• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

প্রাণহানিতেও বন্ধ হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

ইয়াছিন রানা সোহেল, রাঙামাটি

  ২১ জুন ২০২০, ১১:০৬
Living at risk at the foot of the mountain did not stop even after the casualties
ছবি সংগৃহীত

আবার হাজির বর্ষা মৌসুম। তিন বছর আগে ১৩ জুন প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে রাঙামাটিতে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। এসময় দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরের বছর একই সময়ে রাঙামাটির নানিয়ারচরে প্রবল বর্ষণে মৃত্যু হয় আরও ১১ জনের। বার বার এতো প্রাণ হতাহতের পরও থেমে থাকেনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস।

প্রতিবছরের মতো এবারও পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে রাঙামাটিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। তবে ঝুঁকিতে বসবাসরতরা বলছেন, তারা নিরুপায় হয়েই ‘মৃত্যুকূপে’ বসতি গড়ে তুলেছেন।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, রাঙামাটি জেলায় ৩৬টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে প্রায় দশ হাজার পরিবার। সম্প্রতি রাঙামাটি জেলা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রূপনগর, শিমুলতলী, ভেদভেদী নতুন পাড়া, মনতলা, যুব উন্নয়ন এলাকায় সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া জেলা শহরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র।

তিন বছর আগে রাঙামাটিতে স্মরণকালের পাহাড়ধসের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির পরও বর্ষা শেষে পুনরায় একই স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, শিমুলতলী, মোনঘর, সনাতন পাড়া এলাকায় গত বছর সবচেয়ে বেশি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এরপরও থেমে থাকেনি একইস্থানে বসতি স্থাপন।

মুসলিম পাড়া এলাকার ইসমাইল ও রমিজা বেগম পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত একই স্থানে আবারো নতুন বসতি নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে থাকছেন। তারা জানান, অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় মৃত্যুর শঙ্কা আছে জেনেও নিজেদের ভিটামাটিতেই থাকবেন তারা। যদি সরকার আমাদের নিরাপদ জায়গার ব্যবস্থা করে দেয় সেই ক্ষেত্রে আমরা চলে যাবো। সরকার আমাদের জায়গা ছাড়তে বলে কিন্তু আমরা কোথায় যাব, কোথায় থাকবো, সেই বিষয়ে কিছুই বলেনি। তাই আমরা কোথাও যাব না। বাঁচলে এখানেই বাঁচবো, আর মরলে এখানেই মরবো।

ভেদভেদী যুব উন্নয়ন এলাকার রিপন চাকমা জানিয়েছেন, ঝুঁকি জেনেও আমাদের নিজের ঘরেই থাকতে হচ্ছে। ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতিবছর বর্ষার দিনে বৃষ্টি পড়লেই আতঙ্কে থাকি। কিন্তু আমাদের এই বসতভিটা ছাড়া বিকল্প বাসস্থান না থাকায় তাই বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হচ্ছে। তাই এখন বৃষ্টির দিনে ভয় বুক বেঁধে থাকতে হচ্ছে।

শিমুলতলী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকার মানুষ এখন বর্ষা মৌসুম এলে ভয়ে-আতংকে থাকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই আমাদের সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে আমরা এই মৃত্যুকূপে পড়ে আছি। অন্যত্র সরে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে কেউই ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতেন না।

রাঙামাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, ২০১৭ সালের রাঙামাটিতে ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। তখন সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও জানমালের ক্ষতি হয়েছে আমার এলাকাতেই। তবে বিগত ২০১৮-১৯ সালে এলাকার মানুষ সচেতন থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এ বছরই আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা প্রশাসনও পাহাড়ধস ঠেকাতে করণীয় নির্ধারিত কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে আমাদের নতুন করে আবার কোনও প্রাণহানি দেখতে না হয়। এ বছর জেলা প্রশাসন ও পৌরসভাকে করোনার কারণে দুইদিক দেখতে হচ্ছে। তারপরও আমাদের কাউন্সিলরগণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করছেন। সর্বোপরি পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে আমরা সকলেই একযোগে কাজ করে যাচ্ছি।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে যে সকল কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তারই অংশ হিসেবে জেলা শহরের পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এছাড়া জনসাধারণকে সচেতন করতে ও আশ্রয়কেন্দ্রের নামসহ প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। যাতে করে তারা বিপদে পড়লে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন। করোনার এই মহামারীতে সময়ে রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনকে পাহাড়ধস ও করোনার ঝুঁকি- দুই দিকই সামলাতে হচ্ছে। তারপরও আর বিগত বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই আগামী প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছি। আমরা আশাবাদী, জনসাধারণ সচেতন থাকলে এবছর রাঙামাটিতে কাউকে পাহাড়ধসে প্রাণ দিতে হবে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া জেলা শহরের সঙ্গে চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক ও খাগড়াছড়ি সড়কের একটি বিশাল অংশ ধসে টানা ১৭ দিন সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে পার্বত্য রাঙামাটি। এর পরের বছর ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচরে পাহাড়ধসের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালেও জেলার কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে তিনজনের মৃত্যু হয়। স্মরণকালের বিভীষিকাময় অতীত থেকেই প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুম এলেই রাঙামাটির মানুষের আতঙ্ক বিরাজ করে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh