে দেখা গেছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে দেশটির র‌্যাংকিং ছিল ১৭১। ২০১৫ সালে ১৬৬, ২০১৬ সালে ১৩৫, ২০১৭ সালে ১০৫ ও ২০১৮ সালে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ৯৭তম স্থানে উঠে আসে ভারত।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান বাছাই পর্বে ছাড়াও নিজেদের ফুটবল কূটনীতির মধ্যে প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছে দেশটি। ২০১৯ সালে এএফসি এশিয়ান কাপেও অংশ নেয়া দলটি।

অ্যাতলেটিকো ডি কলকাতায় নাম লেখান মামুনুল ইসলাম মামুন

আইএসএলের প্রথম আসরেই বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম মামুন ফ্রাঞ্চাইজি অ্যাতলেটিকো ডি কলকাতায় যোগ দিয়েছিলেন। যদিও একটি ম্যাচেও খেলেননি তিনি।

আবাহনী লিমিটেডের এই তারকা মিডফিল্ডার আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘তাদের লক্ষ্য ছিল ক্রিকেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফুটবলের নতুন জাগরণের। ফুটবলকে ভালো জায়গায় আনতে তারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ আয়োজন করেছে। শুধু টুর্নামেন্ট না, লিগে অংশ নিতে হলে দলগুলোর জুনিয়র দল গঠন করতে হবে। এমন শর্ত না মানলে লাইসেন্সই পাবে না। বড় বড় সব কোম্পানিগুলো এতে বিনিয়োগ করেছে। তার পর বিশ্বের সব তারকা ফুটবলারদের নিয়ে দল গঠন করার চেষ্টা করল। মাতারাজ্জি, দেল পিয়ারোর মতো বিশ্বজয়ীদের নিজেদের মাঠে খেলিয়েছে। তখন থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে ভারত। প্রথম লক্ষ্য ছিল র‌্যাংকিংয়ে জাতীয় দলকে একশ’র ভেতরে আনতে হবে। দ্বিতীয়টা এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করা (অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ২০১৭)। তৃতীয় লক্ষ্য এশিয়ান কাপে অংশ নেয়া। সব কিছুতেই তারা সফল। এটা কিন্তু একদিনে হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমেই তারা নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এত বিশাল দেশকে এক সঙ্গে নিয়ে তারা যদি সফল হতে পারে, আমি মনে করি ৬৪ জেলায় এক সঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশও ভালো করতে পারবে।’

ইতালির হয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ী সদস্য মার্কো মাতারাজ্জি ও আলেসান্দ্রো দেল পিয়ারো খেলেছেন আইএসলে

মঙ্গলবার (৮ জুন) আইএসএলের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছে ভারত। এবারের টুর্নামেন্টের ভারতীয় ফুটবলারদের গুরুত্ব আরও বাড়তে চলেছে। বুধবার (৯ জুন) থেকে শুরু হচ্ছে দেশটির ফুটবলারদের দলবদল। নতুন সিদ্ধান্তে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দলগুলোর প্রথম একাদশে ছয়ের পরিবর্তে এখন থেকে সাতজন করে ভারতীয় ফুটবলারকে রাখতেই হবে।

২০১৪ সালে প্রথম আসরে একাদশে ছয়জন বিদেশি ও পাঁচজন ভারতীয় ফুটবলারকে রাখা যেত। ২০১৭/১৮ মৌসুমে বদলে যায় নিয়ম। একাদশে ছয়জন করে স্থানীয় ফুটবলার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হতে চলা অষ্টম আসরে বাড়িয়ে করা হচ্ছে সাত।

বিজ্ঞপ্তিতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের ফুটবলের মান উন্নত করতেই কাজ করছে আইএসএল। তাই একাদশে স্থানীয় ফুটবলারের সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তাদের দাবি, এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) ক্লাব প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিধি মেনেই একাদশে চার বিদেশি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে নতুন নির্দেশনায় যুব ফুটবলারদের জন্য সুখবর রয়েছে। প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজির জুনিয়র দল থেকে কমপক্ষে দুজন ফুটবলার রাখতে হতো। এবার সংখ্যা বেড়ে চার করা হয়েছে। প্রতিটি ম্যাচে তরুণ ফুটবলারদের মধ্যে দুজনকে খেলাতেই হবে।

ভারতের মতো বাংলাদেশেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফুটবল আয়োজন শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল সকার লিগ ইউকে (এসএলআই) ও সেলিব্রেটি ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের (সিএমজি) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রাথমিকভাবে লিগের নাম ‘বাংলাদেশ সুপার সকার লিগ’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এমনকি ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিকে অ্যাম্বাসেডার করার পরিকল্পনাও ছিল। শেষ পর্যন্ত সব ভেস্তে যায়।

গেল অক্টোবরে নতুন মেয়াদে বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মো. সালাউদ্দিন। নির্বাচনের আগে আরটিভি নিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কারণে ভারত অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এমন উদাহরণ টেনে কাজী সালাউদ্দিনের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশে নতুন করে এমন আয়োজন সম্ভব?

জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ফুটবলে কেউই এমন আয়োজন করছে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুধু ভারতেই হয়ে আসছে।’

খেলোয়াড়, কোচ ও সংগঠক হিসেবে পাঁচ দশকের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল সংস্থা’র সম্পর্ক খুব ভালো। তাদের সঙ্গে সবসময়ই আমাদের যোগাযোগ হয়। তবে তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে চাই না। আমরা স্পেন-জার্মানির মতো বিশ্বমানের লিগগুলোকে অনুসরণ করতে চাই।’

ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh