• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

সরেজমিনে ঈদের আগের দিন

মিরপুর থেকে সদরঘাট ১০০, মাওয়া ৩০০

  ২০ জুলাই ২০২১, ১০:৩৭
On the spot the day before Eid, Transport anarchy is going on by charging extra fare ignoring the hygiene rules
প্রাণঘাতি করোনা সংক্রমণের মধ্যেও এভাবে গন্তব্যের দিকে ছুটছে সাধারণ মানুষ, ছবি: আরটিভি নিউজ

রাজধানীর মিরপুর থেকে সদরঘাট কিংবা যাত্রাবাড়ীর ভাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৩০ টাকা। করোনাকালে ৬০ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ভাড়া আসে (১৮ টাকা যুক্ত করে) ৪৮ টাকা। কিন্তু ঈদের আগের দিন মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী ও সদরঘাটগামী যাত্রীদের খাজাবাবা ও বিহঙ্গ পরিবহনে ভাড়া গুণতে হয়েছে ১০০ টাকা করে।

অপরদিকে মিরপুর থেকে মাওয়া ঘাটের ভাড়া ১০০ টাকা হলেও আজ রাখা হয়েছে তার তিনগুণ ৩০০ টাকা করে। কিন্তু সেসব বাসে যেমন ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই তেমনি সিটির গাড়ি রুট পারমিটের তোয়াক্কা না করে মাওয়াগামী যাত্রীদের নিয়ে ছুটেছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মিরপুর থেকে আজিমপুর রুটে চলাচলকারী সেফটি পরিবহনকে যাত্রীদের নিয়ে মাওয়া যেতে দেখা যায়। শুধু সেফটি পরিবহনই নয়, মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বিকল্প অটো সার্ভিস, সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনকেও মাওয়া যেতে দেখা যায়।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মিরপুর ১০, কাজীপাড়া-শেওড়াপাড়ায় এ চিত্র দেখা গেছে। এমনকি কেউ নির্ধারিত রুটের গাড়িতে ফার্মগেট কিংবা কারওয়ান বাজারে নামলে তাকেও ১০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। তাই সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন সংকটের কারণে অফিসগামী যাত্রীদের ভোগান্তিতে পরতে হয়েছে।

লাফিয়ে লাফিয়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও শহর ছেড়ে গ্রামে এবং গ্রাম ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে যাতায়াত অব্যাহত রাখছেন সাধারণ মানুষ। এমন সুযোগে অনৈতিক সুবিধা লুটছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। পরিস্থিতির মুখোমুখী হওয়া যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া।

অপরদিকে দেশের হাইওয়েগুলোতে ব্যাপক যানজট রয়েছে, যার প্রভাব রাজধানী ঢাকা শহরের সড়কগুলোতেও এসে পড়ছে। কেবল তা’ই নয়, সিংহভাগ যানবাহনে স্বাস্থ্যবিধি উপক্ষিত থাকতে দেখা গেছে। একই চিত্র নৌ ও রেল পথেও। যাত্রীদের কারও মুখে মাস্ক নেই, কারওবা সামাজিক দূরুত্বের বালাই নেই। করোনার কারণে দুই সিটে এক যাত্রী বহনে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও সেটিও মানা হচ্ছে না।

সদরঘাটগামী বিহঙ্গ পরিবহনের একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা। আর মিরপুর থেকে মাওয়া পর্যন্ত ভাড়া রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা। এমন করেই বিভিন্ন রুটে অনৈতিক সুবিধা লুটছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা।

ঈদকে কেন্দ্র করে অবাধ যাতায়াতের এমন চিত্র করোনা পূর্ববর্তী বছরগুলোতে স্বাভাবিক ছিলো। তবে করোনার চলমান প্রাদুর্ভাবের সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত রোজার ঈদে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে দূরপাল্লার গণপরিবহণ বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত করতে পারেনি। কিন্তু আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দূরপাল্লার গণপরিবহনে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। যে কারণে ঈদ পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজধানীর ঢাকার বাসিন্দা ইশরাত জাহান বৃষ্টির সঙ্গে কথা হয় আরটিভি নিউজের। তিনি গাবতলী বাস টার্মিনালে দূরপাল্লার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি পরিবার নিয়ে যশোরের চৌগাছায় নিজের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ইশরাত জাহান বৃষ্টি বলেন, ‘রোজার ঈদে বাস-ট্রেন সব বন্ধ ছিল, যে কারণে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে পারি নাই। ঈদের সময়টাতেই আমাদের সবার সাথে সবার দেখা হয়। তাই কোরবানির ঈদে মিস করবো না। তাছাড়া বাড়িতে বাবা-মাও চিন্তা করছে। তবে করোনার আগে যে আনন্দ নিয়ে আমরা ঈদে বাড়ি যেতাম, এখন সেখানে ভর করেছে উদ্বেগ। গণপরিবহনগুলোয় আদৌ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, সুস্থ অবস্থায় পরিবার নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন কিনা, এমন দুশ্চিন্তা মনের মধ্যে বারবারই ঘুপাক খাচ্ছে।

আরেক যাত্রী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার সাথে স্ত্রী ও ছোট দুই বাচ্চা আছে, বাড়িতে আছে বাবা-মা, তাদের কেউ যদি আক্রান্ত হয়! আমিও তো ভাইরাস বহন করতে পারি। আর এবারে অনেক মানুষকে বাড়ি যেতে দেখছি। বাসে কিংবা ফেরিতে কতোটা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হবে বুঝতে পারছি না।’

এক হিসেবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কপথ ও রেলপথে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যান। বাংলাদেশে যা বছরের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ চলাচল।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে এগিয়ে রয়েছে দেশেরে জেলা শহরগুলো ও গ্রামাঞ্চল। এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে- ওইসব এলাকা থেকে করোনায় সংক্রমিত হয়ে যাত্রীরা রাজধানী ঢাকায় ফিরে মহামারিটির মাত্রা আরও কয়েকগুন ছড়িয়ে দিবে।

যে মুহূর্তে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, সে পরিস্থিতিতে একসঙ্গে এতো মানুষের চলাচল নিঃসন্দেহে দেশব্যাপী ভাইরাসটির সংক্রমণ অনেক বেশি ছড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শারমিন ইয়াসমিন।

তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও আমরা দেখেছি বিচ্ছিন্নভাবে সড়ক ও নৌপথে মানুষ কিভাবে গাদাগাদি করে চলাচল করেছে। কেউ কোন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেনি। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এবারও ওইরকম হওয়া শঙ্কা রয়েছে।’

ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের চাইতে এবারের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও নাজুক থাকায় ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি বলেই তিনি মনে করছেন। এমন অবস্থায় এবারের ঈদেও গণ চলাচলে লাগাম টানার পরামর্শ দেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘যতো টেস্ট হচ্ছে, ততোই করোনা পজিটিভ ফলাফল আসছে। যদি মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে ঈদ-পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। সীমিত পরিসরেও যদি চলে সেখানে গণপরিবহনগুলো কতোটা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে পারবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

কেএফ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh