• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এবার হেফাজত দুই পথেই সমাধান খুঁজছে

  ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৬:০৪
এবার হেফাজত দুই পথেই সমাধান খুঁজছে

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ এবং শাপলা চত্বরে অবস্থান নেওয়া হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকে সরকার কঠোরভাবে দমন করেছিল। কিন্তু এবারের মতো সেবার হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তখন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে চলতি বছরে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র দলটির নেতাকর্মীরা সারা দেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেই তাণ্ডবের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাঁড়ায় হেফাজতের শীর্ঘস্থানীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৩ সালের মতো এবারও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার কৌশল ব্যস্ত দলটির নেতারা।

গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক শর্তে বলেন, এই মুহূর্তে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গ্রেপ্তার হলেও মাঠে আন্দোলনে নামবে না। তারা মামলাগুলো দুটি পন্থায় এগোনোর চেষ্টা করবে। প্রথমটি হচ্ছে- মামলা মোকাবিলার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি আইনি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। তা মামলাগুলোকে সংগঠনের পক্ষ থেকে আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে। দ্বিতীয়টি- উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছেন। এরমধ্যেও এতোদিন হেফাজতের যেসব নেতা সরকার এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। যে কোনো একটি সমাধানে আসতে হবে বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমণ্ডির বাসায় বৈঠক করেন সংগঠনটির নেতারা। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেফাজতের নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীরা হেফাজতের কাছে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে হেফাজতের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদি বলেন, আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না। তারপরও হেফাজতের মহাসচিব হিসেবে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, আমরা একটু কথা বলেছি।

বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মামুনুল হকের ভাই মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আলোচনা হয়েছে, তবে আর কিছু বলার নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠকে অংশ নেওয়া হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদী, মামুনুল হকের ভাই বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), মাওলানা হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়া হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, আর কোনো নেতাকর্মীকে যেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক বা গ্রেপ্তার না করে।

এর মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মোহাম্মদ জুনায়েদ আল হাবীব, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আহমেদ আব্দুল কাদের এবং সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কয়েকজনকে ২০১৩ সালে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

হেফাজতের নায়েবে আমীরের পদ থেকে কয়েকদিন আগে পদত্যাগ করেছেন আব্দুল্লাহ মো: হাসান। তিনি বলেন, সংগঠনটির কিছু নেতার ভুলের কারণে এখনকার সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালাও পোড়াও বা সহিংসতা সমর্থন না করার কারণে তিনি হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কিছু নেতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে গোটা আলেম সমাজ এবং গোটা কওমি মাদরাসার ওপর একটা চাপ তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের একটি বড় কওমি মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা। এই মাদরাসা থেকে ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু দলটির সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক দলের দিকে মোড় নেয়। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ হেফাজতের কমিটিতে যুক্ত হতে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে নতুন নেতৃবৃন্দ সরকারবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh