• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাংলাদেশে নতুন মা'দক ‘এলএসডি’ কতোটা ভ'য়ঙ্কর

  ২৭ মে ২০২১, ২০:৫৫
How terrible is the new drug 'LSD' in Bangladesh
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে এক নতুন মাদকের সন্ধান মিলেছে। যার নাম ‘এলএসডি’ বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে নেমে নতুন এই ভয়ঙ্কর মাদকের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এলএসডি এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করে। এটা সাধারণত জিভের নিচে রেখে সেবন করা হয়, আবার ইনজেকশানের মাধ্যমেও সেবন করা যায়।

২৫ বছর বয়সী সাদমান সাকিব রুপল। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী। এই মেধাবী সাদমান আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’তে পড়াশোনা করতো, পরে অনিয়ম ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। গোয়েন্দারা প্রযুক্তি মাধ্যম ব্যবহার করে অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পেরেছে, এই সাদমানই বাংলাদেশ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপ এ যোগাযোগ করে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ করে নেদারল্যান্ডসের এক ব্যক্তির কাছ থেকে পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে নতুন মাদক ‘এলএসডি’ দেশে আনতেন।

পরে তার আরও দুই বন্ধু, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) আরেক ছাত্র আশাব ওয়াদুদ তুর্য (২২) এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) ছাত্র আদিব আশরাফ (২৩) এর মাধ্যমে ‘এলএসডি’ বিক্রি করতেন। এই বিক্রির জন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘আপনার আব্বা’ এবং ‘বেটার ব্রাউনি এন্ড বেয়ন্ড’ নামে দু’টি ক্লোজ গ্রুপ খুলেন। ওই দুই গ্রুপে হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে। এভাবেই তারা বাংলাদেশে নতুন মাদকটি ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।

এলএসডি কী?

লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড সাধারণত এলএসডি বা অ্যাসিড হিসেবে পরিচিত। এটি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ। এটি লাইজারিক অ্যাসিড থেকে তৈরি, ছত্রাক থেকে উদ্ভূত যা রশ্মি এবং অন্যান্য শস্যের উপরে বৃদ্ধি পায়। এলএসডি সাধারণত ছোট ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা তরল আকারে বিক্রি হয়। তরল এলএসডি সাধারণত ব্লটার কাগজের মধ্যে যুক্ত করা হয় এবং ওই কাগজের মধ্যেই আলাদা আলাদাভাবে সেবনের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়। বেশিরভাগ এলএসডি সেবনকারীরা এটি মুখ দিয়ে সেবন করেন। তবে এটি ইনজেকশন বা ড্রপ আকারে চোখ দিয়েও সেবন করা যায়।

এলএসডি ব্যবহারের ঝুঁকিগুলো কী কী?

এলএসডি ব্যবহারের জন্য শারীরিক এবং মানসিক উভয় ঝুঁকি রয়েছে। এলএসডি গ্রহণের পর সেবনকারী অদ্ভুত আচরণ করতে পারে, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, নিজের উপর বা অন্যের উপর শারীরিক আঘাত করতে পারে।

এলএসডি ব্যবহারে খুব অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। ব্যবহারকারী আতঙ্কজনক চিন্তাভাবনা করতে পারে, নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে, তার মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা বা মৃত্যুর ভয় দেখা দিতে পারে, এমনকি তীব্র হতাশাও লক্ষ্য করা যেতে পারে। এছাড়াও তার মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এলএসডি ব্যবহারে উল্লেখিত ঝুঁকিগুলো এটি সেবনের এক বছর পরও পুনরায় হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে।

গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, এলএসডি গ্রহণের ফলে দুর্বল ব্যক্তিদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার সূত্রপাত ত্বরান্বিত হতে পারে। এছাড়া যাদের সিজোফ্রেনিয়া বিকাশের ক্ষেত্রে জিনগত প্রবণতা রয়েছে তাদের ড্রাগের প্রতি বৃহত্তর মানসিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তাই এটি খুবই বিপজ্জনক।

এলএসডি’র সনাক্তের ৩ পদ্ধতি

কোনো ব্যক্তি এলএসডি গ্রহণ করেছেন কিনা সেটি ৩ টি পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যেতে পারে।

সেগুলো হলো-

প্রস্রাব: এটি ড্রাগ পরীক্ষার সর্বাধিক সাধারণ পদ্ধতি। এলএসডি সর্বশেষ সেবনের ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে প্রস্রাব পরীক্ষা করালে এটি সনাক্ত করা যায়।

রক্ত: এলএসডি সর্বশেষ সেবনের ৬ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করে এটি সনাক্ত করা যাবে।

চুল: একটি চুল পরীক্ষা বলে দিবে ওই ব্যক্তি এলএসডি সেবন করেছে কিনা। সর্বশেষ সেবনের সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে চুল পরীক্ষার মাধ্যমে এটি সনাক্ত করা যাবে।

এলএসডি প্রভাবে দেহে যেমন পরিস্থিতি অনুভব হতে পারে:

১. মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
২. ক্ষুধামন্দা।
৩. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
৪. অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া।
৫. হার্টবিট বেড়ে যাওয়া এবং রক্তচাপ।
৬. শরীর কাঁপা।
৭. বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেলা।
৮. ঘুমের অক্ষমতা।
৯. দৃশ্যমান অর্থাৎ চোখে দেখা হ্যালুসিনেশন।
১০. সংশ্লেষ (‘শ্রবণ’, রঙ বা ‘দেখার’ শব্দ)।
১১. সময়ের উপলব্ধি পরিবর্তন অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে ধীরে গতিতে সময় পার হচ্ছে বলে মনে হওয়া।
১২. যে কোনো অবজেক্টস, গতিবিধি, রং, শব্দ, স্পর্শ এবং শরীরের চিত্রের আকার এবং আকারের বিকৃত বোধ হওয়া।
১৩. কোনো বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যাওয়া।
১৪. দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া।
১৫. সেবনকারী মধ্যে প্রবল আতঙ্ক বিরাজ করা।

এলএসডি’র প্রভাব শরীরে কতক্ষণ থাকে?

এটির প্রভাব শরীরে কতক্ষণ থাকবে তা নির্ভর করে সেবনের মাত্রা এবং গ্রহণ প্রক্রিয়ার উপর।

প্রথমত, যেমন মুখ দিয়ে ১০০ থেকে ২৫০ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি সেবন করলে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে দেহে এর প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। এরপর ১ থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে এটির সর্বোচ্চ প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে, যা ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হবে।

দ্বিতীয়ত, দেহের মাংসপেশিতে ইনজেকশন দিয়ে ১০০ থেকে ২৫০ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি সেবন করলে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে দেহে এর প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। এরপর ১ ঘণ্টার মধ্যেই এটির সর্বোচ্চ প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে, যা ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হবে।

তৃতীয়ত, শিরার মধ্যে ইনজেকশন দিয়ে ৪০ থেকে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি সেবন করলে ৩ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে দেহে এর প্রভাব বিস্তার শুরু হয়। এরপর ১ ঘণ্টার মধ্যেই এটির সর্বোচ্চ প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে, যা ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হবে।

চতুর্থত, ইন্ট্রাস্পাইনাল ইনজেকশন দিয়ে ২০ থেকে ৬০ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি সেবন করলে এক ঘণ্টারও কম সময়ে মধ্যে দেহে এর প্রভাব বিস্তার শুরু হয় এবং ১ ঘণ্টার মধ্যেই এটির সর্বোচ্চ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এটিও ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী হয়।

সূত্র:- অ্যামেরিকান এডিকশন সেন্টার

কেএফ/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবির কোয়ার্টার থেকে ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার
ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা, প্রতিবাদে ঢাবিতে ‘গণইফতার’ কর্মসূচি
ঢাবির ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৬০ জনকে শাস্তি
ঢাবির নতুন উপউপাচার্য সীতেশ চন্দ্র বাছার
X
Fresh