• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

এ যুগের ‘আসমানী’ আল্পনার ভেন্না পাতার ছাউনিও নেই

  ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:১৭
There is no canopy, of canopy leaves, rtv news
চৌকি ঘরে সন্তানসহ বসে আছেন আল্পনা

কবি জসিম উদ্দিনের বিখ্যাত ‘আসমানী’ কবিতায় আসমানীদের ভেন্না পাতার ছাউনির ঘর থাকলেও এ যুগের আল্পনাদের সেরকম ঘরও নেই। তাই দুই সন্তান এবং অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সংসার পেতেছেন একটি চৌকিতে। চৌকির সঙ্গে বাঁশের খুঁটি বেঁধে পলিথিন এবং ছেড়া কাপড় দিয়ে তৈরি করেছেন তাদের থাকার বাড়ি। তাও আবার অন্যের বাড়ির পেছনে গরুর গোয়াল এবং টয়লেটের কাছে। চৌকি বাড়িটি দেখতে গৃহপালিত পাখির বাসা মনে হলেও এখানেই গাদাগাদি করে রাত্রে ঘুমায় আল্পনার পরিবারের চার সদস্য। এর মধ্যে বসেই পড়ালেখাও করে আল্পনার বড় সন্তান। সরকার ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিলেও তালিকায় নাম নেই কুড়িগ্রামের এই মানবেতর জীবন-যাপন করা পরিবারটির।

এই চৌকি বাড়িটির অবস্থান জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের হাছিপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমানের বাড়ির গোয়াল ঘর এবং টয়লেটের মাঝখানে এক টুকরো ফাঁকা জায়গা। সেখানে খোলা আকাশের নিচে একটি চৌকি পাতা। চৌকির সঙ্গে আটকানো বাঁশের খুঁটিতে পলিথিন এবং ছেঁড়া কাপড়ে মোড়ানো উপড়ে পলিথিনের ছাদ। পাঁচ ফিট দৈর্ঘ্য এবং চার ফিট উচ্চতার চৌকি ঘরটিতে গাদাগাদি করে বাস করে আল্পনার পরিবারের চার সদস্য।

স্বামী সেকেন্দার আলী অসুস্থ থাকায় সংসারের হাল ধরেছেন আল্পনা বেগম। সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। বড় মেয়ে আট বছরের সাথী আক্তার স্থানীয় নূরানী মাদরাসার শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে রাকিব হাসানের বয়স দুই বছর। বিশ বছর আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারায় আল্পনার বাবা। পরবর্তীতে দরিদ্র পরিবারে বিয়ে হয় আল্পনার। তার স্বামী সেকেন্দার দিনমুজুর এবং মৌসুমী রিকশা চালক। বিভিন্ন সময়ে উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন শহরে দিনরাত পার করেছেন তারা। করোনার আগে রংপুরে স্বামী সেকেন্দার রিকশা এবং নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন ধারণ করলেও লকডাউনে ফিরে আসতে হয় নিজ গ্রামে। চাচার বাড়ির কোনায় এভাবেই সাত মাস আগে স্থান হয় তাদের। একটি চৌকি পলিথিনে মুড়ে তৈরি করেছেন নিজেদের বাড়ি। এই চৌকি বাড়িটিতেই গাদাগাদি করে রাত পার করেন তারা। এখানেই বসে পড়াশোনাও করে নিতে হয় বড় সন্তান সাথীর। রাতে শেষ কম্বলগুলোও তুলে রাখতে হয় এখানেই। কখনও বসে আবার কখনও আধসোয়া হয়ে রাত পার করেতে হয় তাদের। দুঃসহ এই জীবনের ভার আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। স্বামী নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এখন তাদের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আল্পনা। কখনও দিনমুজুরি আবার কখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুমুঠো ভাত যোগানোর চেষ্টা করেন তিনি। তবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীর আওতায় প্রচলিত প্রকল্পে নাম নেই তার।

আরো পড়ুন...
করোনায় বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ১৬ লাখ ৮১ হাজার ছাড়িয়েছে
ভ্যাকসিন নিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স
যুক্তরাষ্ট্রে মডার্নার টিকা অনুমোদন
উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে ধর্ষণ
ভাস্কর্য অবমাননার মূল পরিকল্পনাকারী বিএনপি: কাদের
জয়পুরহাটে ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি

আল্পনা আরটিভি নিউজকে জানান, স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে অনেক ঘুরেও কোনও সহযোগিতা পাননি তিনি। একদিকে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই অন্যদিকে চারজনের খাবার যোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছ তার।

আল্পনার স্বামী সেকেন্দার আলী জানান, অতিকষ্টে এই চৌকিতে দুই সন্তানসহ চারজনের রাত পার করতে হয়। এই দুঃখের কথা লজ্জায় কাউকে জানাতে পারেননি তিনি।

আল্পনার মেয়ে নূরানী মাদরাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাথী আক্তার আরটিভি নিউজকে জানায়, রাতে এখানে ঘুমাতে তার অনেক কষ্ট হয়। তাছাড়া কুপি বাতির আলোতে লেখাপড়া করতেও পারে না সে। আল্পনার চাচা আজিজার রহমান আরটিভি নিউজকে জানান, আল্পনাদের কোনও জমি নেই। তিনি এখানে থাকার জায়গা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের ঘর তুলে থাকার মতো কোনও সামর্থ্য নেই।

বল্লভের খাষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘পরিবারটি নিতান্তই অসহায়। তাদের বসতভিটা এমনকি থাকার ঘরও নেই। খোলা আকাশের নিচে পলিথিন মোড়ানো একটি চৌকিতে বসবাস করছেন তারা।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম আরটিভি নিউজকে বলেন, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না; প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের গৃহনির্মাণ চলমান রয়েছে। আল্পনা বেগমকে এই প্রকল্পের আওতায় জমিসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে দল কিনল বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান
১৬০০ মিটার দৌড়ে যেমন করলেন টাইগাররা
অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর
মিশা-ডিপজলকে জয়ের মালা পরিয়ে দিলেন নিপুণ (ভিডিও)
X
Fresh