• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

সোহরাওয়ার্দীর অগ্নিকাণ্ড নাশকতা হতে পারে

রাফিয়া চৌধুরী

  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২২:০৯

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে! সরকারি এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল ইকুয়েপমেন্টসহ ৬০ কোটি টাকার মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ‘ইচ্ছে করেই’হাসপাতালটিকে আগুন লাগানো হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন উঠেছে।

৬০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানের মধ্যে হঠাৎ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলগুলোতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত মাসের ৯ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ১৯ ধরনের তথ্য চেয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের কাজের রেকর্ড চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছিলো শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে।ওই চিঠির অনুলিপি স্বাস্ব্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও পাঠানো হয়েছিলো।

দুর্নীতির বিষয়টি বর্তমানে অনুসন্ধান করছে দুদকের উপ পরিচালক সামছুল আলমের নেত্বাতাধীন টিম।দুদকের উপ পরিচালক সামছুল আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, চিঠিটি দেয়া একমাস হয়ে গেলেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা একবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও আশানুরুপ সাড়া পায়নি। আগুন লাগাটা নাশকতার অংশ হতে পারে বলে ধারণা করছি।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিলো। মূলত ওই অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিপ্তরের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য পায় দুদক। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির বড় ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও কেনা কাটায় বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এরই অংশ হিসেবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২০১৬ -২০১৭ এবং ২০১৭- ২০১৮ অর্থ বছরে যাবতীয় কেনাকাটায় কত টাকা বরাদ্ধ হয়েছে, তার অণুকলে কি ধরনের মালামাল ক্রয় করা হয়েছে এসব বিষয়ে সোহরাওয়াদী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চাওয়া হয়। গত জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে ১৯ ধরনের তথ্য চেয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে টেন্ডার ডকুমেন্ট, অণুমোদিত বাৎসরিক ক্রয় পরিকল্পনা, চাহিদাপত্র ও দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মূল কপি, ওয়েবসাইটের কপি, দরপত্রের প্রশাসনিক অনুমোদন, অনুমোদিত প্রেসক্রিপসন,দরপত্র উম্মুক্ত করন প্রতিবেদন, কারিগরী মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন,কার্য সম্পাদনের জামানত, কার্যাদেশ,সার্ভে রিপোর্ট, কারিগরি বিল, পরিশোধিত কপি এভং বরাদ্ধের নীতিমালাসহ যাবতীয় নথিপত্র গত মাসের ২০তারিখের মধ্যে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। চিঠির পর সোহরাওয়ার্দী কর্তৃপক্ষ কিছু নথিপত্র সরবরাহ করছে। তবে আরও কিছু নথিপত্র ছিলো সেগুলো এখনো সরবরাহ করা হয়নি।

দুদক সূত্র জানায়, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ ৫ টি হাসপাতালে ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে সোহারাওয়ার্দী হাসপাতাল অন্যতম। গত কয়েক বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতালে ইকুয়েপমেন্ট কেনাকাটায় দরপত্র আহবান থেকে শুরু করে সরবরাহের ক্ষেত্রে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ঘটেছে। এসব দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিস্ট হাসপাতালে পরিচালক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বড় বড় রাগোববোয়ালরা জড়িত।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে কিনা দুদক তা তদন্ত করবে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২ বছর আগেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ঠিকঠাক করতে দুদফা তাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছিলো। সেখানে তাদের কি কি দূর্বলতা রয়েছে তা উল্লেখ করে চিঠি দেয়া হয়েছে। দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সারাদেশে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কিনা এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সার্ভে করা হয়। ওই সার্ভে প্রতিবেদনে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতালের নামও রয়েছে। এর মধ্যে তাদের দুদফা চিঠি দিয়ে সর্তক করার পরও তারা অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আগ্রহী হয়নি। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, স্টর রুম থেকে আগুন লাগার বিষয়টি পুরোপুরি রহস্যজনক। এ ধরনের আগুনে নাশকতাও হতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস বিভাগের উপ পরিচালক রমজান উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, পুরো তদন্ত শেষ না হলে কিছু বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটা নাশকতা হতে পারে।

গত ১৪ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৬ টায় শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩ ঘন্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৬ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। আগুন লাগার পর সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত পুরো হাসপাতাল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। ওই অবস্থায় হাসপাতালে থাকা প্রায় ১২শ রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেসরকারী এম্বুলেন্সের মাধ্যমে বের করে আনা রোগীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরসি/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন দেখে মেডিকেলে ভর্তি, ৪২ শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণ অনিশ্চিত
নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে মাইক্রোবাসের ধাক্কা, আহত ৭
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
সেই শিক্ষকের ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
X
Fresh