ত্রিমুখী ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে হত্যা
দেড় মাস পর আংটি-ঘড়ি-ব্রেসলেট দেখে নাসরিনের ম'রদেহ চিনলেন স্বজনরা
ত্রিমুখী ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জেরে গা শিউরে উঠার মতো এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একাধিক অবৈধ সম্পর্ক থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত। যে কারণে হত্যার শিকার হন নাসরিন সুলতানা নামের এক নারী। অপহরণ মামলার তদন্তে নেমে খুনের লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসে পুলিশের তদন্তে। ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর আংটি, ঘড়ি ও ব্রেসলেট দেখে ওই নারীর মরদেহ সনাক্ত করেন স্বজনরা। অপহরণে সন্দেহ ছিল যার দিকে, তদন্তে বেরিয়ে এলো তিনিই খুনি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে পঞ্চাশোর্ধ্ব আবদুল হাই স্বীকার করেন, ত্রিমুখী সম্পর্কের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (৯ জুলাই) এসব তথ্য জানা যায়।
পুলিশ জানতে পারে, স্বামীর সাথে নাসরিন সম্পর্কের ইতি টেনেছিলেন কয়েক বছর আগে। নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর কদমতলী থানার গোয়ালবাড়ি এলাকায়। পূর্ব পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী আবদুল হাইয়ের সাথে ছিলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। চলতি বছরের গত ১৮ মে সন্ধ্যার আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান নাসরিন সুলতানা, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে। বের হওয়ার পর থেকেই ছিলেন নিখোঁজ।
(সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে- সন্ধ্যার কিছু সময় আগে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন নাসরিন সুলতানা)
বেরিয়ে যাওয়ার পর, সন্ধ্যার দিকে নাসরিন ফোন করেন নিচতলায় থাকা প্রতিবেশীকে। অনুরোধ করেন- মেয়েকে খাবার পৌঁছে দিতে। মেয়ে নাবিলাকেও ফোন করে জানান, আসতে দেরি হবে। মেয়ে নাবিলা তখনই মায়ের গলায় অস্বাভাবিকতা টের পান।
নাবিলা বলেন, ‘ওইদিন ফোন করে আমার মা বলেন- তোমার হাই মামা আমাকে জুস খাওয়াইছে, আমার মাথা ঘুরতেছে। যখনই জুসের কথা বলেছে, তখনই আমার আমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক লেগেছিলো।’
কিন্তু পরদিন সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে আবদুল হাই মামলা করতে নিরুৎসাহিত করেন। যে কারণে মামলা করার আগ্রহ থেকে সরে দাঁড়ান পরিবারের সদস্যরাও।
এক পর্যায়ে নিখোঁজের সপ্তাহ খানেক পর অপহরণ মামলা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই আসে, আব্দুল হাইয়ের নাম। নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর, চালকসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে চালক স্বীকার করেন, সেদিন গাড়ির ভেতরেই গলা টিপে নাসরিনকে হত্যা করেন, আব্দুল হাই। দড়ি দিয়ে বাটখারা বেঁধে কাঞ্চন ব্রিজ থেকে লাশ ফেলে দেন শীতলক্ষ্যা নদীতে।
(হত্যার শিকার নাসরিন সুলতানা)
আবদুল হাইও স্বীকার করেন নিজ হাতে খুনের কথা। পরে জানা যায়, ঘটনার ৩ দিন পর রূপগঞ্জ থানা পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসাবে যে মরদেহ উদ্ধার করেছিলো সেটিই নাসরিনের। ঘড়ি, ব্রেসলেট এবং আংটি দেখে সেটি শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরাও।
এই হত্যার বিষয়ে আবদুল হাই আর তার চালক দু’জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি এখন অপহরণ থেকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হলো।
গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল হাইয়ের স্বীকারোক্তির কথা উল্লেখ করে ডিএমপি’র ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আব্দুল হাইকে তার ড্রাইভারসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর আব্দুল হাই স্বীকার করে যে- সে তাকে (নাসরিনকে) মেরে ফেলেছে। নাসরিন সুলতানা আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে ‘কমিটমেন্ট’ করেছিলো যে- সে হাইকে ছাড়া অন্য কারো সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াবে না। কিন্তু, সেই ‘কমিটমেন্ট ব্রেক’ করে সে একাধিক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে আব্দুল হাই নাসরিনকে হত্যা করে।’
(গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল হাই)
ডিসি আরও বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের পর নাসরিনের মরদেহটি অজ্ঞাত ছিলো। যে কারণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহটি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে। পরে তারাই সেটি দাফনের ব্যবস্থা করে।
(কদমতলীর গোয়ালবাড়ি এলাকায় যে ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নাসরিন সুলতানা)
কেএফ
মন্তব্য করুন