• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

রেমিট্যান্স উচ্চ প্রবৃদ্ধির বছরে সর্বনিম্ন কর্মী প্রেরণ

  ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ২৩:৪৬
Remittances, send, lowest number, workers,year, high growth
রেমিট্যান্স উচ্চ প্রবৃদ্ধির বছরে সর্বনিম্ন কর্মী প্রেরণ

বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সকল সমীকরণ ভেঙে দিয়েছে করোনাভাইরাস। মহামারীর মধ্যেও রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অন্য বছরগুলোর তুলনায় ভালো অবস্থানে। রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে এবার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে নতুন রেকর্ড করেছে। এরপরও প্রবাসীদের আয়ের বিষয়ে আগামী বছরের জন্য নতুন এক সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রায় সাড়ে তিনগুণ কম কর্মী বিদেশে পারি জমাতে পেরেছেন। ফলে আগামী বছরে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আশানুরূপ নাও আসতে পারে বলে মনে করছেন প্রবাসী খাতের সঙ্গে যুক্ত বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, চলতি বছরে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের টার্গেট ছিল সাড়ে ৭ লাখ নতুন কর্মী বিদেশে পাঠাবে। কিন্তু বছরের শুরুতে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারী থাবায় সেই টার্গেটের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালে ১১ মাসে মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৭১ জন কর্মী বিদেশ পারি দিতে পেরেছেন। এতে করে ৫ লাখের বেশি নতুন কর্মী কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাল বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে টার্গেট অনুযায়ী নতুন কর্মী বিদেশে পারি জমাতে পারেনি। কিন্তু এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অর্থাৎ দক্ষ কর্মীদের বিদেশে পাঠিয়ে আগামী বছরেরও বৈদেশিক রেমিট্যান্সের ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন টার্গেট নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই আজ শুক্রবার পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী যায় সৌদি আরবে। এছাড়া ২০১৭ সালে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী, ২০১৮ সালে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন কর্মী, ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। কিন্তু চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৭১ জন কর্মী বিদেশে পারি জমাতে পেরেছেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে ১ লাখ ৮১ হাজার ২১৮ জন নতুন কর্মী বিদেশ পারি জমান। আগামী বছর বিদেশে কর্মী পাঠানোর এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কম সংখ্যক কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে রেমিট্যান্সের গতি অব্যাহত থাকে; সেই পরিকল্পনা ইতোমধ্যে হাতে নিয়েছে। সংখ্যার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানোর দিকে গুরুত্বরোপ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর কারণে বিদেশ থেকে অনেক কর্মী দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার তালিকায় গত এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ প্রবাসী। এদিকে গত সাত মাস নতুন কর্মী বিদেশে পাড়ি দেওয়া বন্ধ থাকে। চলতি মাসে (ডিসেম্বর) বিভিন্ন দেশ কর্মী নেওয়া শুরু করলে প্রবাসীরা যেতে শুরু করেছেন। ডিসেম্বর মাসে ১৭ দিনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কর্মী বিদেশে গেছেন।

চলতি বছরে করোনাকালীন সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। প্রবাসীদের আয়ের ওপর ভর করে প্রথমবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন বা চার হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। করোনার মধ্যেও রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতির পেছনে দক্ষ শ্রমিকদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আর যারা অদক্ষ তাদের অনেকেই করোনার মধ্যে দেশে ফিরেছেন। তবে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসায় নতুন করে কর্মীর চাহিদাপত্র আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে।

রিক্রুটিং এজেন্সি আনোয়ার এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের মালিক আনোয়ার হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, মার্চ মাসে করোনা শুরু হওয়ায় বিদেশে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য মে মাসের পর থেকে অফিস গুটিয়ে নেন। তবে নভেম্বর মাসে বিদেশে কর্মী পাঠানো কিছুটা স্বাভাবিক হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে নতুন করে কর্মীর চাহিদাপত্র আসছে। এজন্য আবারও অফিস করা শুরু করেছেন রিক্রুটিং এজেন্সি। করোনায় আটকে যাওয়া ৬২ জন শ্রমিককের মধ্যে ডিসেম্বর মাসে ১৩ জনকে দুবাই পাঠান তিনি। করোনার নমুনা পরীক্ষা শেষে বাকিরা চলতি মাসের মধ্যেই যেতে পারবেন বলে আশা করছেন আনোয়ার হোসেন।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, করোনা মহামারীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বেড়েছে। এই দুই খাতে নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বে নতুন করে আরও কোন কোন খাতে কর্মী লাগতে পারে সেটি পর্যালোচনা করে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারলে প্রবাসী রেমিট্যান্সের ধারা ঊর্ধ্বমুখী রাখা সম্ভব।

প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, করোনায় চলতি বছরে আশারূপ নতুন কর্মী বিদেশে যেতে পারেনি। প্রবাসীদের নিয়ে সরকারের ভূমিকা খুব একটা নেই। প্রবাসীরা নিজ থেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এখন যাওয়া বন্ধ কিন্তু ফিরে আসা বাড়ছে। তাই সামনে প্রবাসী আয় কমে যেতে পারে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, সারা দেশে প্রতিটি উপজেলা থেকে ১ হাজার কর্মী বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চল্লিশটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। আরও ৭১টি টিটিসি প্রস্তাবনা আমরা পাঠিয়েছি। এই ৭১টি পাস হয়ে এলে আমরা আরো একশটি টিটিসির প্রস্তাবনা পাঠাবো, যেন প্রতিটা উপজেলায় আমরা একটি টিটিসি স্থাপন করতে পারি।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার কারণে এবার প্রবাসী খাতের অবস্থা নাজুক। করোনার থাবা অব্যাহত রয়েছে। ফলে নতুন বছরে নতুন কর্ম পরিকল্পনার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। শ্রমবাজারের নতুন নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশে নতুন কর্মী প্রেরণে ক্ষেত্রে সংখ্যার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ দক্ষ কর্মী কম পাঠিয়ে প্রবাসী আয় অব্যাহত রাখা সম্ভব।

এফএ/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রতি বছর দূষণে প্রাণ হারাচ্ছেন পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশি
কাজে ব্যস্ত ছিল মা, পুকুরে ভাসছিল চার বছরের তাহসিন 
এক চুমুতে আড়াই বছরের জেল!
সর্বনিম্ন ১০০ টাকায় দেখা যাবে চট্টগ্রাম টেস্ট
X
Fresh