প্রেম পরবর্তী মেডিকেল ছাত্রীর কাছে অন্য কিছু চাওয়ায় পুলিশি অ্যাকশন
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্রীকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি কুমিল্লা জেলার। যা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়েছে খোদ পুলিশ সদর দপ্তরের। আন্তরিকতার সাথে মানবিক কারণেই মেডিকেল কলেজের ওই ছাত্রী পাশে দাঁড়াতে হয়েছে পুলিশকে। আজ শুক্রবার (১১ জুন) আরটিভি নিউজকে সংশ্লিষ্ট ঘটনার প্রকাশযোগ্য তথ্য জানায় পুলিশ সদর দপ্তর।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের কাছে একটি মেসেজ লিখে পাঠিয়েছিলেন ওই মেডিকেল ছাত্রী। তার পাঠানো মেসেজের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপে যায় কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানা পুলিশ। আরটিভি নিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের এআইজি মো. সোহেল রানা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ওই ছাত্রী পুলিশ সদর দপ্তর বরাবর যে মেসেজ পাঠিয়েছেন, তা হলো- একটি ছেলে তাকে ভীষন জ্বালাতন করছে। তার সাথে এক সময় ওই ছেলেটির পরিচয় ও সম্পর্ক ছিল। একটি কোচিং সেন্টারে পরিচয় হয়েছিলো তাদের। সেই থেকে একটা সম্পর্কও তৈরি হয়। কিন্তু, সম্পর্কের কিছু দিনের মধ্যেই ওই ছাত্রীটি ছেলেটির মধ্যে কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করে। এর মধ্যেই ছেলেটি ওই ছাত্রীটির সাথে প্রেম পরবর্তী শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে চাপ দিচ্ছিলো অনবরত।
পরিস্থিতিতে মেয়েটির লেখাপড়াতেও ব্যাঘাত ঘটছিলো। কিন্তু, মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন। অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন তাকে তার বাবা-মা। তাদের স্বপ্ন কোনো মতেই নষ্ট করতে দিতে চায় না সে। তাই, সে সিদ্ধান্ত নেয়, ছেলেটির সাথে সম্পর্ক আর চালাবে না, ব্রেকআপ করে দিবে।
কিন্তু ছেলেটি তার সাথে সম্পর্ক রাখতে মেয়েটিকে বাধ্য করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। তার কথায় মেয়েটি রাজি না হওয়ায় মেয়েটিকে নানাভাবে বিরক্ত করা শুরু করে ছেলেটি। এক পর্যায়ে মেয়েটির নামে বিভিন্ন ফেইক একাউন্ট খুলে সেখানে তার ছবি দিয়ে মেয়েটিকে নাজেহাল করতে শুরু করে সে। ক্রমেই পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটতে থাকে মেয়েটির। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। এক পর্যায়ে আইনি সহযোগিতা চেয়ে নানা জায়গায় লিখে মেয়েটি। এর ফলে, ছেলেটি আরো হিংস্র হয়ে ওঠে। নিরন্তর তাকে নোংরা এসএমএস পাঠিয়ে ও ফোন করে হুমকি দিতে থাকে। লোকটির পরিবারের কাছে বিচার দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। এই অবস্থা থেকে মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না মেয়েটি।
এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের কথা জানতে পারে মেয়েটি। এখানে লিখে তার বিপদের কথা জানিয়ে সে সহযোগিতা চায়। তবে, সে উল্লেখ করে কোনো প্রকার মামলায় সে জড়াতে চায় না। বার্তা পেয়ে মিডিয়া উইং তাৎক্ষনিকভাবে মেয়েটির পাশে দাঁড়ায়। তাকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ছেলেটির বর্তমান এলাকায় থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে, কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ইকবাল বাহার মজুমদার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মেয়েটির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন। লোকটির অভিভাবকদের উপস্থিতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় দুষ্টু ছেলেটার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হয়। পুলিশি সহযোগিতা পেয়ে মেডিক্যাল ছাত্রী মেয়েটি বাংলাদেশ পুলিশকে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগের ক্ষেত্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তা অত্যন্ত আশীর্বাদপুষ্ট উল্লেখ করে মেয়েটি লিখেছে, ‘সৃষ্টিকর্তা অনেক পরিকল্পনা করে কিছু মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান তার অন্য সকল সৃষ্টির পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এ রকম ভাগ্য নিয়ে সবাই পৃথিবীতে আসতে পারেন না.....।”
-
আরও পড়ুন... ভিসি কলিমউল্লাহ’র ভিডিও ভাইরাল
উল্লেখ্য, ভূক্তভোগী মেয়েটির অনুরোধে উভয়পক্ষের নাম পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থেকেছে। যে কারণে এই প্রতিবেদনেও মেয়ে এবং ছেলেটার পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
কেএফ
মন্তব্য করুন