• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাতিয়া-ঢাকা নৌরুটে ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় ১৭ ঘণ্টা

ইসমাইল হোসেন কিরণ, হাতিয়া প্রতিনিধি

  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৪১
হাতিয়া-ঢাকা রুটে রোগীদের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় ১৭ ঘণ্টা 
ছবি: আরটিভি নিউজ

দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করে ঢাকা-হাতিয়া নৌরুটে। প্রতিদিন হাতিয়ার তমরদ্দি ঘাট থেকে দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আবার ঢাকার সদরঘাট থেকে দুটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

বেলা ১২টায় হাতিয়া থেকে ছেড়ে গিয়ে পরদিন সকালে ঢাকা পৌছায় এসব লঞ্চ। দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা যাত্রীদের লঞ্চে অবস্থান করতে হয়। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে থাকা রোগীরাও এই ১৭ ঘণ্টা লঞ্চে অবস্থান করেন। তবে দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা লঞ্চে থাকা অবস্থায় রোগীদের দেখভাল করার জন্য নেই কোন ডাক্তার বা মেডিকেল সাপোর্ট। মাঝে মধ্যে অক্সিজেন ও জরুরি ওষুধের অভাবে এই লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার পথে মারা যান অনেক যাত্রী।

গত ২৮ আগস্ট উন্নত চিকিৎসা নেয়ার জন্য ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চে মৃত্যু হয় ঝর্না বেগম নামে এক গৃহবধূর। ঝর্নার বাড়ি হাতিয়ার তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে। সম্প্রতি জোড়খালী বাজারে আলাপ হয় ঝর্নার স্বামী ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের সঙ্গে।

জসিম উদ্দিন আরটিভি নিউজকে জানান, অসুস্থ স্ত্রী ঝর্না বেগমকে নিয়ে ঢাকা রওনা দেন ২৮ আগস্ট। এ সময় দুপুর ১২টায় তাদের বহনকারী লঞ্চটি তমরদ্দি ঘাট থেকে ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশে। পরদিন সকালে ঢাকায় নেমে উন্নত চিকিৎসা করানোর চিন্তা ছিল তার। কিন্তু লঞ্চের মধ্যে রাত ১২টার পর হঠাৎ স্ত্রীর অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় দেখা দেয় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট। মোবাইলে ঢাকায় একটি অভিজাত হাসপাতালে যোগাযোগ করলে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু লঞ্চের মধ্যে অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। ক্রমান্বয়ে রোগীর অবস্থা দুর্বল হয়ে পরে।

তিনি আরও জানান, তার স্ত্রীর জ্বর হয়েছিল। কয়েকদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের পরামর্শে ওষুধ খাইয়ে ছিলেন। কিন্তু জ্বর ভালো না হওয়ায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এজন্য তমরদ্দি ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাতায়াত করা এমভি তাসরিফ-১ এর ভিআইপি কেবিন-২ বুকিং করেন। রাতেই লঞ্চের মধ্যে প্রাণ যায় তার স্ত্রীর। পরদিন সকালে ঢাকা সদর ঘাট নেমে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে মৃত স্ত্রীকে নিয়ে সড়কপথে চেয়ারম্যানঘাট হয়ে হাতিয়া আসেন তিনি। লঞ্চযোগে ঢাকা যাওয়ায় পথে অক্সিজেনের অভাবে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

শুধু জসিম উদ্দিনের স্ত্রী নয়। একইভাবে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় আলী আফরোজ খান নোহেলের। নোহেল হাতিয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। নোহেল খানের ভাই আলী মর্তুজা খান সোহেল আরটিভি নিউজকে জানান, তার ভাইয়ের হার্টে সমস্যা ছিল। নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় যেতে হতো। ঘটনার দিন সকালে একই রুটে চলাচলকারী এমভি ফারহান-৩ লঞ্চে যোগে ঢাকা রওনা হয়। লঞ্চটি চাঁদপুর পাড় হয়ে গেলে তার ভাইয়ের বুকে ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু লঞ্চের মধ্যে ছিল না ডাক্তার ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা। পরে রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার বিমান চন্দ্র আচার্য আরটিভি নিউজকে বলেন, হাতিয়া থেকে দুটি লঞ্চ প্রতিদিন ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব লঞ্চে রোগী ছাড়াও অনেক লোক আসা-যাওয়া করে। হাতিয়া থেকে দুপুর ১২টায় ছেড়ে গিয়ে পরদিন সকালে ঢাকা পৌছায় এসব লঞ্চ। দীর্ঘ ১৬-১৭ ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাওয়া এই রুটটি রোগীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ লঞ্চের মধ্যে নেই কোন ডাক্তার বা অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। আমরা সাধারণত উন্নত চিকিৎসার জন্য হাতিয়ার বাইরে যাওয়া রোগীদের এই রুটটি ব্যবহার না করতে বলে থাকি। কিন্তু নদী উত্তাল থাকলে নলচিরা- চেয়ারম্যানঘাট রুট ব্যবহার করা যায় না। বাধ্য হয়ে রোগীদেরকে তমরদ্দি ঘাট থেকে ঢাকার লঞ্চে উঠতে হয়।

ঢাকা-হাতিয়া রুটে চলাচলকারী লঞ্চ এমভি ফারহান-৩ এর মাস্টার মো. বজলুর রহমান আরটিভি নিউজকে জানান, লঞ্চের মধ্যে জীবনরক্ষা সরঞ্জামের মধ্যে লাইফ বয়া, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, কিছু প্যারাসিটামল আর বমির ট্যাবলেট ও একটি ফাস্ট এইড বক্স ছাড়া কিছুই নেই। হাতিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর লঞ্চে থাকা কোন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে তীরে নামিয়ে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। তবে চাঁদপুর পাড় হয়ে গেলে তাও সম্ভব হয় না। কারণ গভীর রাতে তখন ঘাট দেয়ার মতো পথে কোন জায়গা নেই।

তিনি আরও বলেন, শুধু যাত্রীরা নয়, লঞ্চের স্টাফরাও মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

এ বিষয়ে হাতিয়া-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ‘ফেয়ারী শিপিং লাইন্স লিমিডেট’ এর তত্ত্বাবধানে চলা এম ভি তাসরিফ লঞ্চের মালিক হাফেজ ইব্রাহীম আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো। মেডিকেল টিম হয়তো দেয়া যাবে না। তবে প্রতিটি লঞ্চে দুটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়ার চেষ্টা করবো।

জিএম/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সমঝোতার আবহে ১৭ ঘণ্টায় কেএনএফের তিন ডাকাতি
X
Fresh