• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি,  আরটিভি নিউজ

  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:৩৬
শিল্প×পণ্য×পটুয়াখালী×চোখ×ঐতিহ্য×প্লাস্টিক×পরিবর্তন×ব্যবহার×
ছবি আরটিভি নিউজ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বাঁশ-বেতের কারিগররা ভালো নেই। ভুগছে অর্থ সংকটে। ঐতিহ্য ধারণ করে বংশানুক্রমে চলে আসছে এ পেশা। নানাবিধ সংকটের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় সহস্রাধিক পরিবার। ফলে বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। পেশা পরিবর্তনের আগ্রহ কারিগরদের।

জানা গেছে, এক সময় গ্রামীণ মানুষের ঘরের কাজে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যবহার্য জিনিষপত্রই ছিল বাঁশ-বেতের। তখনকার সময় কদরও ছিল আকাশচুম্বি। বাঁশ আর বেতের তৈরি করা জিনিষপত্র বিক্রি করেই অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী ছিলেন এখানকার কারিগররা। কালের পরিবর্তনে প্লাস্টিক আর কাঠের তৈরি জিনিষপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসছে এই ঐতিহ্যবাহী বাঁশ আর বেতের শিল্প। করোনাকালীন এ সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে এ পেশার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। ফলে জীবনযাত্রা থমকে গেছে। কোনও রকম খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের জীবন।

এ উপজেলার নীলগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, লতাচাপলী, ডালবুগঞ্জ মহিপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ শিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল প্রাচীন কাল থেকে। অন্তত সহস্রাধিক পরিবারের সদস্যরা এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলো। বেতের পাটি, বাঁশের খাঁচা, মাচা, চাটাই, গোলা, সুডি, চাই, মোড়া, ডালা, কুচা, টুরকি, ঝাপি, ছালুনিসহ নানা ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করত এক সময়। এসব জিনিষ বানানোর দৃশ্য এখন বেশি একটা চোখে পড়ে না। বিলুপ্তির পথে এক সময়ের ঐতিহ্যের বাঁশ-বেতের শিল্প। এ উপজেলার কয়েকটি পরিবার এ পেশাকে আকড়ে ধরলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারাতে বসেছে এ শিল্প। বাঁশ-বেতের উৎপাদন কমে যাওয়া, পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এ পেশা পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। পাশাপাশি প্লাস্টিক আর কাঠের পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পেশা থেকে ছিটকে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই।

বংশ পরম্পরায় চলে আসা আজও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন মহিপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের অমূল্য মিস্ত্রী। ৪০ বছর ধরে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এ পেশায়। ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। ২০ হাজার টাকায় বাঁশ ক্রয় করে ৩০হাজার টাকার পণ্য তৈরি করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাজারে চাহিদা কম থাকা ও পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায় তেমন লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও কাজের অভাবে এ পেশায় এখনও টিকে আছি।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের বিমল ব্যাপারীর পৈত্রিক পেশা বাঁশ-বেতের কাজ। তিনিও ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এই পেশায় রয়েছে। তিনি বলেন, কী করবো, অন্য কাজ তো শিখিনি। বাকি জীবনটা এই কাজই করে যাব। তিনি আরও বলেন, আগে বড় ও মাঝারি সাইজের বাঁশ ৫০-১৫০ টাকায় কেনা যেতো। এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় কিনতে হয়। এক দিনের পরিশ্রমে একটি বড় বাঁশ দিয়ে ১০টি চাঁই তৈরি করা যায়। আর প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা করে ১০টি খাঁচা ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে আমাদের লাভ হয় কম। তবে পাইকাররা এইসব খাঁচা ২০০ টাকায়ও বিক্রি করছে।

পটুয়াখালী জেলা বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক মো. মনির হোসেন বলেন, এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ-প্রণোদনার বিকল্প আর কিছু নেই। এ পেশায় জড়িতদের আধুনিকতার আদলে বাঁশ-বেতের কাজ শিখতে হবে। তাহলে হয়তো চাহিদা আবার বৃদ্ধি পাবে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ধর্ম-কর্মে সময় কাটছে চিত্রনায়ক মেহেদির
বিজয় নিয়ে আশাবাদী নিপুণ, ফল যা হোক মেনে নেবেন কলি
শাবনূরের বিকল্প নেই : ডিপজল
সহকর্মী ও গণমাধ্যমকে এড়িয়ে গেলেন ইলিয়াস কাঞ্চন
X
Fresh