• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যেসব কারণে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লো

  ৩১ মার্চ ২০২১, ২৩:৫২
যেসব কারণে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়লো

একদিনে করোনাভাইরাসে ৫২ জনের মৃত্যু ও নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৩৮ জন। অথচ গত বছর একইসময়ে করোনা সংক্রমণ রোগী শনাক্তের হার কম থাকলেও মে মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণ বাড়ে। তখন আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নতুন রোগীর সঙ্গে শনাক্তের হার কম হয়। সেপ্টম্বর ও অক্টোবরের দিকে সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকার পর নভেম্বরের শুরুর দিকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবারও কমতে শুরু করে। তবে চলতি মাসের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে বুধবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ কোটি ৯১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৮ লাখ ২১ হাজার ২৩৬ জন। এছাড়া করোনা থেকে সুস্থ্য হয়েছেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮২ জন।

চলতি বছরের যেসব কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন জনগণ চলাচলে স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। করোনা সংক্রমণ থাকার পরেও সরকার থেকে শুরু করে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা অনুষ্ঠান করে মানুষের ভিড় জমায় করেছে। এছাড়াও বিনোদন কেন্দ্র কক্সবাজার, রাঙামাটি, জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচলে বিন্দুমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।

ইতোমধ্যে বুধবার (৩১ মার্চ) একটি ভার্চু্যয়াল মিটিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মানুষকে সচেতন করে বলেছেন, এখনই করোনার উৎপত্তি উৎস ঠেকাতে না পারলে দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। একইসঙ্গে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্তের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এখন এটি প্রায় ২০ শতাংশে চলে গেছে। এখন দিনে প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যু সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, যানবাহনসহ অন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র সমূহে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক আয়োজন বন্ধ রাখতে হবে। সকল মানুষকে মুখে মাস্ক পড়তে হবে। কারন এখনই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে করোনাকে আর খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়বে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষা করতে এসে দেখা গেছে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, দেশজুড়ে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু অনেকের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে না। ফলে তারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। করোনার টিকা দেওয়ার পরেও যাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না তাদেরকে নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সারোয়ার আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, গত বছর যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয় তখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন করোনা সংক্রমণ কমতে থাকে তখন মানুষের মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শীতলতা দেখা যায়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনেক বেশি পরিমাণে এবং অবাধে হয়েছে। মাস্ক খুলে বদ্ধ ঘরে এক সাথে অনেক মানুষের খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলোও করোনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলে তিনি মনে করেন।

হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী আরটিভি নিউজকে বলেন, দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ মাস পর ৭ ফেব্রুয়ারি টিকা দেওয়া শুরু হয়। ওই দিন সরকারি-বেসরকারি মিলে ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হয়। টিকা দেয়া নিয়ে মানুষের মনে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে একবার টিকা নিলে আর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। কিন্তু সেটি ঠিক নয়। টিকা নিয়ে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলাচল করছেন।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আবুল হাশেম আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীকে দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর পেছনে মূলত অস্বাভাবিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা না মেনে চলাচলকে বেশি দায়ী। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে ‘চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে দ্বিতীয়বার সংক্রমণের ঘটনা বেশি দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, সারা দেশে করোনার প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর অনেকে ভাবেন করোনা আর আসবে না। তারা এমন ভাবনা থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করেনি। তাদের দেখে আশপাশের মানুষেরাও স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করেছে। ফলে যারা টিকা নিয়েছেন তারা পুরনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং যারা টিকা নেননি তারও আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বোপরি করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম ঢেউয়ের সময় তিন মাসে যে পরিমাণ সংক্রমণ বেড়েছে, এবার মাত্র তিন সপ্তাহে সেই সংক্রমণের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের শেষের দিকে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকে। চীনের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা আসে। দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যুর ঘোষণা আসে ১৮ মার্চ।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh