• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

বাজেটে বিটিভি’র চেয়েও কম বরাদ্দ বিচার বিভাগে

খান আলামিন

  ০৩ জুলাই ২০১৯, ২৩:৩০
সুপ্রিম কোর্ট

বাজেটে চলতি অর্থবছরে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬শ’ ৫০ কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্টের জন্য বরাদ্দ ১৯৫ কোটি। অর্থাৎ বিচার বিভাগের জন্য মোট বরাদ্দ দাঁড়ায় ১৮শ’ ৪৫ কোটি টাকা। মোট বাজেট পাঁচ লক্ষ ২৩ হাজার একশ’ ৯০ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ মাত্র ০.৩৫২ ভাগ। অর্থাৎ বাজেটের ১০০ টাকার মধ্যে বিচার বিভাগ পাবে ৩৫ পয়সা। অথচ সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) জন্য বরাদ্দ করেছে তার চেয়েও ২৩ কোটি টাকা বেশি; ১৮শ’ ৬৮ কোটি।

আইন ও বিচার বিভাগের ১৬শ’ ৫০ কোটি টাকার মধ্যে আবার নিবন্ধন অধিদপ্তরের জন্য ২১৪ কোটি, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের ৩০ কোটি টাকাও রয়েছে। ফলে বলা যায়, প্রকৃত বরাদ্দ ১৪শ’ ছয় কোটি টাকা। এই টাকা দিয়েই দেশের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দেওয়ানী ও দায়রা আদালত, বিশেষ আদালত ও ট্রাইব্যুনাল চলতি বছরের ব্যয় নির্বাহ করবে। বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু বাজেট স্বল্পতার বিষয়টি স্পিকারের দৃষ্টিগোচর করেন।

তিনি বলেন, মামলাজট কমাতে হলে বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। আর সেজন্য দরকার বিচার বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ।

আইন ও বিচার বিভাগের বরাদ্দ কেবল এবারই কম তা নয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিলো দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিলো এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটের ০.৪৬ শতাংশ। পরের অর্থবছরে তিন লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা, যা বাজেটের ০.৪৪ শতাংশ।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট বাজেট ছিলো তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার। আইন ও বিচার বিভাগের বরাদ্দ ছিলো এক হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা; যা মোট বাজেটের ০.৩৯ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫২১ কোটি। শতাংশের হিসেবে যা মাত্র ০.৩২ ভাগ। অর্থাৎ প্রতিবছরই আইন ও বিচার বিভাগে বাজেট বরাদ্দ কমছে। মোট বাজেটের এক ভাগের অর্ধেকের নিচেই ঘুরপাক খাচ্ছে স্বাধীন বিচার বিভাগের বাজেট।

গত কয়েকবছর ধরেই মামলাজটের প্রসঙ্গটি জোরেসোরে আলোচিত হচ্ছে। মামলাজটে জর্জরিত বিচার বিভাগের কর্মদক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে বহুবার। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মামলার পরিসংখ্যানমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। মামলাজটের বিষয়টি সমালোচিত হলেও মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি কখনো আলোচনায় আসেনি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নতুন মামলা দায়ের এবং পুনর্জীবিত মামলার মোট সংখ্যা এক কোটি ৫৯ লাখ পাঁচ হাজার ৬৬১টি। আর নিষ্পত্তি হয়েছে এক কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৫০টি মামলা। প্রতিবছর গড়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ১২ লাখেরও বেশি মামলা।

১০ লাখ মানুষের জন্য বিচারক জন!

ক্রমবর্ধমান হারে দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা। কিন্তু বিচারকের সংখ্যা বাড়ছে না সমানতালে। বর্তমানে দেশের অধস্তন আদালতগুলোতে বিচারকের সংখ্যা ১৮শ’ ছয় জন। শুন্য আছে ২২৬ টি পদ। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ প্রেষণে অন্যান্য বিভাগে কাজ করছেন। ফলে আদালতে কর্মরত বিচারকের সংখ্যা ১৬শ’ এর মতো। তাদের হাতেই প্রায় ৩১ লাখ মামলার পাহাড়। প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য এদেশে কাজ কারছেন একজন বিচারক। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত কিংবা দূরের অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যেই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আইনের মাধ্যমে নতুন নতুন আদালত, ট্রাইব্যুনাল সৃষ্টি করা হচ্ছে অথচ বিচারক থেকে যাচ্ছে আগের মতোই।

সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে নিম্ন আদালতে বিচারক তিন হাজার করার কথা বলেছেন। হাইকোর্টের জন্য দুইশ’ বিচারপতি এবং আপিল বিভাগে ১২ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে মামলাজট কমে আসবে বল মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপরই নির্ভর করে গণতন্ত্র। বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে মামলা নিরসনে পর্যাপ্ত বিচারক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বিচারক অনেক কম। তাই মামলার পাহাড় দিন দিন বড় হচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে মামলার সংখ্যাও। সুতরাং চাহিদা অনুযায়ী বিচারক নিয়োগ দিয়ে মামলাজট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেজন্য বাজেটে এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরী।

ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের বাজেটে প্রতিবছরই বিচার বিভাগের জন্য খুব কম বরাদ্দ রাখা হয়। আগামী অর্থবছর থেকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিচার বিভাগের জন্য বাজেট বরাদ্দ করা হবে বলে আশা করি।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh