• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

রাত ৮ থেকে ১০ টা, ডেঞ্জার জোন সার্ক ফোয়ারা!

  ২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৫৩
Danger zone circus fountains from 8 to 10 at night!
ফাইল ছবি

সার্ক ফোয়ারা, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম একটি এলাকা। যেখানে পাঁচ তারকা মানের হোটেল সোনারগাঁওসহ উল্লেখযোগ্য স্থাপনা অবস্থিত। যে স্থানটি সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বলয়ে থাকার কথা, অথচ সেখানেই আজ ‘টানা পার্টির’ রাজত্ব। বিশেষ করে রাত ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত সেখানে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করে, পথচারী ও যাত্রীবাহী পরিবহনের যাত্রীদের মধ্যে যেন একরকম আতঙ্ক কাজ করে।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে টানা পার্টির বিচরণ দেখা গেলেও সম্প্রতি সার্ক ফোয়ারায় এই পার্টির উপদ্রব চরমে পৌঁছেছে। ঘটনার সময়ে এই স্থানটিতে পুলিশ অল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করার অভিযোগ পাওয়া যায় অহরহ। একটি স্পটে ‘টানা পার্টির’ প্রায় ডজন খানেক বা তারও বেশি সদস্য চক্র বদ্ধ হয়ে অবস্থান করায় আশপাশে থাকা সাধারণ মানুষ ব্যাপক আতঙ্কে থাকেন। কখনো কখনো সাধারণ কেউ ওই চক্রের কাউকে টার্গেট করলে উল্টো ধারালো চাকুর অংশ বিশেষ দেখিয়ে ভয় দেখায় তারা। এমন পরিস্থিতিতে নিজ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেবল তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না সাধারণ মানুষের।

গত কয়েক সপ্তাহ সার্কফোয়ারার আশপাশের সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে রাত ৮ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত টানা পার্টির চক্রের সদস্যরা মানুষের মোবাইল ফোন, গলার দামি চেইন, লকেট, কানের দুল, ব্যাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেবল সার্ক ফোয়ারায় প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ টি ঘটনা ঘটায় টানা পার্টি। একইভাবে গোটা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এমন অর্ধশতাধিক ঘটনা ঘটায় তারা। এরপরও এসবের কোনো প্রতিকার মিলছে না।

চিহ্নিত কিছু এলাকার বাস স্ট্যান্ড ও রোড ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে রাতের বিভিন্ন সময়ে এমন ঘটনা একটির পর একটি ঘটালেও ধরা পড়ছে না চক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে যে সব স্থানে গাড়ির গতি কমে যায় এবং যানজট প্রবণ এলাকায় টানা পার্টির দৌরাত্ম্যে পরিবহন যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও বাসে ওঠার চেষ্টা করা ব্যক্তিদের টার্গেট করে টানা পার্টির সদস্যরা একসঙ্গে জড়ো হয়ে মানিব্যাগ-মোবাইল এমনকি হাতে থাকা ব্যাগও ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, সার্ক ফোয়ারা ছাড়াও রাজধানীর সায়েদাবাদ, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, পল্টন মোড়, বাংলামটর, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বিজয় সরণিসহ আরও কিছু পয়েন্টে টানা পার্টির সদস্যদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। সড়কের পাশে, বিশেষ করে ডিভাইডারে কিছু তরুণ ও যুবক অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকে, তারা রাস্তা পারাপারের ভান করে হাঁটাহাঁটি করে। এর মধ্যেই তারা জানালার পাশে বসা বাস যাত্রীদের অনুসরণ করে। অসতর্ক কারো হাতে বা কানে মোবাইল ফোন থাকলে লাফ দিয়ে তা হাতিয়ে নিয়েই ভোঁ দৌঁড়। এক পলকেই যেনও হাওয়া হয়ে যায় তারা।

আবার প্রাইভেটকারের দরজার গ্লাস খোলা থাকলে ভেতরে বসা নারী যাত্রীর গলার হার, লকেট, কানের দুল, ভ্যানেটি ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে নিচ্ছে টানা পার্টির সদস্যরা। বাস যাত্রীরা ঘটনার পর শুধু জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকলেও করার কিছু থাকে না। অনেক সময় প্রাইভেটকারের যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে হইচই করলেও মুহূর্তে রাস্তা পার হয়ে সটকে পড়ে টানা পার্টির সদস্যরা।

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেছেন, টানা পার্টির সদস্যরা মাদকাসক্ত। ‘ছোঁ’ মেরে মানুষের মোবাইল ফোন সেট, গলার চেইন, লকেট, কানের দুল, ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পর তারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মধ্যে দৌঁড়ায়। অনেক সময় চলন্ত গাড়ির ধাক্কাও খায় তারা। কিন্তু পেছনে ফিরে তাকায় না। অধিকাংশ ঘটনা ট্রাফিক পুলিশের সামনে ঘটছে বা ঘটনার পর তারা অবগত হলেও প্রতিকার মিলছে না। কারওয়ানবাজার এলাকার একই স্থানে একই ব্যক্তি ঘণ্টায় ৩-৪টি ঘটনা ঘটালেও ধরা পড়ছে না।

ঘটনাস্থলে এত ভিড় থাকে যে, ছিনতাইয়ের পরে ছিনতাইকারী মানুষের ভিড়ে মিশে যায়। অনেক সময় ভুক্তভোগী তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারেন না যে, তিনি টানা পার্টির সদস্য দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। আবার কখনো এটি বুঝতে ভুক্তভোগীর কিছুটা সময়ও লেগে যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) ওয়ালিদ হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, সার্ক ফোয়ারা যেহেতু রাজধানীর ব্যস্ততম স্থান কারওয়ানবাজার সংলগ্ন, সেহেতু সেখানে নানান ধরনের লোকজনের বিচরণ থাকে। কারওয়ান বাজার ব্যাপক জনসমাগম থাকায় অপরাধ চক্রের সদস্যরা সহজেই গা ঢাকা দিয়ে থাকে। এরপরও এ বিষয়ে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সর্বদা তৎপর রয়েছে। আগামীতে তৎপরতা আরও বাড়ানো হবে।

একই বিষয়ে ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, যেকোনো অপরাধ দমনে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট। কেউ ছিনতাই বা টানা পার্টির কবলে পড়লে তিনি যেন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। সেক্ষেত্রে ওইসব অপরাধীদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। কিন্তু আমরা দেখি, অধিকাংশ ছিনতাই বা টানা পার্টির কবলে পড়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতে অনীহা দেখান।

কেএফ/এম

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সাভারে যুবকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডিবি পরিচয়ে ৩৬ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
জাহাজ ছিনতাইয়ে শিশুদের কাজে লাগাচ্ছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা
ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া ২ পুলিশ সদস্য রিমান্ডে
X
Fresh