• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

৪৫% দম্পতি বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় রয়েছে

রাফিয়া চৌধুরী

  ০১ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:৪৭
ছবি: ইন্টারনেট

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে ৪৫% দম্পতি বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় রয়েছে। ‘‘বন্ধ্যাত্ব নিয়ে জটিলতা শীর্ষক’’ এই গবেষণায় অংশ নেন এই বিভাগের একদল চিকিৎসক।

অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি বলেন, দেশে বন্ধ্যাত্ব বেড়েই চলেছে। আমাদের এই গবেষণায় বন্ধ্যাত্ব বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে খাদ্যে ভেজাল সমস্যা। ভেজালের কারণে মানুষের মধ্যে উর্বরতা কমে যাচ্ছে। এছাড়াও অ্যনান্য কারণের মধ্যে রয়েছে , জীবন যাত্রার মান জটিল হওয়া, শব্দ দুষণ বা জলবায়ু পরিবর্তন।

নীলা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়েছে। তিনি জানান, দুই বছর পর থেকেই বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু বাচ্চা হচ্ছে না। দেশে বিদেশে ডাক্তার দেখাতে দেখাতে জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। ওষুধের ব্যাগ নিয়ে ঘুরতে হয় সারাক্ষণ। দাম্পত্য জীবনেও কলহের সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝেই নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি লেগে যায় খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে । সবকিছুর মূলই বাচ্চা । সবকিছু বুঝে শুনেও কিছু করতে পারছি না।

তিনি বলেন, ডাক্তারের কাছে হেন কোনো টেস্ট নেই যে করা হয়নি। কোনো টেস্টে কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। কোথাও কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। বাংলাদেশের ডাক্তার বলে এটা আপনার মানসিক সমস্যা। আর দেশের বাইরের ডাক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা ভালো না। সেখানে ভেজাল খাবার দেয়া হয়। এছাড়াও জলবায়ুগত সমস্যা রয়েছে।

এই গল্প শুধু নীলার একার নয়। নিজেদের আশেপাশে একটু খোঁজ খবর নিলে এই গল্প আরও অনেক পাওয়া যাবে।

রাজধানীর আসাদগেটে অবস্থিত বেসরকারি গাইনি হাসপাতাল বাংলাদেশ কেয়ার হসপিটালের গাইনি বিশেষঞ্জ ফাতেমা পারভিন। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। এই ছয় ঘণ্টায় তার প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা ১৫০ থেকে ১৮০। রোগীর এই অনুপাত দেখে বুঝা যায় , দেশে কি পরিমাণ বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা বেড়েছে। এটা তো শুধু রাজধানীর একটি হাসপাতালের পরিসংখ্যান দেয়া হলো। তাহলে পুরো বাংলাদেশে কি অবস্থা ?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস অ্যান্ড গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম আরটিভি অনলাইনেক বলেন, বন্ধ্যাত্ব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। বন্ধ্যাত্ব আসলে ছেলে মেয়ে দুজনেরই হয়। স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজনের কারণে কিন্তু বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। স্বামীর দিক থেকে যদি আমি চিন্তা করি, তাহলে তার শুক্রকীট বা ধাতুর মধ্যে কী অবস্থা আছে, এর পরিমাণ কী রকম আছে—সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি আরও বলেন,আমাদের জীবন যাপনের ধরন এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে, কাজের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে, আমরা অনেক বেশি ইলেকট্রনিক জিনিস ব্যবহার করি। অতিবেগুনী রশ্মীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। মোবাইল অহরহ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটার মধ্যে এক প্রকার রশ্মী থাকে। এটি শুক্রকীটের গুণাগুণ নষ্ট করে। একজন ছেলে সারাদিন বাইরে কাজ করে। এই গরম পরিবেশও কিন্তু শুক্রানুর গুণাগুণকে নষ্ট করে দেয়। মাদক, মদ্যপান, ধূমপান এসব কারণেও এর গুণগত মান কমে। মাদক আমাদের সমাজে অনেক চলে এসেছে। এরপর রয়েছে সংক্রমণ। বিশেষ করে গনকক্কাল ইনফেকশন। এটি স্পার্মেটিক কর্ডকে বন্ধ করে দিতে পারে। এতে দেখা যাবে তার সিমেনের মধ্যে কোনো শুক্রকীট নেই। অনেক সময় দেখা যায় জেনেটিক কারণে এটি হতে পারে।

ফিরোজা বেগম বলেন, এছাড়াও বয়স একটি বড় কারণ বন্ধ্যাত্বের জন্য। এখন মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার বেড়ে গেছে। মানুষ এখন অল্প বয়সে বিয়ে করে না। সবাই ক্যারিয়ার সচেতন। মেয়েদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় মেয়েরা ৩০ বছরের বেশি বয়সে বিয়ে করছে। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি ৩০ বছরের পর বাচ্চা হতে জটিলতা দেখা দেয়। বাচ্চা হবে না বিষয়টি তেমন না। তবে জটিলতা রয়েছে ।

এ ছাড়া বয়স যখন বেড়ে যায় বিভিন্ন অসুখ ওই নারী অঙ্গগুলোতে হয়। যেমন, জরায়ুর ভেতর টিউমার চলে আসতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের কারণে টিউব ব্লক হয়ে যায়। হয়তো সে চিন্তা করছে বাচ্চা এখন নেব না, পরে নেব। সে হয়তো এমআর করল, এ ক্ষেত্রে অনেক সময় সংক্রমণ হয়ে টিউবাল ব্লক হয়ে যেতে পারে।

এন্ডিমেট্রিওসিস বলে একটি অসুখ আছে। এটি ডিম্বাণুতে সিস্ট তৈরি করে এবং একে নষ্ট করে দেয়। প্রায়ই আমরা রোগীদের মধ্যে এই রোগ হতে দেখি।

তাই বয়সের সমস্যা ছেলেদের বেলায় হোক বা মেয়েদের বেলায় হোক উভয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। বয়সের সাথে সাথে যে তার শুক্রকীটের পরিমাণ কমে যায়, শুক্রকীটের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। সেটিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আর কিছুটা রয়েছে হরমোনাল কারণ থাকে। শরীর থেকে যে হরমোন আসছে সেটা পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজ করছে না। অথবা তার টেস্টিস যথাযথ জায়গায় নাই। হয়তো সেটি পেটের ভেতর রয়ে গেছে।

আজকাল অনেক ক্যানসার হচ্ছে। ক্যানসারে ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ওষুধগুলো তার শুক্রাণুকে নষ্ট করে দেয়। সারাদিন যারা বাইরে দাঁড়িয়ে কাজ করে এদের বেলায় ভেরিকোসিল বেশি হয়। এই ভেরিকোসিলও শুক্রাণুর গুণাগুণ নষ্ট করে দেয়।

আরসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh