• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা

মিথুন চৌধুরী, আরটিভি অনলাইন

  ১১ এপ্রিল ২০১৯, ২১:০০
ফাইল ছবি

কদমতলা পূর্ব বাসাবো উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি দুই মাধ্যমে শিক্ষার্থী আছে প্রায় তিন হাজার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী আরও কয়েকশ জন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা।

শুধু এই স্কুলটি নয়, নগরীর প্রাইমারি স্কুল থেকে কলেজ, মাদরাসার ভবনগুলোর প্রায় সবকটিতেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, নগরীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে মূলত বাসা-বাড়িতে। এজন্য ভবনগুলোতে নেই জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থাও।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, কেপিবি স্কুল এন্ড কলেজ, কমলাপুর স্কুল এন্ড কলেজ, সিদ্ধেশরী স্কুল এন্ড কলেজসহ অর্ধশত প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপণের তেমন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

ফায়ার সার্ভিস এর তথ্য অনুসারে, ঢাকা মহানগরীর ১ হাজার ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯২৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরে ফায়ার সার্ভিসের সরেজমিন প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এর বাইরে কয়েক শতাধিক কিন্ডারগার্ডেন তালিকার বাইরে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ফায়ার সার্ভিসের নোটিশের বিষয়টি স্বীকার করেন। তারা জানান, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন যা শিগগির বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নি ঝুঁকির বিষয়ে বুয়েটের ফায়ার সেফটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসির আরাফাত আরটিভি অনলাইনকে বলেন, রাজধানীতে গড়ে উঠা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিঝুঁকির পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। কারণ বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলার মাঠ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান বাসা বাড়িতে গড়ে উঠেছে যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদলে হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ঝড়োসড়ো হয়ে পড়ালেখা করে থাকে। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্নিঝুঁকির মাত্রা বেশি।

তিনি আরও বলেন, শুধু সিওটু গ্যাস ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা এবিসি এন্ড ই ড্রাই পাউডার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত বললে হবে না। ঝুঁকি এড়াতে পুরো প্রতিষ্ঠানকে অটো এলার্ম সিস্টেমের আওতায় এনে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মেজর শাকিল নেওয়াজ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শনে কোথাও ফায়ার সেফটি প্ল্যান কার্যকর পাইনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো। বড় পরিসরে হওয়ায় কিছুটা জায়গা আছে। ঝুঁকিও কিছুটা কম। কিন্তু বেসরকারি বিশেষ করে কিন্ডারগার্ডেনগুলোতে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ দিয়েছি। দুইবার, তিনবার, চারবারও নোটিশ দিয়েছি যাতে যেকোনো দুর্ঘটনায় ঝুঁকি এড়ানো যায় এবং অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকি থাকে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সাথে মতবিনিময় করেছি। তাদের সচেতনতার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

শিক্ষার্থীদের অগ্নি নির্বাপণ পদ্ধতি নিয়ে সচেতন করতে প্রশিক্ষণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনাগ্রহ থাকার কথাও বলেন মেজর শাকিল। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি যাতে বাচ্চারা ফায়ার প্রশিক্ষণ নেয়। কিন্তু তারা বলেন, বাচ্চারা ঘেমে যাবে বা তাদের পরীক্ষা ইত্যাদি। নিজ থেকে সচেতনতার লেভেল না বাড়ালে এটা ইম্প্রুভ করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, শহরের সরু রাস্তার ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে অনেক স্কুল, কলেজ। ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়ন করে। এসব সরু রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি নেয়া সম্ভব হয় না। যেকোনো দুর্ঘটনায় এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশংকা থাকে।

ফায়ার সার্ভিস এর তথ্য অনুসারে, শুধু ঢাকায় ২০১৮ সালে ৬ হাজার ২০৮টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া ২০১৮ সালে দেশে ১৯ হাজার ৬৪২টি আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ১৩০ জন মারা যান, আহত হন ৬৬৪ জন মানুষ ।

এমসি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে ফের শিশুর মৃত্যু, খোঁজ নেই ডাক্তার-স্টাফদের
X
Fresh