বার্সেলোনায় মেসির শুরু থেকে সম্ভাব্য শেষ
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে খেলছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন হলেও এই প্রজন্মের ফুটবল প্রেমীরা মেসিকে চেনেন বার্সেলোনাকে দিয়েই। বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকার বা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ছাড়া কয়টা ম্যাচই আর খেলেন দেশের হয়ে।
বার্সেলোনার হয়ে জীবনের সেরা সময় কাটানো মেসি যখন হুট করেই ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে হতাশ হয়েছেন সমর্থকরা। ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের বার্সা ছাড়ার পেছনে আছে সদ্য শেষ হওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোল ব্যবধানে হার, গুঞ্জন আছে দলে নিয়োগ দেয়া নতুন কোচ রোনাল্দ কোম্যানের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া।
সবমিলিয়ে মেসি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর থাকতে চাচ্ছেন না বার্সেলোনায়। অথচ কাতালান ক্লাবটির হয়ে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার জুড়েই রয়েছে অজস্র স্মৃতি।
১৯৯৫ সালে জন্ম স্থান আর্জেন্টিনায় রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন মেসি। বেশ কয়েকবছর ক্লাবটিতে খেলার পর মাত্র ১১ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনের সমস্যা দেখা দেয় তার। এরপরও স্থানীয় একটি ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি আগ্রহ দেখালেও তার চিকিৎসার খরচ বহন করায় অমত জানায়। কেনো না, প্রতি মাসে প্রায় ৯০০ মার্কিন ডলার খরচ হবে তার চিকিৎসায়। তাতেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মেসির ভবিষ্যৎ।
আর এই সময়টাতেই মেসির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। খুব দ্রুত সময়েই মেসির সঙ্গে চুক্তি হয়ে যায় বার্সার যুব অ্যাকাডেমি লা মাসিয়াতে খেলার জন্য।
২০০০ সালে বার্সেলোনার অ্যাকাডেমিতে শুরু করেন নতুন ক্যারিয়ার। ২০০৩-০৪ মৌসুমে পাঁচটি আলাদা দলে খেলেন মেসি, যা একটি রেকর্ড।
২০০৪ সালের ১৪ অক্টোবর মাত্র ১৭ বছর এবং ১১৪ দিন বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয় মেসির। লা লিগার ম্যাচে ইস্পানিওলের বিপক্ষে বার্সার তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সেই থেকে টানা ১৬ বছর দলটির হয়ে খেলেছেন। নিজেকে দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরার কাতারে পৌঁছে গেছেন তিনি।
দেখে নেয়া যাক বার্সেলোনায় মেসির শুরু থেকে সম্ভাব্য শেষ-
১৪ ডিসেম্বর, ২০০০: বার্সেলোনার যুব ক্লাবে চুক্তির প্রস্তাব পান মেসি।
২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি: লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে যোগ দিতে মেসির পরিবার বার্সেলোনায় চলে আসেন।
নভেম্বর ১৬, ২০০৩: মাত্র ১৬ বছর বয়সে পোর্তোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বার্সার হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।ষ৪ মে: প্রথমবারের মতো লা লিগা শিরোপা জিতেন।
২৪ জুন, ২০০৫: বার্সেলোনা সিনিয়র দলের খেলোয়াড় হিসাবে প্রথম চুক্তি সই করেন।
১৭ মে, ২০০৬: আর্সেনালকে পরাজিত করে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতে বার্সা, যদিও চোটের কারণে খেলতে পারেননি।
১৮ এপ্রিল, ২০০৭: গেটাফের বিপক্ষে সর্বকালের সেরা গোলটি করেছিলেন।
২৭ মে, ২০০৯: মেসির গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ফাইনালে ২-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে বার্সা।
২৮ মে, ২০১১: মেসি তৃতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরা হয়েছিলেন, ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে গোল করেছিলেন তিনি।
৭ মার্চ, ২০১২: চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে পাঁচ গোল করেন মেসি।
২০ মার্চ, ২০১২: নিজের ২৩১ তম গোলটি দিয়ে বার্সেলোনার সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েন। তিনি এখন পর্যন্ত ক্লাবের হয়ে ৬৩৪ টি গোল পেয়েছেন।
৬ জুন, ২০১৫: ইউসিএল ফাইনালে জুভেন্টাসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বার্সা। আর এটাই হতে পারে বার্সার হয়ে তার শেষ ইউসিএল শিরোপা।
১০ আগস্ট, ২০১৮: আন্দ্রে ইনিয়েস্তার বিদায়ের পর বার্সেলোনার অধিনায়ক হন।
মে ২০১৯: শেষ বারের মতো লা লিগা শিরোপা জয়।
২৫ মে, ২০১৯: কোপা দেলরে’র ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ায় কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় বার্সেলোনা।
২ ডিসেম্বর, ২০১৯: রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি'অর জিতেন।
৩০ শে জুন, ২০২০: বার্সা ও আর্জেন্টিনার হয়ে মোট ৭০০ গোল গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন এদিন।
৮ আগস্ট, ২০২০: চ্যাম্পিয়নস লিগ নেপোলির বিপক্ষে গোল করেন। যা হতে পারে বার্সেলোনার হয়ে শেষ গোল।
১৪ আগস্ট, ২০২০: চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে হেরে যায় বার্সা। হতে পারে প্রিয় দলের হয়ে এটিই মেসির শেষ ম্যাচ।
২৫ আগস্ট, ২০২০: বার্সেলোনাকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত আসে মেসির পক্ষ থেকে।
এমআর/ওয়াই
মন্তব্য করুন