• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

অ’শ্লীল ‘পুল পার্টি’ ও ‘হ্যাংআউট পার্টি’ লোভী তরুণী পাচারের ভ’য়ঙ্কর ফাঁদ

  ০২ জুন ২০২১, ১৬:১৪
Porn 'Pool Party' and 'Hang Out Party' are horrible traps for greedy young women
ফাইল ছবি

সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সূত্র ধরে একের পর এক আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে। আর সেই আসামিদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে লোমহর্ষক যতো ঘটনার বর্ণনা।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর দায়িত্বশীলরা বলছেন, যে তরুণীরা এসব ঘটনার ভিকটিম হন, তারা সাধারণত লোভী প্রকৃতির। তাদের কেউ, টিকটক স্টার হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে প্রলুব্ধ হন, বিদেশে ভালো বেতনে চাকরির অফারে প্রলুব্ধ হন কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ছবি-ভিডিওতে অধিক সংখ্যক লাইক-কমেন্ট পেতে এমন কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন, আবার তাদের কেউ কেউ টাকার লোভে পড়ে এই চক্রের কর্মকাণ্ডে গা ভাসিয়ে দেন।

এ বিষয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরটিভি নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে তরুণী পাচারের ঘটনা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। যেসব হোটেল ও রিসোর্ট ‘পুল পার্টি’ বা ‘হ্যাং আউট পার্টি’ হয়েছে সেগুলোর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন পার্টির নামে অশ্লীল নৃত্য বা মদের আসর না বসতে পারে সে বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় যে তরুণীরা ভুক্তভোগী হন, তারা আমাদের কাছে অভিযোগ করলে দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়া যাওয়া সম্ভব হয়। তাই যারা এমনসব ঘটনার শিকার হয়েছেন তারা যেন আমাদের কাছে অভিযোগ দাখিল করেন।

পাচার হওয়ার পর ভারত থেকে কৌশলে পালিয়ে আসা এক তরুণীর বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ভারতে পাচারকৃত তরুণীর সঙ্গে ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে বর্তমানে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া টিকটক হৃদয় বাবুর পরিচয় ঘটে। টিকটক স্টার বানাতে চেয়ে ও ভালো বেতনের চাকরির অফার দিয়ে ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে হৃদয় বাবু। এরপরই ওই তরুণী হৃদয় বাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জের ‘অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ড পার্কে’ ৭০ থেকে ৮০ জন তরুণ-তরুণী নিয়ে টিকটক ‘হ্যাংআউট পার্টি’ এবং ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের ‘আফরিন গার্ডেন রিসোর্টে’ ৭০০ থেকে ৮০০ জন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে ‘পুল পার্টির’ আয়োজন করে হৃদয় বাবু। এরপরই ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত ‘টিকটিক হ্যাংআউট পার্টিতে’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় এই মানব পাচারকারী চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় কৌশলে ভিকটিমকে ভারতে পাচার করে দেয় টিকটক হৃদয় বাবু।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগ) মো. শহীদুল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেন, পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পরার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত ওই তরুণীর লোমহর্ষক করুণ কাহিনী কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। ভারতে পাচারের পর তরুণীকে ‘ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর’ এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। এ সময় ভারতে অবস্থানকালে হাতিরঝিল থানার অভিযোগকারী ভিকটিম এ চক্রের দ্বারা পাচারকৃত আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ভিকটিমকে সেখানে দেখতে পান, যাদেরকে ‘সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন’ দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে।

ব্যাঙ্গালুরুতে পৌছার কয়েকদিন পরই ভিকটিমকে ‘চেন্নাইয়ের OYO HOTEL’ এ ১০ দিনের জন্য পাঠানো হয়। অমানবিক শারীরিক ও বিকৃত যৌন নির্যাতনে সামান্য দয়া ও করুণাও দেখায়নি চক্রের সদস্যরা। বরং কৌশলে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে কিংবা জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্য ও পরিচিতদের তা পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রাখা হয় ভিকটিমকে। ভারতে পাচারের ৭৭ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভিকটিম জেসমিন মীমের সহযোগিতায় হাতিরঝিল থানায় অভিযোগকারী ভিকটিমসহ আরো ২ জন বাংলাদেশি ভিকটিম এ চক্রের ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থিত আস্তানা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ আসতে সক্ষম হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতে বেঙ্গালুরুতে এক তরুণীকে পৈচাশিক নির্যাতনের ভয়ঙ্কর ভিডিও ভাইরালের পর টিকটক হৃদয় বাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলা তদন্তে নেমে সংশ্লিষ্ট তরুণীর সন্ধান পায় পুলিশ। পরে এই তরুণী গতকাল রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধে ও দমন আইনে মামলা দায়ের করে।

মামলা রুজুর পর তরুণী পাচার চক্রের ৩ জনকে গ্রেপ্তার পরবর্তী পুলিশ জানায়, তরুণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পরবর্তী রিসোর্টে হ্যাংআউট পার্টি করে ভারতে পাচার করতো চক্রটি। ওই চক্রের অখিল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের পুলিশ। চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীর সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব তৈরি করে। পরে দেশের বিভিন্ন রিসোর্টে হ্যাংআউট পার্টি ও পুলি পার্টির আয়োজন পরবর্তী সময়ে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়।

ভারতে পাচার হওয়া এক তরুণী ৩ মাসের নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। পাচারে জড়িত ৩ জন আসামিকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়ে। তাদের একজন ১০০০ এর বেশি নারী পাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন! এই মামলার এজাহারনামীয় ১২ জন আসামিদের মধ্যে ৫ জন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে ভিকটিমকে পাচারের ব্যবহৃত ২টি মোটরসাইকেল, ১টি ডায়রি, ৪টি মোবাইল ফোন ও ১টি ভারতীয় সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মেহেদী হাসান বাবু (৩৫) মামলার ভিকটিমসহ ১ হাজারের বেশি নারী পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। সে প্রায় ৭-৮ বছর ধরে মানবপাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল ও ডায়রিতে হৃদয় বাবু, সাগর, সবুজ, ডালিম ও রুবেলের ভারতীয় মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ডায়রিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনার ভিকটিম জেসমিন মীমের আধার নম্বর ও ভারতে পাচারকৃত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভিকটিমের নাম ও মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তারকৃত অপর দুই আসামি মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের আলোচ্য ভিকটিমসহ পাঁচশতাধিক ভিকটিমকে সীমান্তবর্তী এলাকায় পাচারের কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মিত কক্ষে অবস্থানে সহায়তার পাশাপাশি মোটরসাইকেলযোগে সীমান্তের শেষ প্রান্তে ভারতীয় দালালের হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

কেএফ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রবাসীর স্ত্রীকে টার্গেট করে প্রতারণা, হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা
মেলায় জাদু খেলার নামে অশ্লীল নৃত্য, আটক ৫  
ধনবাড়ীতে মেলাকে কেন্দ্র করে চলছে অশ্লীল নৃত্য
রমজানেও চলছে অশ্লীল সিনেমা  
X
Fresh