• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

মশা তাড়াতে নিম্নমানের কয়েলের পেছনে ছুটছে মানুষ

ফারুক আলম

  ২০ মার্চ ২০২১, ১৯:৩৯
মশা তাড়াতে নিম্নমানের কয়েলের পেছনে ছুটছে মানুষ

ঢাকাসহ সারাদেশেই বেড়েছে মশার উৎপাত। রাত দিন সব সময়ই মানুষের সঙ্গী হয়েছে মশা। মশার কামড়ের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে কয়েল ও ইলেক্ট্রিক ব্যাট সহ অ্যারোসল স্প্রে ব্যবহার করেও মশাকে প্রতিহত করা যাচ্ছে না। যতটুকু সময় মশারির ভেতর সময় কাটছে সেই সময়টুকুও যেনো বাইরে পাহারা দেয় মশা। মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের প্রধান অবলম্বন কয়েল। কিন্তু সেখানে ভেজাল ঢুকায় দিন দিন অসহায়ত্ব বাড়ছে মানুষের। বাজারে নিম্নমানের মশার কয়েল ও মানহীন ইলেক্ট্রিক ব্যাট ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষ টাকা খরচ করেও কোনো প্রতীকার পাচ্ছেন না।

জানা গেছে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মশা নিধনে ১০৩টি কোম্পানিকে অনুমোদন দিলেও বাজারে প্রায় কয়েকশ মশার কয়েল উৎপাদনকারী কোম্পানি আছে। অর্থ্যাৎ অনুমোদনের তুলনায় অনুমোদনহীন মশার কয়েলে বাজার ছেয়ে গেছে।

এসব বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজার থেকে আনা বিভিন্ন কোম্পানির মশার কয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানো সম্ভব হয় না। আবার কিছু মশার কয়েল আছে, যেগুলো জ্বালানোর পর মশার সঙ্গে ঘরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা তেলাপোকা ও টিকটিকি মরছে। কারণ মশা মারতে বাজারে যেসব কয়েল কোম্পানির নাম দেখা যায়, সেগুলোর অধিকাংশ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) অনুমোদন নেই। নিম্নমানের মশার কয়েলে বাজার সয়লাভ। যা মানুষের ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিভারের রোগী বাড়ছে। গর্ভের শিশুও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি চিকিৎসক ডা. ইকবাল মাহমুদ আরটিভি নিউজকে বলেন, যেকোনো কোম্পানির মশার কয়েল জ্বালালে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। মশার কয়েলের ধোঁয়ায় নাক, কান, গলা, ফুসফুস, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিম্নমানের মশার কয়েল মানুষ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এসব রোগে দ্রুত আক্রান্ত হোন। যতটা সম্ভব প্রকৃত নিয়মে মশার হাত থেকে রেহাই পেলে মশার কয়েল ব্যবহার পরিহার করা উচিত বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

নিম্নমানের মশার কয়েলের বিষয়ে বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাশিদা আক্তার আরটিভি নিউজকে বলেন, দেশে মশার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন মশার কয়েলের রমরমা ব্যবসা শুরু করেন। বাজারে যারা নকল মশার কয়েলের ব্যবসা করেন তারা এতোটাই চালাক যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসার সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে গোডাউনের দরজা বন্ধ করে দেন। অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক সময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কুটকৌশল অনুধাবণ করাও সম্ভব হয় না।

বিএসটিআইয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে বসবাসরত মানুষ সচেতন হওয়ায় মশার কয়েল কেনার ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন দেখেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ মশার কয়েল কেনার আগে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে কিনা সেটি লক্ষ্য করেন না। ফলে ঢাকার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল মশার কয়েলে রমরমা ব্যবসা করেন। ঢাকার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি নকল মশার কয়েলেও আমদানি করা হয়। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সুযোগ নিয়ে নিম্নমানের মশার কয়েলে সয়লাভ করেন। এজন্য গ্রামের বাজারগুলোতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনকৃত মশার কয়েলের তুলনায় নিম্নমানের মশার কয়েল বেশি পাওয়া যায়। আর এসব নিম্নমানের কয়েল বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।

উত্তরা কামারপাড়া, জসিমদ্দিন, ফার্মগেট, মিরপুর, আজিমপুর, শনিরআখড়াসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন কোম্পানির মশার কয়েল বিক্রি করছেন দোকানদাররা। কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে তৈরি মশার কয়েল আসছে বাজারে। এসব কয়েলে কী উপাদান মেশানো আছে তাও কয়েলের প্যাকেটে লেখা নেই। ‘নাইট রোজ, অতন্ত্র প্রহরী জাম্বো, অতন্ত্র প্রহরী মিনি, ফ্যামিলি, ওয়ান টেন, সান পাওয়ার, তুলসি পাতা, সাঝের তারা, বস ও রকেটসহ অনুমোদনহীন কয়েলে বাজার সয়লাব।

পুরনো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মশার কয়েল তৈরির কারখানা রয়েছে। এক কারখানা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির নামে কয়েল প্যাকেট করা হচ্ছে। দেশিও কারখানায় নিম্নমানের কয়েল তৈরি ও সাপ্লাই করার পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কয়েল আমদানি করা হচ্ছে। আমদানি করা মশার কয়েলের বেশিরভাগ চীন থেকে আসছে। পরীক্ষা ছাড়াই আমদানি হচ্ছে।

শনিরআখড়া মুদির দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির মশার কয়েল বিক্রি করছেন মিজানুর রহমান। তিনি আরটিভি নিউজকে বলেন, এলাকায় মশা বাড়ায় কয়েলের ব্যবসা জমজমাট। গত দুই মাস আগেও যেখানে দিনে পাঁচ থেকে ছয় প্যাকেট কয়েলের প্যাকেট বিক্রি করতে পারেননি সেখানে বর্তমানে দিনে ত্রিশ থেকে চল্লিশ প্যাকেট কয়েল বিক্রি করেন।

কোন কোম্পানির মশার কয়েল বেশি বিক্রি হচ্ছে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, এসিআই মশার কয়েল গুণগত মান ভাল হলেও গ্রাহকরা পপুলার, টাইগার, সুপার পাওয়ারসহ বিভিন্ন কোম্পানির মশার কয়েল বেশি কিনছেন। এসিআই মশার কয়েল বিএসটিআইয়ের অনুমোদন রয়েছে কিন্তু গ্রাহকদের চাওয়া যে কয়েলে বেশি মশা মরবে সেই কয়েল চায়। নিম্নমানের মশার কয়েলে শারীরিক সমস্যা হলেও গ্রাহকরা দোকানে এসে বলেন যে কয়েলে বেশি মশা মরবে তাই দেন। নিম্নমানের কয়েল বাজারে চাহিদা থাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে।

রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা আলী ইব্রাহীম বলেন, এলাকায় মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। কয়েল জ্বালিয়েও মশা দূর করা যায় না। মশা মারতেই মানুষ কয়েল কিনে। কিন্তু বাজারে কিছু কয়েল রয়েছে যেগুলো জ্বালালে মশা কয়েলের ওপরে এসে বসে থাকে। এজন্য যে কোম্পানির কয়েলে মশা বেশি মরে মানুষ সেই কোম্পানির মশার কয়েল কিনবে এটিই স্বাভাবিক। এখানে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে কিছুই করার নেই। কারণ মশার যন্ত্রণা থেকে আগে মানুষকে বাঁচতে হবে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় চারগুণ বেড়েছে বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।

এফএ/ এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে কর্মশালা অনুষ্ঠিত
মানুষটির ছায়াও আর মাড়াতে চাই না : পরীমণি
লাখো মানুষে মুখর জাতীয় স্মৃতিসৌধ
‘মানুষ যে আশা নিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল, তা আজও পূরণ হয়নি’
X
Fresh