• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মসজিদ নির্মাণের আড়ালে ফুটপাত দখল, ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন (ভিডিও)

আপেল শাহরিয়ার,

  ২৪ মার্চ ২০২১, ২২:৩৮
মসজিদ নির্মাণ

বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলেও থেমে নেই রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে জনগণের চলাচলের ফুটপাত দখল। মসজিদ নির্মাণের আড়ালে বিজিপ্রেস স্কুলের মোড়ে ফুটপাতে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পুলিশকে একাধিকবার জানানোর পরও অজানা কারণে দখল বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

নগরবিদদের মতে অনৈতিকভাবে লাভের আশায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না। অবিলম্বে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ দেন তারা। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, ইবাদতের জন্যই মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তা মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে না। অথচ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় জনগণের চলাচলের ফুটপাথ দখল করে দোকান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। আর এর ঢাল হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে মসজিদ।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণের অজুহাত দিয়ে আর্থিক লাভের আশায় একটি অপরাধী চক্র একই কায়দায় একের পর এক ফুটপাত দখল করছে। রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল বিজিপ্রেস স্কুলের চার রাস্তার মোড়ে দখলের পায়তারা করলে বিষয়টি গত এক মাস আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের নজরে আনে আরটিভি। কিন্তু এই সময়ে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনোও ব্যবস্থাতো নেয়াই হয়নি, বরং মসজিদটির দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ এগিয়ে গেছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ফুটপাত তো দখল করার কথা না। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও অজানা কারণে নিশ্চুপ থাকে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে ফুটপাতের উপর পিলার বসিয়ে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রভাবশালীদের সঙ্গে প্রশাসনের সখ্যতা থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ওয়ার্ড কমিশনারের দাবি বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল্লাহ শফি বলেন, যারা এখানে মসজিদ নির্মাণ করছে, আমরা তাদের বলেছি। এরপরও তারা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছে। আমরা কয়েকবার বাধাও দিয়েছি। এখন মসজিদতো আল্লাহর ঘর, এ জন্য কিছুটা ছাড় দিয়েছি আমরা।

মসজিদের এই জায়গা দখলের শুরুর দিকে জনগণের চলাচলে ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা করতে দেয়া হবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হলেও এখন বলছে কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদের কাছে ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনবোধে এলাকার সাংসদ, কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলব। তাদের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ বন্ধের চেষ্টা করব। যদি আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

বিষয়টি আবারও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনিও ব্যবস্থা নেয়ার পুরনো আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, এটা তদন্ত করে দেখতে হবে যে, এটা বাণিজ্য না মসজিদ। তদন্তের পর যদি বাণিজ্যিস্থাপনা চিহ্নিত হয় এবং সিটি করপোরেশনের অধীনে হয় তাহলে অবশ্যই সরিয়ে দেয়া হবে।

নগরপরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, অবৈধ কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা প্রমাণ করে তারা কোনো না কোনোভাবে এসবের সঙ্গে জড়িত। অবৈধ দখলদার জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারছে না বলেই আজকে ফুটপাত অবৈধ মসজিদে পরিণত হয়, অবৈধ দোকানে পরিণত হয়। যদিও পরে মিডিয়াকে নিয়ে আমরা উচ্ছেদ অভিযান করি। কিন্তু আমরা প্রথমেই কেন তাদের অবৈধ কার্যক্রম করতে দেই? সরকারের যে সকল সংস্থা অথবা যে সমস্ত অফিস নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনলেই আমরা এসব থেকে মুক্তি পাব।

এ বিষয়ে ইসলামী চিন্তাবিদ হাফেজ মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান বলেন, নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের জায়গা ওয়াফ্ফ হতে হবে বা মসজিদ কমিটির নামে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। অথবা হুকুমত সরকার তা তৈরি করে দেবে। হাদিসে আছে মানুষের কাজের মূল্যায় হবে তার নিয়তের দ্বারা। যেহেতু এই মসজিদ নির্মাণের সাথে জড়িতদের উদ্দেশই হচ্ছে মার্কেট নির্মাণ, জায়গা দখল ও অর্থ উপার্জন, তাই তাদের মসজিদ নির্মাণ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ধর্মকে পুঁজি করে অর্থনৈতিক লাভের আশায় দখল করে মসজিদ নির্মাণ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।

এসআর/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh