• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অকার্যকর হয়ে পড়েছে ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’

মাইদুর রহমান রুবেল

  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:৪৮

আত্মপ্রকাশের সাত মাসের মাথায় প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’। কারণ যেসব ব্যক্তি ও দল ওই মঞ্চে শরিক হয়েছিল, বিএনপি ক্ষুব্ধ হওয়ায় এখন তারা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে মঞ্চের কোনো কর্মসূচিও নেই।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অলি আহমদ এবং তাঁর মুক্তিমঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’র দাবি মুক্তিমঞ্চের ১৮ দফায় সংযুক্ত থাকায় বিএনপির যেসব নেতা আগে অলির কর্মসূচিতে যেতেন তাঁরাও যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তা ছাড়া বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতার সঙ্গেও অলি আহমদের সম্পর্ক ভালো নয়। কিছুদিন আগে মুক্তিমঞ্চের একটি কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তারেক রহমানের নির্দেশনায় শেষ পর্যন্ত তিনি যাননি।

এদিকে বিএনপি ক্ষুব্ধ হওয়ায় জাগপার চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানকে চিঠি দিয়েছেন যে তাঁরা ২০ দলীয় জোটের সঙ্গেই আছেন।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তাসমিয়া প্রধানকে মুক্তিমঞ্চ ছাড়তে বলা হয়েছে। তাসমিয়া প্রধানও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, বিএনপি পছন্দ করছে না। সে জন্য আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি যে জাগপা ২০ দলের সঙ্গে আছে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিমঞ্চ থেকে বেরিয়ে এখনো যাইনি। তবে এটাও ঠিক যে এখন মুক্তিমঞ্চের কোনো কর্মসূচি আমরা নেই।’

এদিকে কল্যাণ পার্টির কোনো কর্মসূচিতে না যেতেও দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা পাঠিয়েছেন তারেক রহমান । অনেক দিন পর ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম। তবে বিএনপি ও কল্যাণ পার্টি সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা ইবরাহিমের সব কর্মসূচিতে যেতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলকে নিষেধ করেছেন তারেক রহমান। মুক্তিমঞ্চে যাওয়ার কারণে কল্যাণ পার্টি ও জাগপার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। এর নেপথ্যে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করা হয়।

জামায়াত এখনো মুক্তিমঞ্চের সঙ্গে আছে কি না জানতে চাইলে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, ‘২০ দলীয় জোটের শরিকরা যে কেউ আমাদের ডাকলে যাই। এতে আলাদা কোনো বিশেষত্ব নেই। অলি আহমদ সাহেব ২০ দলে আছেন। ফলে তিনি এবং বিএনপির কর্মসূচিতে ডাকা হলে আমরা যাই।’

খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের বলেছেন, ‘মুক্তিমঞ্চের সঙ্গে আমরা নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন আমরা একজন পর্যবেক্ষককে পাঠিয়েছিলাম। এরপর আর যাইনি।’

অন্যদিকে অলি আহমদের দল এলডিপিও গত ২ ডিসেম্বর দুই ভাগ হয়ে গেছে। এলডিপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে নতুন এলডিপি আত্মপ্রকাশ করেছে। বিএনপি আবার ওই অংশকে স্বীকৃতিও দিয়েছে। এর ফলে অলি আহমদ রুষ্ট হয়েছেন এবং কিছুটা চাপের মুখে পড়েছেন বলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। এলডিপির পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটেও আলোচনা আছে, সেলিমের কারণেই এলডিপি বেশি গতিশীল ছিল। সাংগঠনিক তৎপরতা ও আর্থিক সহযোগিতা দুই ক্ষেত্রেই তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মতে, এ কারণেও মুক্তিমঞ্চের কর্মসূচি থেমে গেছে।

যদিও অলি আহমদ দাবি করেছেন, মুক্তিমঞ্চ পুরোপুরি সক্রিয় আছে এবং আরো সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেছেন, ‘আপাতত কোনো কর্মসূচি মুক্তিমঞ্চের নেই।’ তিনি বলেন, মুক্তিমঞ্চ গঠনের প্রথম দিন থেকে যাঁরা ছিলেন তাঁরাই এখন পর্যন্ত আছেন।

শাহাদাত হোসেন সেলিমের অংশকে বিএনপির স্বীকৃতি দানের বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে অলি আহমদ বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে যারা অসহায় তাদেরকে বিএনপি আশ্রয় দিলে আমি আনন্দিত হই! তাছাড়া কে আমার দলে এলো বা গেল তাতে আমার কিছু আসে-যায় না।’ অর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলে অলি বলেন, ‘তাহলে আমার দল এখন চলছে কার সহযোগিতায়?’

অবশ্য অলি আহমদ বীরবিক্রম সম্পাদিত ‘যা দেখেছি যা বলেছি এবং যা হয়েছে’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এলডিপি গঠনের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন শাহাদাত হোসেন সেলিম। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে দল গঠন প্রক্রিয়ায় ২০০৬ সালে অলি আহমদের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিলেন সেলিম। ওই বছরের ২ অক্টোবর দল গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন অলি আহমদ।

গত বছরের ২৭ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামে আলাদা প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছিলেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমদ। ওই দিন ঘোষণার সময় ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টি, জাগপা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর বাইরে ন্যাশনাল মুভমেন্টের চেয়ারম্যান মুফতি আল্লামা মুহিব খান, বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্টের সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ শামসুল হুদা এবং উলামা-মাশায়েখ ইউনিটি নেতা হাফেজ মুফতি আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। কিছুদিন আগে শেষের তিনজনকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারণ বিএনপি খবর পায় যে ২০ দলীয় জোটের শরিক দু-একটি দলের পাশাপাশি আরো কিছু দল ও ব্যক্তিকে মুক্তিমঞ্চে নেওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন অলি আহমদ। ওই ঘটনায় জামায়াতের ওপরও কিছুটা রুষ্ট হয় বিএনপি। যদিও জামায়াত সব সময় খুব কৌশলীভাবে ওই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে। গত বছরের ১ জুলাই চট্টগ্রামে মুক্তিমঞ্চের দ্বিতীয় কর্মসূচিতে জামায়াত যোগ দেয়নি। তবে এরপর ১৬ জুলাই সিলেটের কর্মসূচিতে দলটির এক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যে ভয়ে আছে সরকার, জানালেন গয়েশ্বর
এখন থেকে প্রতিবাদ নয়, প্রতিশোধ নেওয়া হবে : গয়েশ্বর
৭ জানুয়ারি সমকামী নির্বাচন হয়েছে: গয়েশ্বর 
ছয় মামলায় গয়েশ্বরের আগাম জামিন
X
Fresh