• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনা: এক মানবিক ওসি কামরুল ফারুক

মো. শাহাদাৎ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২৬ জুন ২০২০, ২০:৩৮
Corona humanitarian OC Kamrul Farooq
ছবিঃ সংগ্রহীত

করোনার থাবায় থমকে আছে পৃথিবী। পাল্টে গেছে চিরচেনা পরিবেশ। মৃত্যু ভয়ে আপন মানুষগুলোও যেন পর হয়ে গেছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম মানবিক কিছু মানুষও রয়েছেন।

করোনার প্রকোপে যখন নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা ও সিটি এলাকার মানুষ বিপর্যস্ত। ঠিক সেই সময় মানবিক কাউন্সিলর খোরশেদ, মেম্বার কামরুল, ডাক্তার, স্বেচ্ছাসেবী তেমনি একজন মানবিক ওসি হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক।

মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করে ইতিমধ্যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তিনি। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সম্মুখে থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এ পুলিশ অফিসার।

করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মার্চ থেকে অদ্যাবধি তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটিবারের জন্যও দেখা করতে যাননি। এমনকি ঈদের দিনেও না। ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে রাইয়ান ফারুক লামীমের আবদার ছিলো একবারের জন্য হলেও বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের। এমনকি ছেলের বায়না ছিলো প্রয়োজনে বাবা-ছেলে এক খাটের দুই প্রান্তে বসে অল্প কিছু সময় কথা বলবেন, সে সময়টুকুও তিনি বের করতে পারেননি।

শুধু তাই না ঘনবসতিপূর্ণ ও শিল্পনগরী সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মাত্র ৭৮ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ওসি কামরুল ফারুক। পরে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মানুষের নিরাপত্তা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, বাজার মনিটরিং সহ নানান কাজে কাজ করতে গিয়ে বর্তমানে করোনা প্রাদুর্ভাব সময়ে ১৮ জন সদস্য করোনা রোগে আক্রান্ত হন।

মানবিক পুলিশ অফিসার কামরুল ফারুক অকান্ত পরিশ্রম করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে মানবিক আচরণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৭ জন সদস্য করোনা বিজয়ী হয়ে আবারও কাজে ফিরে এসেছেন। তাদের মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখার জন্য তাদের ২৩ মে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করতে ভুলে যাননি।

এছাড়া সকল পুলিশ সদস্য যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে এজন্য সকল সদস্যদের মাঝে একাধিকবার সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, গ্লাবস ও পিপিই বিতরণ করেছেন। থানায় পুলিশ ছাড়াও অনেক মানুষের আনাগোনা থাকায় থানা ভবনের সামনে স্থাপন করেছেন হাত ধোয়ার বেসিন।

এইতো গেলো নিজের সহকর্মীদের গল্প অপরদিকে নিজের থানা এলাকায় অসহায় মানুষদের জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন মানবিক এ অফিসার। সরকারের তরফ থেকে যেসব খাদ্য সামগ্রী এসেছে তার সঠিক বণ্টন করেছেন। বিতরণ করেছেন প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে।

খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মাঝেও। এছাড়াও প্রতিবন্ধী, পরিবহন শ্রমিক, স্কুল শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা পেয়েছেন ওসি কামরুলের খাদ্য সহযোগিতা। যারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানে ত্রাণ নিতে আসতে পারেন না, তাদেরকে গোপনে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন।

সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার সামগ্রী দেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে রাতের আঁধারেও এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তার সদস্যরা। একই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মমাফিক কার্যক্রমও চালিয়েছিলেন। পাশাপাশি লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে ঘরে রাখতে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন। এসব কারণে এ পুলিশ অফিসার স্থানীয়দের কাছে মানবিক পুলিশ হিসেবে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।

লকডাউনের কারণে খাদ্য সংকটে ভুগে নিম্ন আয়ের মানুষ। সংকটাপন্ন এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। ১২ এপ্রিল ১২০ জন দরিদ্রের মাঝে খাদ্য বিতরণের মাধ্যমে শুরু করেন তার ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম। ১৬ এপ্রিল শতাধিক রিকশা চালকের মধ্যে, ১৯ এপ্রিল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মাঝে ও ২১ এপ্রিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতরণ করেন ত্রাণ। ৩০ ও ৩১ এপ্রিল আড়াই শতাধিক পরিবহন শ্রমিক ও অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন ত্রাণ। ২৪ মে নারী ও পুরুষ প্রতিবন্ধদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে মন জয় করেন তাদের।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যে বা গোপনে তিনি ১ হাজার ৭২টি অসহায় পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেন। মোবাইলের ম্যাসেজ ও ফোন পেয়ে প্রায় শতাধিক অসহায় ব্যক্তির কাছেও ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ অফিসারের সন্তানদের।

নাসিক ৩নং ওয়ার্ড বাসিন্দার উজ্জ্বল নামে একজন ভ্যান ড্রাইভার জানায়, লকডাউন চলাকালে রমযান মাসে একদিন বাসায় কোনো খাবার ছিল না। বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবার নিয়ে সারাদিন অনাহারে ছিলাম, একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম থানায় গেলে বড় স্যারের (ওসি কামরুল ফারুক) সঙ্গে দেখা করলে জুটবে খাবার।
রাতেই থানায় চলে গেলাম। ঘুরতে ঘুরতে খুঁজে বের করলাম বড় স্যারকে। স্যারকে বলার পর স্যার নিজের হাতে চাউল, ডাল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় এক সপ্তাহের খাবার দিয়ে দিলেন। এভাবে অসংখ্য অসহায় পরিবারের পাশে এ ক্রান্তিকালে আছেন মানবিক ওসি কামরুল ফারুক।

আরটিভি নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতে তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে করোনা একটি মহামারী অসুখ। ছোঁয়াচে এ অসুখে আমাদের দেশের জনগণও আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। সেই মহামারী থেকে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে দুরে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিআইজি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সাধ্যানুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh