• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাড়ছে বাল্যবিয়ে ও শিশু শ্রম, অনলাইন গেম এ আসক্ত শিক্ষার্থীরা

কামাল হোসেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ০৮ জুলাই ২০২১, ১২:৩০
বাড়ছে বাল্যবিয়ে ও শিশু শ্রম, অনলাইন গেইমসে আসক্ত শিক্ষার্থীরা
বাড়ছে বাল্যবিয়ে ও শিশু শ্রম

করোনায় বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বচ্ছল সংসারে হঠাৎ করেই অভাবের কালো মেঘ। আর্থিক কষ্টে পরিবার। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। বিষয়টি টের পেলেন অষ্টম শ্রেণিতে পা রাখা মেয়ে দ্বীপা। বাবা অখিল চন্দ্র পাটি শিল্পের কাজ করেন। আগে থেকেই পাটি বুননের কাজ কিছুটা শেখা ছিল দ্বীপার। তাইতো সংসারের অভাব দূর করতে কোমল হাতে তুলে নিলেন বেতের নেইল।

এদিকে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ। তার বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক মাস ধরে তিনি খেয়াল করছিলেন শার্টের পকেট থেকে টাকা খোয়া যাচ্ছে। শুরুতে বিষয়টি আমলে না নিলেও যেদিন সাড়ে ৯ হাজার টাকা খোয়া যায় সেদিন ঠিকই টনক নড়ে। ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে ৯ হাজারের ৪ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে অনলাইন গেমস ফ্রি ফায়ার খেলে।

দিনমজুর বাবার মেয়ে অনিতা। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। ওর স্কুলের শিক্ষকরা জানান, অনিতাসহ তার ক্লাসের কয়েক বান্ধবী মিলে শপথ করেছিল কখনো বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। লেখাপড়া করে বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছে ছিল তাদের। অন্যদিকে লেখাপড়া চলবে, এ শর্ত দিয়েই নাকি মেয়েকে তুলে নিয়েছেন বর পক্ষ। জানালেন অনিতার বাবা আজমত আলী। দ্বীপা, সাজ্জাদ ও অনিতাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভিন্ন ভিন্ন গ্রামে।

করোনা মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি নির্দেশনায় চালু রয়েছে অনলাইন ক্লাস। কষ্ট হলেও লেখাপড়া ঠিক রাখার জন্য অনেক অভিভাবক সন্তানকে কিনে দিয়েছেন স্মার্ট-ফোন। এ সুযোগে অনলাইন ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা আসক্ত হচ্ছে অনলাইন গেইমসে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজের বারান্দা, গাছতলা ও খোলা স্থানে ১০ থেকে ১২ জন গ্রুপ করে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। তারা মাঝে মাঝে আবার একা একা কী যেন বলে? এদের প্রত্যেকেই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গেইমস খেলার এ আড্ডা চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এ গেইমস খেলতে গেলে ডায়মন্ড কিনতে হয়। ৫শ ডায়মন্ডের দাম সাড়ে ৩শ টাকা। খেলার একটি অংশ টপ-আপ। এর পেছনে অনেক খরচ হয়। অনেকেই আছে যারা প্রতিদিনই এই টপ-আপ করে থাকে।

উপজেলার হাজিপাড়া ফুলমালিরচালা গ্রামের আয়শা বেগম আরটিভি নিউজকে জানান, তার ছেলে রিফাতের হাতে সব সময় মোবাইল থাকে ছেলে কি করে তা তিনি বুঝেন না।

একই গ্রামের আমির আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, এর আগে প্রশাসন থেকে চাপ দিয়ে গেইমস খেলা বন্ধ করা হয়েছিল। আবারও বন্ধ করা দরকার। ছেলেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক অভিভাবক। সংসারের হাল ধরতে অনেক শিক্ষার্থী রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার মাসিক বা দিনমজুর হিসেবে গরু বা মুরগির ফার্মে কাজ করছেন। আবার বন্ধের এই দেড় বছরে অনেক ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন।

আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা আরটিভি নিউজকে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে ঝরে পড়বে বহু শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে অনেকে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে।

উপজেলার মমরেজ গলগন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ আরটিভি নিউজকে বলেন, বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তেমন সম্পর্ক নেই। অনলাইনে ক্লাসও তারা দেখে না। এমবি কেনার নামে টাকা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা পাবজি ও ফ্রি ফায়ার নামক গেইমস খেলায় মশগুল থাকে। করোনার এই বন্ধে শতকরা প্রায় ২০ জন ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। অনলাইন ক্লাস উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।

একই কথা বললেন কুঁড়িপাড়া গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের তেমন সারা নেই। প্রতি শ্রেণিতে ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস দেখে থাকে।

এবিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার এই সময় সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে জুম মিটিং করা হচ্ছে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

অনলাইনে গেইমস খেলে বিপথে যাওয়াকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে উল্লেখ করে ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার আরটিভি নিউজকে বলেন, এটি রোধ করতে সমাজ ও পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে।

জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh