• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মেয়রের সঙ্গে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের বৈঠক

প্রতিটি দোকানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ

রাফিয়া চৌধুরী, আরটিভি অনলাইন

  ১০ মার্চ ২০১৯, ২১:১৪

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় কেমিক্যাল থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন, কারখানা স্থানান্তরের অভিযান চালানো হয়। স্থানীয়রা বলছেন, পুরান ঢাকায় যেমন কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই কেমিক্যালের ব্যবসা শুরু হয়েছিল। তেমনি কেমিক্যালের উচ্ছেদ অভিযানও কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই শুরু হয়েছে।এতে বিপাকে পড়েছেন পুরান ঢাকার বাড়িওয়ালা ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা।

টাস্কফোর্সের তথ্য মতে, গত ৯ দিনে অভিযানে ১২৩ কেমিক্যালের গোডাউন ও কেমিক্যালে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য মতে, তদন্ত প্রতিবেদনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ২৯ ধরনের অতি দাহ্য কেমিক্যাল যাদের কাছে ছিল তারা ইতোমধ্যে সেগুলো সরিয়ে ফেলেছেন।

আজ(১০ মার্চ) পুরান ঢাকার উর্দু রোডে প্লাস্টিক ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে চলমান অভিযান স্থগিত করার দাবিতে সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী, বাড়ির মালিক, কারখানার মালিকদের সঙ্গে টাস্কফোর্সের অভিযানের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

একই সভায় প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা বলেন, প্লাস্টিক দানা কেমিক্যাল না হলেও চলমান অভিযানে অনেক প্লাস্টিক গোডাউন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে । দীর্ঘ বছর ধরে পারিবারিকভাবে আমরা প্লাস্টিক দানার ব্যবসা করে আসছি। এখন এ মুহূর্তে অন্যান্য কেমিক্যালের মতো প্লাস্টিক দানার গোডাউন অপসারণ করা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।

সভায় ব্যবসায়ী নেতা আব্দুস ছালাম বলেন, পুরান ঢাকা ৩৫ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন রকম কেমিক্যালের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কেমিক্যালের ব্যবহার সবকিছুতেই লাগে। অতি দাহ্য কেমিক্যাল হিসেবে যে ৩৫টি কেমিক্যালের তালিকা সরকার করেছে সেগুলোর গোডাউন, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ওইসব কেমিক্যালে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা পুরাণ ঢাকায় থাকুক এটা আমরাও চাই না। তবে অন্যান্য কম যেসব কেমিক্যাল রয়েছে সেগুলো অতি দাহ্য নয় সেসব কেমিক্যালের গোডাউন রাখতে হলে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাও রাখতে হবে। এর সঙ্গে আমরা একমত।

সবার মতামত শুনে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, অতীব দাহ্য কেমিক্যালের গোডাউন ও কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অতীব দাহ্য কেমিক্যাল হিসেবে যেসবের তালিকা রয়েছে ওইসব তালিকার কোনও কেমিক্যালের কারখানা, গোডাউন এমনকি দোকানও পুরান ঢাকায় থাকবে না। তবে চলমান অভিযান প্লাস্টিককে কেমিক্যাল মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হলো। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের রিপোর্ট মোতাবেক যেহেতু প্লাস্টিক আইটেম কেমিক্যালমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাই এখন থেকে প্লাস্টিকের গোডাউন বা কারখানায় কোন অভিযান চালানো হবে না। ইতোমধ্যে অভিযানে যেসব প্লাস্টিক দানার গোডাউন ও কারখানার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে সেগুলো পুনরায় সংযোগ দেয়া হবে। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, চুরিহাট্টার আগুনের ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। সাধারণ মানুষের নির্মম মৃত্যু, আহাজারি আমরা দেখেছি। এ দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়। কেমিক্যালের আগুনের কী ভয়াবহতা তা চোখে না দেখলে বুঝা যাবে না। তাই এখানে ব্যবসা করতে হলে আগুনে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা বলেছেন, অগ্নিঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রত্যেক দোকানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনা রাখবেন। এখন থেকে প্রত্যেক দোকানে এ ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য আপনাদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

সভায় উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম মার্চেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাসুদ বলেন, চলমান অভিযানে কেমিক্যালের গোডাউন সরানোর জন্য তারা বার বার সময় চাইলেও টাস্কফোর্স তাদের সময় দিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউম ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকের গোডাউন বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর অনেকেই বাধ্য হয়ে মালামাল সরিয়ে যত্রতত্র রেখেছেন। যে যেভাবে পারছেন সেভাবে গোডাউন থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই মালামাল এখনও সরাতে পারেননি। ইতোমধ্যে অভিযানের পর এফবিসিসিআইয়ে একটি হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। এরমধ্যে এফবিসিআইয়ের হস্তক্ষেপে কিছু কিছু কেমিক্যালের গোডাউনের সংযোগ পুনরায় চালু করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর সব ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন পরিদর্শন করে একটি তালিকা করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিস্ফোরক পরিদপ্তর অতীব দাহ্য কেমিক্যাল হিসেবে ২৯টি কেমিক্যালের একটি তালিকা করেছেন। ওই তালিকার মধ্যে কয়েকটি আইটেম যেসব গোডাউনে ছিল সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে ইতোমধ্যে। কেউ গোপনে অতি দাহ্য কেমিক্যাল গোপনে রাখছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন থেকে কিন্তু চলমান অভিযানে তালিকাভুক্ত কেমিক্যাল না পাওয়া গেলেও অনেকের গোডাউন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পাশাপাশি মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের মালামাল যে সেভাবে পেরেছেন সেভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে রেখেছেন। যা পুরো ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

আরসি/সি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh