আলী খান হতে চান যুক্তরাষ্ট্রের রশিদ
আলী খান, যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের সুপার স্টার। অথচ যার নাকি ভাবনাতেই ছিল না পেশাদার ক্রিকেটার হওয়া। রাস্তায়, বাড়ির ছাঁদে ক্রিকেট খেলতেন বন্ধু-সমবয়সীদের সঙ্গে। সেই আলী খান হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় নাম। সেসবই জানিয়েছেন বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে।
‘ছোট থেকে আমি টেপ-টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতাম। কখনও ভাবিনি একজন পেশাদার ক্রিকেটার হব।’
‘আমি পাড়ার বন্ধু, ভাইদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতাম রাস্তায়, ছাঁদে। বলে কাঁচ ভাঙত, প্রতিবেশীদের বকা শুনতাম, দেরি করে বাসায় ফিরতাম। আমার বাবা-মা আমাকে শাসাত। উনারা অনেক কঠোর নিয়ম-কানুনে। ’
পাকিস্তানে জন্ম নেয়া আলী খান ১৯ বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ডায়টনের ওহিও ক্লাবে ভর্তি হন এই পেসার।
‘২০১৩ সালে ওহিও লিগে খেলার সুযোগ পাই। সেখানে ম্যাক কুরেশি নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। জানতে পারি তিনি ডিসেম্বরে ফ্লোরিডাতে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন টি-টোয়েন্টি লিগ খেলেন।’
তার বছর-খানিক পর ফেসবুকে ম্যাক কুরেশিকে মেসেজ দেন আলী। যিনি দায়িত্বে ছিলে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন টি-টোয়েন্টি লিগের।
‘আমি তাকে বলি, আমি একজন পেসার। আমি খেলতে চাই। উত্তরে উনি আমাকে বলেন, চলে এসো। এরপর তো যুক্তরাষ্ট্র ওপেন টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সুযোগ পাই।’
পারফরমেন্স দেখিয়ে ২০১৫ সালে আইসিসি আমেরিকা ডেভেলপমেন্ট স্কোয়াড়ে সুযোগ হয় ঘরোয়া ওয়ানডে লিগ খেলার। সুযোগ আসে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলার।
প্রথমবারের মতো কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে প্রথম শিকার করেন লঙ্কান গ্রেট ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারাকে।
এরপর তো আলী খানের কাছে সুযোগ আসে বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার। খেলেছেন বিপিএলে, টি-টেন লিগে, পিএসএলে, সবশেষ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে।
এবারের আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার আগে সিপিএল মাতিয়েছেন ত্রিনিবাগো নাইট রাইডার্সের হয়ে। আট ম্যাচে ৭.৪৩ ইকনোমিতে নেন ৮ উইকেট।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসার ম্যাট হ্যানরির চোটে পড়ে বিদায়ের পর টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের ছাড়পত্র না পাওয়ায় কপাল খুলে আলী খানের।
ক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগ খেলে সোজা চলে আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কলকাতা শিবিরে।
‘আমি আমার জীবনের পরিবর্তন বুঝতে পেরেছি যখন ভাবলাম পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে, এরপর সিপিএল শেষে সুনিল নারিন আর কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে প্রাইভেট জেটে আসি।’
আইপিএলে যোগ দিয়েছেন আলী খান। শুরুতে চোটের কারণে ছিটকে পড়ার কথা শোনা গেলেও জানা গেছে দলের সঙ্গেই আছেন আলী। বলা যায়, সুযোগও পেতে পারেন একাদশে। তাই আইপিএলে খেলার স্বপ্নটা এখনও রয়েছে এই পেসারের।
আলী খান এখন তার স্বপ্ন বুনতে চান আইপিএল দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে চেনাতে চান বিশ্ব দরবারে। যেমনটা আফগানিস্তান সুপার স্টার রশিদ খান নিজেকে দিয়ে দেশকে চিনিয়েছেন বিশ্ব দরবারে। রশিদের দিকেও তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ।
‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে একজন এসেছে আইপিএল। সবার চোখ এখন আমার দিকে। তবে আমি চাপ নিতে চাই না। আমি আমার প্রতিভা দেখাতে চাই। যা দেখে অনুপ্রাণিত হবে দেশের অনেক তরুণ।’
‘এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিয়মিত খেলা হয়। এখানে সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সেরা স্টেডিয়াম। কেনো না এখানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট-ইন্ডিজের বড় কমিউনিটি বসবাস করে।’
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট এরইমধ্যে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চলতি বছরে ডোমেস্টিক মাইনর লিগ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। এরপর সেটিকে মেজর লিগে রূপান্তর করার কথাও ভাবছে।
‘আমি আশা করি এটা হবে কিন্তু বিশ্বকাপ বাচাইয়ের বাধা পেরুতে হবে। আমি জান এটা অনেক কঠিন তবে আমাদের পারতেই হবে। যেমনটা আফগানিস্তান পেরেছে। আমরাও তো একই পথে আছি।’
এমআর/ওয়াই
মন্তব্য করুন