• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

গোপনে সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রতিযোগিতা, ছিলো স্বামী-স্ত্রীর মতোই!

  ১২ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৬
Secretly Singapore-Thailand travel competition, was like husband and wife!
ফাইল ছবি

এক পুরুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতে এই দুই নারীর ছিলো ব্যাপক প্রতিযোগিতা। একজনের নাম নাহিদা রুনাই। অন্যজনের নাম অবন্তিকা বড়াল। এই দু’জনই অর্থ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বিপুল টাকা-পয়সার মালিক পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এক কথায় এই দু’জনের সঙ্গেই পি কে হালদারের ছিলো স্বামী-স্ত্রী’র মতোই সম্পর্ক। আর এই দু’ই নারী একে অপরের মধ্যকার সম্পর্ক ছিলো সতীনের মতো।

আরও পড়ুনঃ ‘‘স্বপ্নে পাওয়া’ আম দেখতে জনতার ঢল

সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ

সম্প্রতি দুদকের মামলায় আদালতে দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের কাছে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী। জবানবন্দিতে রুনাইকে ‘বড় আপা’ উল্লেখ করে উজ্জ্বল বলেন, ‘পি কে হালদারের ২ বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। এই দু’জনের সঙ্গে তিনি পৃথকভাবে ২০ থেকে ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। পি কে হালদারের সঙ্গ পাওয়া নিয়ে ওই দু’জনের মধ্যে চলতো ব্যাপক প্রতিযোগিতা। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারকে আলাদাভাবে সময় কাটাতে দেখা যায়।’

আরও পড়ুনঃ বিয়ে করতে পুলিশের দ্বারস্থ ২ ফুটের যুবক

বড় আপা, ছোট আপা

জবানবন্দিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী আরও বলেন, ‘আমরা রুনাইকে বড় আপা আর অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকতাম। কারণ রুনাই চালাত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং আর অবন্তিকা চালাত পিপলস লিজিং। পি কে হালদার বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন দেশে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন। তার সঙ্গে ৩ বার মালয়েশিয়ায় গিয়েছি। আমার সঙ্গে অমিতাভ অধিকারী, রাজীব সোমও মালয়েশিয়ায় যান। একবার যাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। প্রতিবারই ভ্রমণের সব খরচ দিয়েছেন পি কে হালদার। তার টাকায় আমি সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে গিয়েছি ৩ বার। এসব ভ্রমণে আমার সঙ্গী হতো রাজীব সোম, অমিতাভ অধিকারী এবং পি কের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল।’

রুনাই ও অবন্তিকার সম্পর্ক ছিল সতীনের মতো

দুদকের অনুসন্ধান দলের এক কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, ‘রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদারের সম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রীর মতোই। আর রুনাই ও অবন্তিকার সম্পর্ক ছিল সতীনের মতো। বিদেশ ভ্রমণ নিয়েও তাদের দু’জনের মধ্যে ছিল তীব্র প্রতিযোগিতা। একবার গোপনে অবন্তিকাকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে প্রমোদ ভ্রমণে যান পি কে। রুনাই বিষয়টি জানতে পেরে পি কের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালান বলে বিভিন্ন জনের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এ ছাড়া অবন্তিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পি কের ওপর কয়েক বারই হামলা করে রুনাই।’

অবন্তিকাকে নিয়ে গোপনে বিদেশ যাওয়া

অবন্তিকাকে নিয়ে গোপনে বিদেশ যাওয়াকে কেন্দ্র করে একবার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে পি কের সঙ্গে রুনাই তুমুল ঝগড়া করেন জানিয়ে ওই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘যা উপস্থিত সহকর্মীরা প্রত্যক্ষ করেন। এ ছাড়া রাতে পি কের বাসায় গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন রুনাই। অন্য একবার অবন্তিকাকে নিয়ে গোপনে বিদেশ যাওয়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফিল্মি স্টাইলে দু’জনকে ধরে নিয়ে আসেন রুনাই। ওই যাত্রায় অবন্তিকাকে নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে যাওয়া হয়নি পি কের।’

গ্রেপ্তার অবন্তিকা

গত ১৩ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তাকে ২ দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।

দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গত সোমবার (৮ মার্চ) এক ব্রিফিংয়ে জানান, নাহিদা রুনাইসহ পি কের ৪৪ সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রুনাইসহ ৩৩ জনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী জারির নোটিস দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার প্রতিটি মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন পি কে। আগামী রোববার (১৪ মার্চ) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো হওয়ার কথা রয়েছে।

কেরানীকন্যা রুনাইর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭০ কোটি টাকার লেনদেন

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাইয়ের সম্পদ দেখে তাজ্জব বনে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দল। গত ৪-৫ বছরের মধ্যে তার ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া রুনাইয়ের কমপক্ষে ২৮ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে কমিশনের দলটি। যা একটি সরকারি দপ্তরে ‘কেরানি পদ’-এ চাকরি করা বাবার অফিস এক্সিকিউটিভ মেয়ের পক্ষে বৈধভাবে অর্জন অসম্ভব বলেই মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী ও বান্ধবী হিসেবে পরিচিত নাহিদা রুনাই এখনো নিয়মিত অফিস করছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। পি কে হালদারের কমপক্ষে ৪ টি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ তদন্তকারী দুদক দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যদের একটি দল।

আরও পড়ুন : পদোন্নতি পেলেন না আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম

কে এই নাহিদা রুনাই?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার জাকির হোসেন বাইলেন স্থায়ী ঠিকানার বাসিন্দা নাহিদা রুনাই। তাদের বাড়িটি স্থানীয়ভাবে মোজাফ্ফর খানের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। রুনাইয়ের বাবার নাম মফিজুর রহমান। তিনি চট্টগ্রামে একটি সরকারি দপ্তরে ‘করণিক’ পদে চাকরি করতেন। রুনাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে চাকরি পান।

যেভাবে পি কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়ান রুনাই

রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডে ২০০৯ সাল থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ২০১১-১২ সালে পি কে হালদারের সঙ্গে পরিচয় হয় রুনাইয়ের। এরপর ঘনিষ্ঠতা। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিশেষ হাতের ছোঁয়ায় দ্রুত উন্নতি হয় রুনাইয়ের। এসএমই লোন শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান পি কে হালদারের বান্ধবী ‘বড় আপা’ হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন পি কে হালদার।
পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে নাহিদা রুনাইকে নিয়ে আসেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে। দ্রুত সময়ে তাকে ৪ টি পদোন্নতি দিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট করেন পি কে হালদার।

আত্মসাৎ ও পাচারকৃত অর্থের হিসাব রাখতো রুনাই

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পি কের টাকা পাচারের অন্যতম সহযোগী এই নাহিদা রুনাই। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হচ্ছে সেই হিসাব রাখতেন রুনাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মহলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে রুনাইয়ের দক্ষতা অপরিসীম। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে সিদ্ধহস্ত।

দুদকের অনুসন্ধান দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, পি কের দখলে থাকা ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের ১০০ কোটি টাকা নিজের মতো করে খরচ করার সুযোগ পান রুনাই। এ ছাড়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিতে (বিআইএফসি) রুনাইয়ের প্রভাব ছিলো উল্লেখ করার মতো।

কেএফ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পি কে হালদারের ১৩ সহযোগীর সাজা বাড়াতে আবেদন দুদকের
পি কে হালদারের বান্ধবীর জামিন
পি কে হালদারকে দেশে আনার বিষয়ে যা জানাল দুদক
পি কে হালদারসহ ৬ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন
X
Fresh