বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে পাঁচ দলের সাতকাহন
দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবছর হচ্ছে না করোনা মহামারির কারণে। তাই বিদেশি খেলোয়াড়দের বাদ দিয়ে দেশি ক্রিকেটারদের নিয়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিপিএলের আদলে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ।
তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমানরা যেখানে দীর্ঘ আট মাস পর মাঠে নামার অপেক্ষায় সেখানে অন্যতম তারকা ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নিজের সঙ্গে লড়াই করছেন চোট মুক্ত হবার।
প্রায় সাত মাসের লম্বা বিরতি কাটিয়ে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে ক্রিকেট ফিরেছিল দেশে। তার মাসখানেক পর টি-টোয়েন্টি কাপ। তবে সব ছাপিয়ে যেটা সবার অপেক্ষা সেটা সাকিব আল হাসান।
ক্রিকেট সাত মাস বন্ধ থাকলেও জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন এই বিশ্ব সেরা অল-রাউন্ডার। তাই তার ভক্তরা অপেক্ষা করছে ঝাঁকড়া চুলের নতুন সাকিবকে দেখার।
সাকিবকে দলে নিয়েছে জেমকন খুলনা। এই দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এই দলে ইমরুল কায়েস, আল আমিন হোসেন, এনামুল হক, শফিউল ইসলামদের সঙ্গে রয়েছেন একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার। বলা হচ্ছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী দল গড়েছে জেমকন খুলনা।
খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যেমনটা বলেছেন, ‘কাগজে-কলমে হয়তো আমাদের দলকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। তবে আমি সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি যে মাঠের পারফরম্যান্সটা সবসময়ই মুখ্য থাকবে। আপনি যত বড় নামই থাকেন, যত ভালো ক্রিকেটারই হন। দিনশেষে আপনাকে মাঠে এটা প্রমাণ করতে হবে। তো সেটা প্রমাণের লক্ষ্যেই আমরা নামবো ইনশা আল্লাহ।’
খুলনায় সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের মতো তারকা ক্রিকেটারে ঠাঁসা নয় বেক্সিমকো ঢাকা। এই দলটা বেশ তারুণ্য নির্ভর বলা চলে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে আছেন জাতীয় দলের রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, নাঈম হাসানরা তবে আধিক্যটা তরুণদের। যেমন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী, ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম, তরুণ পেসার মেহেদী হাসান রানা, নাসুম আহমেদরা হারিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে যেকোনো দলকে।
ঢাকার অধিনায়ক মুশফিক যেমনটা বলছেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে আসলে রেজাল্ট কখনো গ্যারান্টেড না। হ্যাঁ অবশ্যই টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগে। একই সঙ্গে দুইটা বা তিনটা প্লেয়ার ভালো খেললে ওই দিন যেকোনো সময় আপনি জিতে যেতে পারবেন। অনভিজ্ঞ বা তরুণ হতে পারে কিন্তু তারা অনেক ম্যাচিউরড। আমি শেষ ১৫-১৬ বছর খেলেছি একটা বিশ্বকাপও জিততে পারিনি। আমাদের দলে তেমন তিন-চারজন প্লেয়ার আছে ওই টিমের। বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে তো বড় চাপের কিছু হতে পারে না। আমি মনে করি ওই রকম মেন্টালিটি বা ম্যাচিউরড প্লেয়ার আছে। তারা যদি নিজেদের মেলে ধরতে পারে আর আমরা সিনিয়র যারা আছি তাদের সাপোর্ট দিতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ ভালো একটা টুর্নামেন্ট কাটবে।’
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম হতে পারে শিরোপা জয়ের অনন্য দাবিদার। এই দলটায় আছে বেশ কজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার। বর্তমান সময়ে দেশের সেরা পেসার মোস্তাফিজুর রহমান আছেন এই দলে, সঙ্গে মুমিনুল হক, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন। যেমন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে আছেন মাহমুদুল হাসান জয়, মেহেদী হাসান, রাকিবুল হাসান।
দলনেতা মোহাম্মদ মিঠুনের কোনো চাওয়া না থাকলেও অপেক্ষায় আছেন নিজের সেরাটা দেয়ার, অপেক্ষা সতীর্থদের সেরাটা দেখার।
‘নির্দিষ্ট কারও কাছে আমার কোন চাওয়া নেই। ওরা সবাই ওয়ার্ল্ড ক্লাস ক্রিকেটার। ওরা যে টিমেই খেলুক, সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে চাইবে। এখন সবখানেই অনেক কম্পিটিশন। সুতরাং কেউই পিছিয়ে থাকতে চাইবে না। নির্দিষ্ট এক বা দুইজনের ওপর আমার চাওয়া থাকবে না। যার যতটুকু সম্ভব কন্ট্রিবিউট করুক, এটাই আমি চাই। যার যে দিন সুযোগ থাকবে, সে যেন ম্যাচটা জেতাতে পারে।’
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল স্বীকার করেন, ড্রাফটে কিছু ভুল হয়েছে খেলোয়াড় নিতে। তবে সব চাপিয়ে মাঠে নামলে সেসব আর ছাপ ফেলবে না বলেও জানান তিনি।
এই দলে তামিম ইকবালের সঙ্গে বড় নাম আছে কেবল তাসকিন আহমেদ আর মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে সবশেষ প্রেসিডেন্টস কাপে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছিলেন ইরফান শুক্কুর। করেছিলেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এছাড়াও আছেন পেসার সুমন খান। যার হাত ধরে প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালে জিতেছিল মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
তামিম বলেন, ‘কোন সন্দেহ নাই আমরা ড্রাফটে কিছু ভুল করেছি। আমরা অবশ্যই ড্রাফটে কিছু ভুল করেছি বলেই এই কথা উঠছে। হ্যাঁ, ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, যেকোনো কিছুই হতে পারে। এখন যারা আছে তাদের অনেককে হয়ত আপনারা-আমরা কাউন্ট করছি না। কিন্তু তারা সবাই দুর্দান্ত কিছু করে ফেলতে পারে।’
বাকি দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীতে নেই তারকার ছড়াছড়ি। এই দলটা প্লেয়ার্স ড্রাফটের প্রথম ডাকেই নিয়েছিল অল-রাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই গোড়ালির ইনজুরিতে ছিটকে পড়েছেন এক সপ্তাহের জন্য।
এছাড়া দলে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল, আরাফাত সানীদের মতো অভিজ্ঞরা।
দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য এসব নিয়ে চিন্তিত নন। দল হিসেবে খেললে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে মনে করছেন আসরের সবচেয়ে তরুণ অধিনায়ক।
‘আমার মনে হয় না খুব বেশি সমস্যা হবে। যেটা বললাম তরুণ ক্রিকেটারও অনেক আছে। সবদিকে চিন্তা করলে কম্বিনেশন ভালো।’
এমআর/
মন্তব্য করুন