• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

আধুনিক সময়ে এসেও ধ্যান জ্ঞান যখন রেডিও (ভিডিও)

আরিফুল হক সোহাগ, নওগাঁ প্রতিনিধি

  ০৮ মে ২০২১, ২৩:২৩
আধুনিক সময়ে এসেও ধ্যান জ্ঞান যখন রেডিও (ভিডিও)
আধুনিক সময়ে এসেও ধ্যান জ্ঞান যখন রেডিও (ভিডিও)

বর্তমান ডিজিটাল সময়ে শব্দ তরঙ্গের ব্যবহার হাতের মোবাইল ফোন বা নানা প্রকার ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীতে শব্দ তরঙ্গের ব্যবহার রেডিও বা ট্রানজিস্টর নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছিল। অত্যাধুনিকযুগে এসেও নওগাঁর আনোয়ার হোসেন এখনো নিয়মিত রেডিওতে অনুষ্ঠানমালা শুনে থাকেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে সাড়া বিশ্বে রেডিও’র (বেতার) ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন শুরু হয় ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আর বর্তমান সময় এসেও সেই রেডিও বা ট্রানজিস্টরকে সঙ্গী করে বেঁচে আছেন এই রেডিও পাগল মানুষ। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বানিসর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। যিনি কি-না ‘রেডিও আনোয়ার’ নামে সবার কাছে পরিচিত। ১০ বছর বয়সে তার মা তাকে প্রথম রেডিও কিনে দেন। সেই থেকে নিয়মিত রেডিওতে অনুষ্ঠানমালা শুনেন। গত ৪০ বছরে ২৭টি রেডিও ব্যবহার করেছেন তিনি।

এসব রেডিও’র মধ্যে মাত্র ৩টি রেডিও তিনি সংগ্রহ করেছেন দোকান থেকে। বাকী রেডিওগুলো আর্থিক অভাবে এবং সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যবহৃত পুরনো ভাঙারি দোকান অথবা কেউ পুরাতন রেডিও বিক্রি করলে সেখান থেকে সংগ্রহ করেছেন। রেডিও প্রেমী এই মানুষ জানান, মোবাইলে গান শুনতে ভালো লাগে না। আর রেডিওতে গান এবং সংবাদ উভয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা শুনতে পাওয়া যায়। অভাব অনটনের সংসারে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও রেডিওকে কোনো দিন ছাড়েননি এই মানুষ।

তিনি আরও জানান, লোকালয়ে রেডিও শুনতে কারো সমস্যা হলে নিজে এক মনে রেডিও ঘাড়ে করে চলে যান নিরালায়ে। বর্তমানে রেডিওতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজে নিজেই সমাধান করতে পারেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রেডিও ব্যবহার করে যেতে চান বলেও জানান এই রেডিও পাগল মানুষটি।

এদিকে স্বামীর রেডিও নিয়ে সংসারের উদাসীনতায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার পরিচালনা করছেন তার স্ত্রী আমেনা বেগম। একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়ে শাশুড়ি-স্বামী নিয়ে তিন জনের সংসার অনেক কষ্টে কাটে। বলেন, সবসময় রেডিও নিয়ে থাকেন। মাসের মধ্যে ১০ দিন সংসারের কাজ করে যে উপার্জন করেন তা দিয়ে রেডিও মেরামত এবং নিজে খরচ করে শেষ করেন।

রেডিও আনোয়ারের স্ত্রী বলেন, একদিন সংসারে চাল, ডাল, তেল, লবণ কিছুই ছিল না। তিনি কাজ করে ফিরে এসে দেখেন আনোয়ার রেডিও নিয়ে পড়ে আছে। রাগে দুঃখে রেডিও ভেঙে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন। তারপর আনোয়ার বাড়ি থেকে রাগ করে চলে যায়। একমাস পর আনোয়ার ২টা রেডিও কিনে বাড়ি ফিরে। তারপর থেকে রেডিও নিয়ে আর কোনো রাগারাগি হয়নি স্বামীর সঙ্গে। অভাব অনটন ছাড়া রেডিও পাগল এই মানুষকে নিয়ে ভালোই আছেন তিনি। সরকারের দেওয়া ১০টাকা কেজি চাল ছাড়া কিছুই সহায়তা পান না তার পরিবার।

এদিকে আনোয়ারের এমন রেডিও শোনাকে বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন তার এলাকাবাসী। তারা জানান, বর্তমান সময়েও আনোয়ার রেডিওর ব্যবহার ধরে রেখেছেন, এটা সত্যিই বিস্ময়কর। এখনকার ছোট ছেলে-মেয়েরা মোবাইল ফোন ডিভাইসে বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলায় ব্যস্ত থাকেন। এতে করে তাদের চোখের বা মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে থাকে। রেডিও পরিচিতি বা ব্যবহার যদি তারা দেখতে বা শুনতে পায় তবে শিশুরাও ক্ষতিমুক্ত বিনোদন উপভোগ করতে পারবে বলে মনে করেন তারা।

রেডিওর ব্যবহার ধরে রাখার জন্য রেডিও আনোয়ারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ বেতারের নওগাঁ প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট শেখ আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে ডিভাইসগুলো আধুনিক হয়ে যাওয়ার কারণে রেডিও বা ট্রানজিস্টরের ব্যবহার আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে এটিকে যাদুঘরে রাখার মতো অবস্থা। এই শিল্পকে ধরে রাখতে রেডিও আনোয়ারের মতো মানুষের পাশে সবসময় থাকা উচিত।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইলিয়াস খান জানান, আনোয়ার খুব ছোটকাল থেকে রেডিওতে অনুষ্ঠান মালা শুনে আসছেন। এলাকার সবাই তাকে রেডিও আনোয়ার নামেই চেনেন। তার পরিবারকে ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক ১০ টাকা কেজি চাল প্রদান করা হয়েছে। তাকে আগামীতে বিভিন্ন ভাতার আওতায় সুযোগ সুবিধা প্রদানেরও আশ্বাস দেন এই জনপ্রতিনিধি।

রেডিও বা ট্রানজিস্টরের ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে। উনবিংশ শতাব্দীর এই শব্দ তরঙ্গের ব্যবহারের মাধ্যমকে ধরে বেঁচে থাকার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নওগাঁর রেডিও আনোয়ার।

এসআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
খোঁজ মিলল ৩৭০০ বছরের পুরোনো লিপস্টিকের
সার্জারি সম্পন্ন, রেডিওথেরাপি দেওয়া হবে সাবিনা ইয়াসমিনকে
X
Fresh