• ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনায় অর্ধ বছরে বদলেছে জীবন, শূন্য হয়েছে পকেট

আহমাদুল্লাহ শিকদার

  ১৫ জুন ২০২০, ১৬:৫৮
Life has changed in half a year in Corona, pockets have become empty
ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েই যাচ্ছে করোনাভাইরাস। এই মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে চার লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তও হয়েছে ৭৮ লাখের বেশি মানুষ। অথচ শুরুতে এই ভাইরাসকে খুব একটা পাত্তাই দেয়নি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস শুরুর দিকে চীনা ভাইরাস, উহান ভাইরাস, নভেল করোনাভাইরাস নামে পরিচিতি পায়। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটার একটি আনুষ্ঠানিক নাম দেয়, আর তা হচ্ছে- কোভিড-19।

বর্তমানে বিশ্বে তাণ্ডব চালিয়ে বেড়ানো এই ভাইরাসটি নতুন হলেও একই ধরনের দুটি ভাইরাস কয়েক বছর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হানা দিয়েছিল। ওই দুটি ভাইরাসের নাম হচ্ছে- সার্স ও মার্স। আপাতত ওইসব ভাইরাস আর সক্রিয় নেই। কিন্তু চীনের একটি ওয়েট মার্কেট থেকে হঠাৎ করে এই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়।

যদিও এই ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে ব্যাপক জল ঘোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিযোগ এটি উহানের একটি ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে। যদিও চীন এই দাবি অস্বীকার করেছে। তবে পশ্চিমা আরও কিছু দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই ধরনের অভিযোগ করেছে।

করোনার উৎপত্তি নিয়ে যেমন ধোঁয়াশা রয়েছে তেমনি এটা সংক্রমিত করার ক্ষমতা বা বিভিন্ন লক্ষণ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা শুরু থেকেই বলছেন যে, এই ভাইরাসটির বিবর্তন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এর লক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যাপকতা রয়েছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দুইদিন পর্যন্ত কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। আবার ইতালি ও স্পেনের অনেক রোগীর পায়ে বসন্তের মতো এক ধরনের চিহ্ন দেখা গেছে। সেখানকার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এটাও করোনার লক্ষণ হতে পারে।

গত বছরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহানে আঘাত হানা করোনাভাইরাস শুরুতে শুধু চীনেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। এসব দেশে শুরুতে তেমন প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও পরে ব্যাপক হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

চীনের বাইরে করোনার প্রথম ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে ইতালি। দেশটির লোম্বার্দি অঞ্চলটিতে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে করোনা। করোনা মোকাবিলায় উপায়ন্তর না পেয়ে শেষ পর্যন্ত লকডাউন দিতে বাধ্য হয় ইতালি। কয়েক মাসের জন্য দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-কলেজসহ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়।

ইতালি ছাড়াও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় করোনা। এসব দেশও করোনার সংক্রমণ রুখতে কঠোর লকডাউন আরোপ করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ স্থবির হয়ে পড়ে এসব দেশের অর্থনীতি।

ইউরোপে তাণ্ডব চালিয়ে করোনার নতুন ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির একটি নার্সিংহোমে প্রথম প্রাণহানি ঘটায় করোনা। এই শুরু। এর কয়েক মাসের মধ্যে দেশটিতে এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্য সরকার লকডাউন দিতে বাধ্য হয়। এতে দেশটিতে বেকার হয়েছে অন্তত তিন কোটির বেশি মানুষ।

এখন করোনা তাণ্ডব চালাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে। সেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ইতোমধ্যেই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই সংখ্যাটা আরও বেশি। ব্রাজিলেও করোনার শুধু স্বাস্থ্যখাত নয় অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনার সবচেয়ে বাজে অবস্থা ভারতে। আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে এখন চতুর্থ অবস্থানে ভারত। দেশটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। তবে দেশটির মহারাষ্ট্র রাজ্যের অবস্থা খুবই শোচনীয়, বিশেষ করে বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে বেশ ঝেঁকেই বসেছে করোনা।

বাংলাদেশেও ক্রমেই খারাপ পরিস্থিতির দিকেই এগোচ্ছে করোনাভাইরাস। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর তিন মাস পেরিয়ে গেছে। বাংলাদেশে এখন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। আর মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ২শ জনের বেশি মানুষের।

তবে করোনার এই তাণ্ডবের মধ্যেও রয়েছে আশার আলো। নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে করোনামুক্ত হয়েছে। এছাড়া নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনামসহ আরও কয়েকটি দেশ করোনা মোকাবিলায় খুব সাফল্য দেখিয়েছে।

এদিকে করোনার কারণে ভেঙে পড়েছে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এর কারণে বিনা চিকিৎসা মারা যাচ্ছে অন্যান্য রোগের রোগীরাও। এমনকি করোনার কারণে বেড়ে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের আশঙ্কা। গত এপ্রিলে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং এর অংশীদাররা জানায়, করোনার কারণে চলমান লকডাউন ছয় মাস থাকলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঘটনা ঘটতে পারে।

এছাড়া ভেঙে পড়েছে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। যেসব দেশে লকডাউন আছে সেখানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আবার সেসব দেশে লকডাউন উঠেছে গেছে, সেখানেও পুরোপুরি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যায়নি। যেমন দক্ষিণ কোরিয়া ও ফ্রান্সে সীমিতাকারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হলেও সংক্রমণের ভয়ে আবার অনেক স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু করোনায় স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাতসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাতের ওপর প্রভাব ফেললেও আসল প্রভাবটা পড়েছে মূলত অর্থনৈতিক খাতের ওপর। কেননা করোনার কারণে যত মানুষ মারা যাবে তার চেয়ে মানুষে দেউলিয়া হবে। এটা অর্থনৈতিকভাবে লাখ লাখ পঙ্গু করে দেবে; বিশেষ করে এই মহামারির কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ঝড় উঠেছে, রাশিয়া এবং সৌদি আরবের মধ্যে তেলযুদ্ধ এবং সিরিয়ায় একটি সত্যিকারের যুদ্ধ সম্ভাব্য অভিবাসন সংকটকে ঘনীভূত করেছে।

এই মহামারির কারণে ইউরোপেও বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হতে পারে। কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসি জানিয়েছে, সামনের মাসগুলোতে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে ৫ কোটি ৯০ লাখ মানুষ। এছাড়া বেতন ও কর্মঘণ্টাও কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

করোনার কারণে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তিন কোটির বেশি মানুষ বেকার হয়েছে। এমনকি দেশটির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন শিশু অনাহারে আছে বলেও এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

এ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh