• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ম্যারাডোনাকে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশে তার অগণিত ভক্ত রয়েছে

মাহমুদুল হাসান কিরণ

  ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১২:০৬
mahamudul-hasan-kiron diego maradona
বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিক ফুটবল দলের সঙ্গে ডিয়েগো ম্যারাডোনা

আমি তখন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) পড়ছিলাম। সুযোগ হয়েছিল বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিক দলের সঙ্গে কাজ করার। প্রতিবন্ধী ফুটবলারদের সঙ্গে আমারও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার টিকিট মিলে যায়। স্পেশাল অলিম্পিক গেমসে নিয়ম ছিল প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ফুটবলারদের নিয়ে ইউনিফাইড ফুটবল দল গড়া।

যেখানে ৮ জন প্রতিবন্ধী ফুটবলারের সঙ্গে থাকে ৭ জন শারীরিকভাবে সুস্থ ফুটবলার। আর একাদশ সাজানো হয় ৬ জন প্রতিবন্ধী এবং ৫ জন স্বাভাবিক ফুটবলারের সমন্বয়ে। মূল আয়োজন ২০১৯ সালে হলেও ২০১৮ সালের মার্চে একটি মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টে হয়েছিল আবুধাবিতে। মোট ৩০ দেশ অংশগ্রহণ করে এই আসরে।

সব প্রস্তুতি শেষ। দলের সঙ্গে আমিরাতের আবুধাবিতে উড়ে যাই। একটি সেশনে অংশ নিতে দুবাইয়ের কাছাকাছি ফুজাইরা নামক একটি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমাদের। স্থানীয় ক্লাবের মাঠে অনুশীলনে অংশ নিবো আমরা। তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছিলাম আমরা। তবে সবচেয়ে বড় চমকটি ছিল ম্যারাডোনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ। সত্যিই সেদিন ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার।

ফুটবলের মহানায়ক ফুজাইরা ক্লাবের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন। আগের রাতে বলা হয়েছিল, আর্জেন্টিনার সাবেক অধিনায়ক আসবেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। ভাবছিলাম মজা করছেন আয়োজকরা। সকালে আবারও বলা হলো, আমরা ভাবলাম এখানে ম্যারাডোনা কী করতে আসবেন।

সময় মতো ভেন্যুতে পৌঁছে অপেক্ষা করছিলাম। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ছোটখাটো গড়নের মানুষটি হেঁটে চলছেন। আমাদের দিকেই আসছেন তিনি। তার আশে পাশে নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছেন। মানুষ জন ছবি তোলায় ব্যস্ত। নিরাপত্তা রক্ষীরা সামাল দিতে দিতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে।

সামনে না দেখা পর্যন্ত সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমাদের কাছে আসার পর হাত মিলিয়ে, চুমু খেয়ে ছবি তুললেন। যেন স্বপ্ন দেখছিলাম আমরা। মাঠেই আবেগ আপ্লূত হয়ে ছিলাম।

ম্যারাডোনা আমাদের দেশ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সঙ্গে থাকা স্প্যানিশ দোভাষী বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সব। তাকে জানানোর চেষ্টা করলাম, বাংলাদেশ তার ভক্তের সংখ্যা অগণিত। তাকে জানিয়েছিলাম, আমাদের দেশে আর্জেন্টিনা বলতে ম্যারাডোনাকেই বুঝি। তা শুনে নিজেও অবাক হলেন। এত বছর পরও আমাদের দেশে তার এত ভক্ত।

কিছুক্ষণ পর বল নিয়ে তার জাদু স্বচক্ষে দেখলাম। ফুটবল যেন তার কাছে মাথা নত করে থাকে। তিনি যা করাবেন তাই করতে বাধ্য। ড্রিবলিং করা শুরু করলেন। এরপর তার সঙ্গে একটা ম্যাচেও অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে পরের দিন ফুজাইরা ক্লাবের খেলা থাকায় সেটা আর হয়ে ওঠেনি।

সর্বকালের সবচেয়ে সেরা এই ফুটবলারের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টার সেই সাক্ষাৎ শেষ করে রাতে আর ঘুম হয়নি আমার। বিশ্বাস হচ্ছিল না, সত্যিই কী স্পর্শ করতে পেরেছিলাম তাকে! তাকে জড়ায়ে ধরে ছবি তুললাম। যে ছিল আমাদের মতো ফুটবলারের কাছে রূপকথার দিগ্বিজয়ী মহানায়ক। তার এত বিনয়ে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম সেদিন।

লেখক

পেশাদার ফুটবলার রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি

ওয়াই/এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ম্যারাডোনা ও পেলের মধ্যে কে সেরা, জানালেন ফিফা সভাপতি
মৃত্যুর তিন বছর পর কর ফাঁকির মামলায় মুক্তি পেলেন ম্যারাডোনা
‘ম্যারাডোনা অ্যাওয়ার্ড’ জিতলেন রোনালদো
X
Fresh