• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

আমতলীর সাতটি সেতু এখন মরণ ফাঁদ

বরগুনা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৯ জুন ২০২১, ১৭:৪১
আমতলীর সাতটি সেতু এখন মরণ ফাঁদ
আমতলীর সাতটি সেতু এখন মরণ ফাঁদ

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় আমতলী উপজেলার ১৯ গ্রামের সংযোগ স্থাপনকারী ৭টি লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি সেতুর মাঝের ঢালাই ধসে গর্ত হয়ে গেছে। দুটি সেতু আকষ্মিক দেবে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে ১৭টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে তাদের ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই।

২০১১ সালে চাওড়া খালের হলদিয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও চন্দ্রা গ্রামের মাঝখানে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি লোহার সেতু নির্মাণ করে। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন হলদিয়া, গুরুদল, উত্তর তক্তাবুনিয়া, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার লোক বিভিন্ন কাজে আমতলী শহরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে। তাছাড়া চন্দ্রা গ্রামের লোকজনও এই সেতু ব্যবহার করে হলদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত করে। সেতুটি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে সেতুটির মাঝ বরাবর দুই জায়গায় ১০-১২ ফুট ঢালাই ধসে গর্ত হয়ে রড বেড়িয়ে গেছে। এতে মানুষ কোনরকম পারাপার করতে পারলেও যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সেতুটি বর্তমানে এতই নড়বড়ে যে সেতুর উপর কোন মানুষ উঠলে দুলতে থাকে। তাই সেতুটি যে কোন সময় ধসে হলদিয়া, চাওড়া এবং আমতলীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।

হলদিয়া গ্রামের শানু মোল্লা জানান, ‘সেতুর মধ্য খান দিয়ে সিমেন্টের ঢালাই পইর্যার যাওয়ায় এহন আর যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এই সেতু ভাইংগ্যা যাওয়ায় বহু কষ্ট কইর্যাা মোগো ধান-চাউল আডে (হাটে) নিতে অয়। এতে মোগো খরচ অনেক বাইর্যা গ্যাছে।’ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় গর্ভবতী নারী কিংবা মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে পড়তে হয় মহাবিপাকে। তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তাদের বাড়িতে বসেই মৃত্যুর প্রহর গুণতে হয়।

চাওড়া খালের রাঢ়ী বাড়ির সামনে এবং পূর্বচন্দ্র গ্রামের মাঝখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ একই সময়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ করে। ওই সেতুটিও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির মাঝ বরাবর গত বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ঢালাই ধসে বড় কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সেতু মেরামত করলেও পুনরায় আবার ধসে পড়ে। এই সেতু পার হয়ে প্রতিদিন উত্তর তক্তাবুনিয়া, পূর্ব চন্দ্রা, লক্ষী গ্রামের কয়েক হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। সেতুটি নড়বড়ে হওয়ায় বর্তমানে সব ধরনের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সব গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের রামেশ্বর জানান, ‘ব্রিজটা ভাইংগ্যা যাওয়ায় মোগো এহন অনেক কষ্ট কইর্যান চলাচল করতে হয়।’

চাওড়া খালের চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমি এবং কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এবং আমতলী সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের শামিম মালাকারের বাড়ির সামনের লোহার সেতুটি মে মাসের মাঝামাঝি সময় ১০-১২ ফুট ঢালাই আকস্মিকভাবে দেবে যায়। এরপর থেকে ওই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ফলে অনেক পথঘুরে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করতে হয় এলাকাবাসীদের। এই সেতুটি দেবে যাওয়ায় চাড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া, চলাভাঙ্গা, আমতলী ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা এবং পূর্ব মহিষডাঙ্গা গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। স্থানীয় বসিন্দা আবলু কালাম মিস্ত্রী জানান, ‘সেতটিু ডাইব্যা যাওয়ায় মোরা অনেক ভোগান্তিতে আছি। মোরা এহন এক পার গোনে আরেক পার যাইতে পারি না।’

চাওড়া ইউনিয়নের লোদা গ্রামের লোদা খালের হাফেজিয়া মাদরাসা সংলগ্ন সেতুটিরও বেহাল দশা। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমদিকে সেতুর মাঝ বরাবর সিমেন্টের ঢালাই ধসে পরে গর্তের সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে ওই সেতু দিয়ে মানুষ কোন রকম চলাচল করলেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

একই খালের ১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লোদা সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটির অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ। বছর খানেক আগে সেতুটি মাঝ খান দিয়ে প্রায় ৮-১০ ফুট ধসে পরে বিশাল আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়। ঢালাই ধসে লোহার রড বেড়িয়ে পরে, রেলিংও খসে পড়েছে। যে কোনও সময় ধসে পড়তে পারে পুরো সেতু। স্থানীয় শিক্ষক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, অনেক ভয়ের মধ্যে দিয়ে সেতু পার হই। সেতুটি যে কোন সময় ধসে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে।

আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালের মুছুল্লি বাড়ি সংলগ্ন সেতুটি চলতি মাসের ৮ জুন মঙ্গলবার সকালে দেবে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার হাজারো মানুষ। ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর খালে মুছুল্লি বাড়ির সংলগ্ন স্থানে লোহার সেতুটি নির্মাণ করে। ওই সময় ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করায় দুই বছরের মাথায় সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে সেতুটির একটি অংশ দেবে যায়। গত ৯ বছর ধরে দেবে যাওয়া সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের ৮ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। মঙ্গলবার সকালে সোনাখালী পাড় থেকে মাঝখানের ৪টি পিলারসহ সেতুটি দেবে পানির সঙ্গে মিশে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান, ‘সেতুটি দেবে যাওয়ায় ৮ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা গ্রামের চারের খালের সেতুটিরও বেহাল দশা। লোহার এই সেতুটির মাঝ বরাবর অংশ ১০-১২ ফুট ধসে পড়ে। ২ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটিকে আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে পশ্চিম চিলা, চিলাসহ ৪ গ্রামের প্রায় ২ হাজার মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা বিরাজ কুমার বিশ্বাস জানান, সেতুটি সংস্কার না করায় কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফলে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীদের পরিবহনে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘উল্লেখিত ৭টি লোহার সেতুর স্থলে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। এজন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
এমএন/পি


মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বরগুনার আমতলী পৌরসভায় নির্বাচন শনিবার
কলাগাছ ও বাঁশের তৈরি শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধা
X
Fresh