• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মরুর বুকে বাংলাদেশের আলো রেফারি শেখ আলী

  ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩২
bangladesh football federation, qatar football association referees, bangladesh vs qatar world cup qualifier,
বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেখ আলী (বাঁ-দিক থেকে প্রথম)

ফুটবলের মাঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রেফারি। যার সিদ্ধান্ত ছাড়া খেলা শুরু কিংবা শেষ হতে পারে না। তিনিই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক। যার মনোবল দৃঢ়। মুহূর্তে যিনি যথার্থ ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমন ব্যক্তিত্বের কাছেই দেয়া হয় ম্যাচ পরিচালনার মূল দায়িত্ব। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ফুটবল বেশ জনপ্রিয়। রেফারিদের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

দেশটিতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে রেফারি হিসেবে কাছ করছেন মো. শিয়াকত আলী। স্থানীয়ভাবে শেখ আলী হিসেবে পরিচিত তিনি। আজকের গল্প তাকে নিয়েই।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেয়া শেখ আলী ছোট থেকেই ছিলেন ক্রীড়ামোদী। স্কুল ও জেলা পর্যায়ে সাতারে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। রয়েছে ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় সেরা হওয়ার অভিজ্ঞতা। স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলেছেন। পাশাপাশি রেফারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদল্যায়ের নাট্যকলা ও নাট্যতত্ব বিভাগ থেকে পাস করার পর চেষ্টায় ছিলেন সরকারী চাকরি নেয়ার। একপর্যায়ে রেলওয়ে পুলিশে চাকরীও হয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন কাতারে পাড়ি জমানোর।

‘২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারে আসি। একমাস পর দোহায় শিশুদের নিয়ে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার একটি ট্যালেন্ট হান্ট ইভেন্টে কাজ করি। তিন মাসের ওই ইভেন্টে রেফারি হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পাই।’ মোবাইল ফোনে আরটিভি নিউজকে বলছিলেন শেখ আলী।

কর্মশালায় ফিফা রেফারি কমিটির সভাতি পিয়ারলোজি কুলিনা ও সহ-সভাপতি আল রাইসি হানি তালেব বিল্লানের সঙ্গে শেখ আলী

বাংলাদেশের ফুটবল এগিয়ে না থাকায় কাতারে প্রাথমিকভাবে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাকে।

শেখ আলী বলেন, ‘আমার দেশ ফুটবলে বেশ পিছিয়ে থাকায় আমাকে নিতে চায়নি। অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত আমাকে প্রাথমিক তালিকায় রাখে। সেখানে বিনা বেতনে ছয় মাস ট্রেনিং করি। আমিসহ মোট ১৬৫ ছিলাম। লিখিত, শারীরিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেই সার্টিফিকেট হাতে নেই। তাদের বোঝাতে সক্ষম হই, সুযোগ পেলে বাংলাদেশিরাও ভালো করতে পারে।’

কাতার ‍ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের শেখ আলী

কাতার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে (কিউএফএ) মোট ১২০ জন তালিকা ভুক্ত রেফারি রয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো শেখ আলীই যোগ্যতা অর্জন করেন।

তিনি বলেন, ‘১৬ জন ফিফা রেফারি, এলিট প্যানেলে আমিসহ ৫০ জন। বাকিরা সাধারণ রেফারি। এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র আমিই রয়েছি। ২০১৪ সালে সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে একই বছর প্রমোশন পাই। ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার প্রমোশন দিলে সেকেন্ড ডিভিশনে রেফারি হিসেবে নিয়োগ পাই। বর্তমানে দেশটির শীর্ষ লিগে দায়িত্ব পালন করছি।’

খেলা ছাড়াও প্রতিমাসে শারীরিক, মানসিক, চিকিৎসা ও ফুটবল আইনের ওপর নানা ক্লাস, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বছরে তিনবার লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে।

‘কাতারি ফুটবলের পক্ষ থেকে ১২০ জন রেফারির জন্য বছরে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। আমাদের জন্য সাতজন ডাক্তার, শারীরিক প্রশিক্ষক, ফুটবল আইন ও ইংরেজি শিখতে আলাদা শিক্ষক রয়েছেন। রেফারিদের সবসময় সচল রাখতে ২৫ জনের দল সব সময় আমাদের পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতি সপ্তাহে একদিন ক্লাস, একদিন প্রশিক্ষণ ও একদিন বিশ্লেষণ হয়। মাসে সেরা রেফারিকে দেয়া হয় পুরস্কার।’ যোগ করেন এই বাংলাদেশি রেফারি।

দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় ২ হাজারের বেশি অফিশিয়াল ম্যাচে রেফারি হিসেবে নেমেছেন তিনি।

‘কাতারের বিভিন্ন পর্যায়ে বছরে ৪২টি লিগ চলে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয়টি হচ্ছে ফিফা রেফারি কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাতারের আল রাইসি হানি তালেব বিল্লান। বিশ্বমানের রেফারি তৈরিতে কাতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছে।’

কাতারের রেফারি প্যানেলকে এতটাই মর্যাদা দেয়া হয় যে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ পেশায় থাকার পরও রেফারি হিসেবে অনেকেই কাজ করতে চায়।

শেখ আলী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একাধিক সেনা কর্মকর্তা, পাইলট, পুলিশ সদস্য, চিকিৎসক, অধ্যাপক রেফারি হিসেবে কাজ করছেন। সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি আর্থিক সচ্ছলতাও রয়েছে এই পেশায়। শুধু রেফারিদের জন্যই আলাদা স্পন্সর নিয়ে থাকে কাতার ফুটবল কর্তৃপক্ষ।’

ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও সেনা ও নৌ-বাহিনীর রেফারির প্যানেলে নির্বাচিত সদস্য হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতা রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, আর্সেনাল, বোকা জুনিয়র্সের অ্যাকাডেমি দলের ম্যাচ পরিচালনা করার। জাপান, লেবানন, পাকিস্তানসহ কাতারের বয়সভিত্তিক অনেক ম্যাচে কাজ করেছি।’

বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ শুরুর আগে

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচ খেলতে বর্তমানে কাতারে অবস্থান করছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। আগামী শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) আব্দুল বিন খলিফা স্টেডিয়ামে কাতারের মুখোমুখি হবে লাল-সবুজরা।

এই সফরে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নেয় জামাল ভূঁইয়ার দল। শেষ ম্যাচটিতে সফরকারীদের প্রতিপক্ষ ছিল আর্মি টিম যেখানে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ আলী।

‘এটা আমার জন্য গৌরবের বিষয়। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলের ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছি। আমার চাওয়া দেশেও রেফারিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হোক। যাতে তাদের মান আরও বাড়ে। ভালো খেলোয়াড় তৈরির পাশাপাশি ভালো রেফারি তৈরি করতে বড় বড় পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’ বলেন তিনি।

আগামী বিশ্বকাপের বসছে কাতারে। এরইমধ্যে দেশটি থেকে তিনজন রেফারিকে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে ৩২টি দলের বিশাল এই মহাযজ্ঞে কাতারের কর্মরত রেফারিদের নানা পদে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন শেখ আলী। যদি নিয়োগ পান তাহলে তিনিই হবেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম কোনও ব্যক্তি যিনি বিশ্বকাপে ফিফার হয়ে কাজ করবেন।

ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বেতন ছাড়াই ছুটিতে গেলেন সাবিনারা, যা বলছে ফিফা
দিল্লিকে বিধ্বস্ত করে কলকাতার হ্যাটট্রিক জয়
তাসনিয়া ফারিণের নামে মেয়ের নাম রেখেছেন কলকাতার ট্যাক্সিচালক
ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা
X
Fresh