ভিটেমাটি দখল হওয়ায় রান্নাঘরে বসবাস পরিবারটির (ভিডিও)
নিজেদের বাড়িঘর ও ভিটেমাটি দখল হয়ে যাওয়ায় অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে শরীয়তপুরের ডিঙ্গামানিক গ্রামের রুপা রানী দে’র পরিবার। খুব ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট দুই বোন নিয়ে অকূল পাথারে পড়ে রুপা। তিনটি শিশুর কথা ভেবে চাচা-ফুপু বিয়ে না করে ভাইয়ের সন্তানদের লালন-পালন শুরু করেন। হঠাৎ তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে ভিটাবাড়ি কেড়ে নেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী। অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে একটি বাড়ির রান্নাঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করছে অসহায় পরিবারটি।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামের পরেশ চন্দ্র দে ও ঝর্ণা রানী দে’র মেয়ে রুপা রানী দে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাবা এবং সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ছোট দুই বোনকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে রুপা।
এ সময় তিনটি নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসেন রুপার কাকা জগন্নাথ দে এবং পিসি সুমিত্রা দে। নিজেরা বিয়ে না করে ভাইয়ের সন্তানদের নিজ সন্তানের মতো লালন-পালন শুরু করেন তারা। ভালোই চলছিল তাদের সংসার। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কাকা এবং পিসি। উপায়ন্তর না দেখে সংসার চালাতে টিউশনি শুরু করেন রুপা।
রুপার পিসি বলেন, এখন মেয়ে আট হাজার টাকার চাকরি করে, ওটা দিয়ে খাই। এক হাজার টাকা ভাড়া দিই। এ ছাড়া আমার আর কিছু নাই। রাতে ঘুম আসে না। চিন্তা এখন যদি মরে যাই বাচ্চাগুলোর উপায় হবে কী? কেউ আমাদের সাহায্য করে না।
তিনি বলেন, এটা আমার বাপ-দাদার বাড়ি। সেই বাড়িতে এতদিন থেকেছি। এখন ওই বাড়ি কিনতে চেয়েছে আমরা বিক্রি করিনি। এখন জোরজবরদস্তি করে বাউন্ডারি দিয়ে দিছে। আমাদেরকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেয় না।
এমন দুরবস্থার মাঝে তাদের একমাত্র সম্পদ বসতভিটাটিও দখল করে নেয় স্থানীয় এক প্রভাবশালী। বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ একটি রান্নাঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে পাঁচটি মানুষ।
রুপা বলেন, আমাদেরকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিছে। আমরা এখন অন্যের বাসায় থাকি। আগে আমরা অনেক ভালোভাবেই থাকতাম।
২০১৯ সালে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি পায় রুপা। তবে সামান্য এ টাকায় নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
তিনি বলেন, আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। সামান্য বেতনে সবকিছু হয় না। আমাদের সংসার চালিয়ে ভাড়া থাকাটাও সম্ভব হচ্ছে না। সর্বপ্রথম আমাদের একটা ঘর দরকার।
প্রায় বিনাচিকিৎসায় কাকার মৃত্যু হলে আরও ভেঙে পড়ে রুপার পরিবার। পড়াশোনায় মেধাবী হলেও দারিদ্র্যতা পিছু টেনে ধরে রুপাকে।
তিনি বলেন, আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি অ্যাকাউন্টিং বিভাগে। আর আকজন পড়ে সপ্তম ও অন্যজন দশম শ্রেণিতে পড়ে। পিসি কোনো ভাতা পায় না।
অভাব দূর করতে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বসতভিটাটি উদ্ধারে সরকারের সহায়তা কামনা করেছে রুপা ও তার পরিবার।
এনএইচ/টিআই
মন্তব্য করুন