• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বান্দরবানের রাজবিলা ও কুহালং এখন আতঙ্কের জনপদ!

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

  ১৪ জুলাই ২০২০, ২১:২৬
Bandarban Rajbila and Kuhalong now a place of terror!
বান্দরবান

বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ও কুহালং ইউনিয়নের মানুষ এখন আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা, জামছড়ি মুখ, জামছড়ি ভেতর পাড়া, খামাদংপাড়া, আনতাপাড়া এবং কুহালং ইউনিয়নের তাইংখালীপাড়া, উজি হেডম্যান পাড়া, চড়ুইপাড়া, হেব্রণ পাড়া, রাবার বাগান পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় এখন বিরাজ করছে ভীতিময় পরিবেশ।

ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড, হামলা, অপহরণ, গুম, খুনসহ একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা এখানকার মূল আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় সময়ে স্থানীয় জেএসএস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও আওয়ামী সমর্থক নেতাকর্মীদের ভয় আর আতঙ্ক তাড়া করছে।

জানা গেছে, পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল (জেএসএস) সন্তু লারমা গ্রুপ এবং সংস্কারপন্থী এমএন লারমা গ্রুপ, ইউপিডিএফ এবং সম্প্রতি নতুন ভাবে আবির্ভাব হওয়া মগ লিবারেশন পার্টির সদস্যদের মধ্যে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাহাড়ের সংগঠনগুলো এখন সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের লড়াইয়ে একের পর এক গুম, খুন, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা।

এসব হত্যাকাণ্ডে বাদ যাচ্ছে না স্থানীয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এদিকে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে দীর্ঘদিন জনসংহতি সমিতির একক আধিপত্য ছিল। এতে চাঁদাবাজি অপহরণের ঘটনা চলমান থাকলেও হত্যার খবর পাওয়া যেত না।

কিন্তু সম্প্রতি সংস্কারপন্থী এমএন লারমা গ্রুপ, মগ বাহিনী নামে নতুন একটি সংগঠনের আবির্ভাব হওয়ায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে মগ লিবারেশন পার্টি ও জেএসএস উভয় গ্রুপকে দায়ী করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও। তবে ঘুরে ফিরে একই এলাকায় গুম, খুন ও অপহরণের ঘটনায় প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।

এদিকে বান্দরবান সদর উপজেলায় গেল বছরে ঘটেছে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে জেএসএস ও এমএন লারমা গ্রুপের সদস্যদের পাশাপাশি নিহত হয়েছেন আওয়ামী লীগেরও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। ২৩ মে রাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বান্দরবান পৌর আ.লীগের সহ-সভাপতি চ থোয়াই মং মার্মাকে তার খামার বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এর চারদিন পর রাজবিলা ইউনিয়নের জর্দানপাড়ার গহীন জঙ্গল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৯ মে ভোররাতে রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালীতে ক্যচিং থোয়াই মারমা নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুষ্কৃতিকারীরা।

তিনি স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ৯ মে জয়মনি তঞ্চঙ্গ্যা গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী দুষ্কৃতিকারীরা। ৭ মে রাজবিলা ইউনিয়নের তাইংখালী এলাকায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিনয় তঞ্চঙ্গ্যা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত বিনয় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওইদিনে পুরাধন তঞ্চঙ্গ্যা নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। তার সন্ধান এখনো মেলেনি।

১৪ এপ্রিল অংক্য চিং মার্মা নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। তিনি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জেএসএস ছেড়ে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়েছিলেন। ১৭ এপ্রিল গুলিতে জেএসএসের তিনজন, আওয়ামী লীগের পাঁচজন, মগ পার্টি থেকে জেএসএস-লারমায় যোগদানকারী একজন এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হন।

চলতি বছরের শুরুতে কয়েকটি অপহরণের ঘটনা ঘটে কুহালং ও রাজবিলা এলাকায়। এতে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও ২ জুলাই কুহালং ইউনিয়নের হেব্রন পাড়ার বাসিন্দা আওয়ামী লীগের কর্মী রুয়াল লুল থাং বমকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। এই কর্মী জেএসএস সন্তু লারমা গ্রুপ থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

সর্বশেষ সম্প্রতি (৭ জুলাই) মঙ্গলবার নিহত হলেন জেএসএস সংস্কারপন্থী এমএন লারমা গ্রুপের তিন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ছয়জন।

অপরদিকে পাহাড়ে সম্প্রতি বিনষ্টকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও রাজবিলা ও কুহালং এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়ে এলাকার সচেতন মহল বলেন, সম্প্রতি পাহাড়ে গুম, খুন ও অপহরণ বেড়েছে। তাই এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিরসনে রাজবিলা ও কুহালং এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা খুবই জরুরি।

অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করেন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পাহাড়ে খুনো-খুনি হচ্ছে। তারা পাল্টা-পাল্টি প্রতিশোধের অংশ হিসেবে গুম, খুন অপহরণের মত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়াও নতুন আবির্ভাব হওয়া সংগঠন মগ লিবারেশন পাটির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে করেন পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তার এবং পাহাড়ি সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে অনেক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করায় তারাও খুন, গুম ও অপহরণের শিকার হচ্ছে বলে মনে করেন জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী বলেন, পার্বত্য জেলায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অবিলম্বে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত জনগণ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে সেই লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে পাহাড়ে চিরুনি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান তিনি।

বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো বিভিন্ন সময় ভেঙে উপদল সৃষ্টি হয়। অনেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের স্বার্থে অথবা একই গ্রুপের ভেতরে অন্ত-কোন্দলের কারণে বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়।

আমরা সার্বক্ষণিক তাদের ব্যাপারে নজর রাখার চেষ্টা করি। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আমরা সবসময় তৎপর থাকি। তারপরও কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়