• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

দিন দিন হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে, কিন্তু বাড়েনি চিকিৎসক

খান আলামিন

  ১৮ জুলাই ২০১৯, ২২:০১
দিন দিন হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে, কিন্তু বাড়েনি চিকিৎসক
ফাইল ছবি

হঠাৎ পেটের পীড়া নিয়ে হামিদা বেগম গেলেন একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা পেলেন না। বেলা ১২টা বাজে। তখনো চিকিৎসক কর্মস্থলে এসে পৌঁছাননি, হয়তো পৌঁছাবেন। নয়তো না। তাই হামিদা বেগমকে ফিরে যেতে হচ্ছে কাঙ্খিত চিকিৎসা না নিয়েই। শত শত হামিদা বেগমের এমন গল্প রচিত হচ্ছে প্রতিদিন। এর মধ্য দিয়েই ফুঁটে ওঠছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এপিঠ ওপিঠ।

এতে বরাবরই দায় চাপছে চিকিৎসদের উপর। কিন্তু উল্টো পিঠটা আড়ালে থেকে যাচ্ছে সবসময়ই। দেশে যত সংখ্যক হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে সেখানে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক কী রয়েছে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, একটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু দেশের এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ১০ থেকে ১২ জনের বেশি চিকিৎসক রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে জেলা সদর হাসপাতাল, সময়ের পরিক্রমায় সবখানেই শয্যা সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বাড়েনি চিকিৎসকের সংখ্যা। দিন দিন বেড়ে চলছে হাসপাতালের সংখ্যা। বাড়ানো হচ্ছে মেডিকেল কলেজের সংখ্যাও। কিন্তু সেই অনুপাতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না চিকিৎসক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, দেশে সরকারি খাতে চিকিৎসকের ঘাটতি বর্তমানে ৫৬ হাজার। ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বুলেটিনে দেখা যায়, চিকিৎসকদের জন্য প্রথম শ্রেণির ২৫ হাজার ৯৮০টি পদের মধ্যে ৫ হাজার ৬৬টি খালি। এই ঘাটতি নিরসনে সরকার নীতি গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোও কাগজে-কলমে তৎপর। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৫ জুন, ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সার-সংক্ষেপে অনুমোদন দিয়েছিলেন। তারপর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার জন্য ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএস’র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ওই বিসিএস’র মাধ্যমে ১০ হাজার পর্যন্ত চিকিৎসক নিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও নানা সময় উল্লিখিত বিসিএস’র মাধ্যমে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগের কথা বলেন। চূড়ান্তভাবে ফলাফল প্রকাশের আগে আরও ২ হাজার ২৫০ জন চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারে পিএসসি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। কিন্তু স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয় সমন্বিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় পিএসসি চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল, ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। ৮ হাজার ৩৬০ জনকে নন-ক্যাডার হিসেবে রেখে দেয় পিএসসি। তাদের একজন ডাক্তার আদনান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের যে নির্দেশনা, এই নিয়োগের মাধ্যমে সেটাকে অমান্য করা হয়েছে। এর ফলে চিকিৎসক সংকট থেকেই গেলো। নন-ক্যাডারভুক্ত সবাইকে ক্যাডারে সুপারিশ করে নিয়োগ দিলে স্বাস্থ্য সেবায় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্যারা ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তথ্য দিয়ে হয়তো কেউ কেউ বিভ্রান্ত করেছেন। যার কারণে বেশি বেশি চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে তার অভিপ্রায় থাকলেও সময় মতো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পারেননি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শিগগিরি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবে বলে আশা ইকবাল আর্সলানের।

তিনি বলেন, বর্তমানে রোগী এবং চিকিৎসককে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক সংকট। চিকিৎসকরা হিন্দুদের দেবী মা দুর্গার মতো নয় যে, একসঙ্গে দশ হাতে কাজ করবে। চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে অমানসিক চাপ সহ্য করতে হয় বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। তাহলেই সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট এত কম!

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ অনেক কম। বাজেটের ১২% এবং জিডিপির ৩% বরাদ্দ করা হলে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। চলতি অর্থবছরে সবমিলিয়ে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। দেখা যাচ্ছে মোট বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ৯২% এবং জিডিপি’র ০ দশমিক ৮৯% বরাদ্দ পেয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। হিসাব করলে দেখা যায়, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে জনপ্রতি বরাদ্দের পরিমাণ বছরে মাত্র ১৪শ’ ২৭ টাকা।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও জাতীয় স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক রশিদ-ই মাহবুব বলেন, এই টাকা দেশের জনগণের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ছাড়া সুষ্ঠু চিকিৎসা আশা করা সম্ভব নয়। সরকার যে বাজেট দিয়েছে, তা জনগণ ও চিকিৎসকদের মধ্যে উত্তেজনা ও গণ্ডগোল আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এই বাজেটে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের বেতন দেওয়ার পর ওষুধসহ অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন রশিদ-ই মাহবুব।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ডিএনসিসির স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে সহায়তার আশ্বাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
বায়ুদূষণে ২০২৩ সালে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ 
রমজানে সুস্থ থাকতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ পরামর্শ
‘গাজায় ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে শিশুরা’
X
Fresh