যার হাত ধরে বছরের সবচেয়ে বড় সুসংবাদটি পায় বাংলাদেশ
২০২০ সালকে হতাশা ও বঞ্চনার বছর বলা যায়। বেশিরভাগ সময়টা করোনাভাইরাসের দাপটেই কেটেছে। একের পর এক ক্রীড়া ইভেন্ট হয়েছে বন্ধ। খুব কমই সুসংবাদ রয়েছে বছরটিতে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিটি ছিল বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন।
আকবর আলীর ‘আকবর দ্য গ্রেট’ হয়ে ওঠা কোনও গল্প নয়। ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কারটিতো তিনিই এনে দিয়েছেন। রংপুরে বেড়ে ওঠা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের হাত ধরেই অপরাজিত থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ট্রফি জিতে ফিরেছিল টাইগার জুনিয়ররা।
চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় শুরু হয় যু্ব বিশ্বকাপের ১৩তম আসর। টুর্নামেন্টে চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নেয় ১৬টি দল। ‘সি’ গ্রুপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বড় জয় পায় আকবর আলী নেতৃত্বাধীন দলটি। বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি পণ্ড হয়। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার লিগ তথা কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় বাংলাদেশ।
গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে। বৃষ্টি বিঘ্নিত এই ইনিংসে ২৮.১ ওভারে ছয় উইকেট হারিয়ে আফ্রিকার দেশটি সংগ্রহ করে ১৩৭ রান। ডি/এল পদ্ধতিতে টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২ ওভারে ১৩০ রান। জবাবে মাত্র ১১.২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১৩২ রান তুলে নেয় লাল-সবুজরা। ৬৪ বল খেলে ৯ উইকেটের বড় জয় নিয়ে মাঠে ছাড়ে তারা।
নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। মাত্র ৮৯ রানে গুটিয়ে যায় স্কটিশরা। ১৬.৪ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করে ৩ উইকেট হারিয়ে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় আকবরের দল।
গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। ব্যাট হাতে ১০৬ রানে ৯ উইকেট চলে গেলে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট ভাগ হয় দুই দলের মধ্যে।
কোয়ার্টার ফাইনালে ‘সি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬১ রান সংগ্রহ করে টাইগার যুবারা। জবাবে ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় বিশ্বকাপের আয়োজকরা। ১০৪ রানের জয় তুলে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
টাইগার যুবাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সেমিফাইনালে ২১১ রান করতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৪.১ ওভারে বাংলাদেশ টপকে যায় এই লক্ষ্য। ফলে ৩৫ বল হাতে রেখে ছয় উইকেটে জয় তুলে নেয় তারা।
৯ ফেব্রুয়ারি ছিল শিরোপার লড়াই। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত। ২০১৮ সালের শিরোপাধারীরা বাংলাদেশের সামনে ১৭৭ রান সংগ্রহ করে। এই ম্যাচেও হানা দেয় বৃষ্টি। ৪৬ ওভারে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭০ রান। সহজ লক্ষ্য তুলতে গিয়ে বিপর্যয়ে পড়তে হয় বাংলাদেশকে।
৬৫ রানে চার উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন অধিনায়ক আকবর। ৭৭ বলে ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৩ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেটে জয়ে শিরোপা লাভ করে বাংলাদেশ।
‘ওই সময়টা কি হয়েছিল সেটার ধারণা নেই। সেটা মনেও করতে পারি না। মাঝে মাঝে যখন ভিডিও দেখি তখন নিজের কাছেই অবাক লাগে। এমনটা সত্যিই করতে পেরেছিলাম। যা হয়েছে তা কল্পনার অতীত।’ স্মৃতীচারণ করে বলছিলেন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর।
২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসবে যুব বিশ্বকাপের আগামী আসর। এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। নতুনদের জন্য বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের উপদেশ কি থাকবে?
বিনয়ী কন্ঠে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি উপদেশ দেয়ার মতো কেউই নই। বলার সুযোগ থাকলে তাদেরকে জানাবো, ফল নিয়ে না ভাবে শুধু খেলাটা উপভোগ করা। সব পরিকল্পনা ঠিক থাকলে এমনিতেই ভালো ফল আসবে।’
আকবররা বিশ্বকাপ জয় করে দেশে ফিরতেই শুরু হয় করোনা তাণ্ডব। বিশ্বের নানা প্রান্তে থেকে আসতে থাকে মৃত্যুর খবর। মার্চে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। প্রায় সাত মাস পর প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে ক্রিকেটে ফেরে বাংলাদেশ। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাঠে নামে দেশের ক্রিকেটারর। দুই টুর্নামেন্টেই খেলেছেন আকবর। মাঝে বিসিবি হাইপারফরম্যান্স দলের হয়ে সাদা পোশাকেও অনুশীলন ম্যাচে অংশ নেন। যেখানে ১৬১ বলে ১৩৭ রান তুলেন তিনি। নতুন বছরে ব্যস্ত সূচি থাকছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। টানা সূচি ও করোনার কারণে বড় দল গঠন করে মাঠে নামানো হবে খেলোয়াড়দের। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ আসতে পারে আকবরদেরও।
‘জাতীয় দল নিয়ে ভাবছি না। আপাতত হাইপারফরম্যান্স দলের সঙ্গে আছি। সেখানেই মনোযোগ দিচ্ছি। তারা যেমন নির্দেশনা দিচ্ছেন সেগুলোই পালন করছি। পরিবারের বর্তমানে সঙ্গে রংপুরে অবস্থান করছি। বাসায় ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। ডাক পড়লেই ক্যাম্পে যোগ দিবো।’
ক্রিকেট প্রেমীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি নিজের প্রত্যাশাও জানিয়েছেন তিনি।
আকবর বলেন, ‘সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। আশাকরি ২০২১ সালে সবাই মাস্ক খুলে ঘুরতে পারবে। এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া।’
ওয়াই
মন্তব্য করুন