• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনায় বিজয় দিবসে ফুল ব্যবসায় ধস

  ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৫৫
flower, business, collapsed, Victory Day, Corona
করোনায় বিজয় দিবসে ফুল ব্যবসায় ধস

ফুলের বাজারে ফুলের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও চাহিদা নেই। করোনাভাইরাসের কারণে ফুল ব্যবসায় ধস নেমেছে। মহান বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে একজন ফুল বিক্রেতা যেখানে কমবেশি ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতেন। সেখানে এবার মহান বিজয় দিবসে মাত্র ৭ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। শাহবাগ ও মিরপুরে বিভিন্ন দিবসের আগে ফুলের দোকানগুলোতে মানুষের ঢল নামে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশকিছু ফুলের দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন এখানে দোকান আছে মাত্র একুশটি। এগুলোতেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে।

দেশে সাধারণত গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল উৎপাদন হয়। এছাড়াও লংস্টিক রোজ, লিলিয়াম, জারবেরা, স্টোমা, কার্নিশনসহ কয়েক জাতের ফুল আমদানি করা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগের মতো ফুল ব্যবসায়ীদের ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে না। এবার ফুলের চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। ফুলের মজুদ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে কয়েকগুণ। ফুলের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়েনি। দোকানে টেবিলের ওপর বালতিতে সাজানো রয়েছে নানা ধরনের ফুল। মাটিতে দুটি বালতিতে রয়েছে ঝাউয়ের চারা। কিছুটা ওপরে দুই বাঁশের খুঁটিতে একটি দড়ি টানানো হয়েছে। দড়িতে ঝুলছে ফুল দিয়ে তৈরি কয়েকটি রিং। ফুলের রিংগুলো দেখে মনে হচ্ছে, কয়েক ঘণ্টায় আগেই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় ফুলের পাপড়ি শুকিয়ে গেছে।

জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ফুল কম কিনেছেন। করোনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আগের মতো ফুল কেনেনি। এতে বাজারে ফুলের সরবারহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম নেই।

শাহবাগের ফুল ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে একদম বেচাকেনা নেই। প্রতিদিন দোকান খুলে বসে থাকি। যদি কিছু হয়। আগে দিনে দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। গত কয়েক মাস ধরে দিনে ১ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয় না। বিজয় দিবসে দিনে মাত্র ৭ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছি। অথচ এর আগে বিজয় দিবসে একদিনে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ফুল বিক্রি করতাম।

আরেকজ ফুল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজয় দিবসে যে পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়, এবার তুলনামূলক কয়েক ধাপ কম ফুল বিক্রি হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি কমেছে। করোনার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও ফুল কেনার আগ্রাহ কম। কোনো বেচাকেনা নেই। সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ ফুল কেনে। করোনার কারণে মানুষের মনে কোনো শান্তি নেই। তাই ফুলের বেচাকেনাও নেই। আগে দিনে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো। বিশেষ দিনগুলোতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফুল বিক্রি করেছি। এখন কোনো দিন ৩০০ টাকা, কোনো দিন ৫০০ টাকা আবার কোনো দিন ৭০০ টাকার ফুল বিক্রি হয়।

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি খুচরা ফুল বিক্রি হয় শাহবাগে। এই বাজারের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, বাঙালি জাতির মহান বিজয় দিবসে যে পরিমাণ ফুল বিক্রির আশা ছিল এর অর্ধেক ফুল বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। করোনায় অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাননি।

তিনি বলেন, করোনায় এখন পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলো জাকজমক হচ্ছে না। ফলে ধস নেমেছে ফুলের ব্যবসায়। এক কথায় করোনায় এই খাতটি ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফুল ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, ঢাকায় ২৩টি জেলা থেকে ফুল আমদানি করা হয়। এরমধ্যে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার সাভার এলাকা থেকে বেশি ফুল আমদানি করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় যশোরে। দেশের চাহিদার তিন ভাগের দুই ভাগই উৎপাদন হয় এই জেলায়।

মিরপুরে জিয়াউল ফুল স্টোর। দুটি টেবিলের ওপর চারটি বালতির মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কয়েক ধরনের ফুল। ওপরের দিকে দড়ি টানানো রয়েছে। পেছনের দিকে বেঞ্চে বসে আছেন দোকানি জিয়াউল। বেচাকেনার বিষয় তুলতেই বলেন, ফুলের চাহিদা কমেছে, দামও কমেছে। মানুষ আর আগের মতো ফুল কেনে না। এরপরও ভেবেছিলাম বিজয় দিবসে ফুল বিক্রি বাড়বে কিন্তু সেটিও হয়নি। ক্রেতারা ফুল কিনতে আসেনি। দুই একজন যারা ফুল কিনেছেন তাও আশা অনুরূপ নয়। করোনা শুরুর পর থেকে কোনো কেনাবেচা নেই।

জানা গেছে, মিরপুরে যেসব ফুল বিক্রি হয় তার অধিকাংশই আশে মিরপুরের পাশেই সাদুল্লাপুর থেকে। আবহাওয়া ভালো থাকায় সাদুল্লাপুর এলাকায় ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে ফুলের চাহিদা না থাকায় চাষিদের মাথায় হাত। অর্ধেক দামে চাষিদের ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে পাইকারদের কাছে।

সাদুল্লাপুর ফুল চাষি হৃদয় খান আরটিভি নিউজকে বলেন, দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছিলাম। কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ফুলের চাহিদা কমে গেছে। ফুল চাষ করে পথে বসে যাওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফুল চাষে যেসব শ্রমিক কাজ করেন সেই টাকাও উঠছে না। জমি থেকে যারা ফুল তুলবে তাদের শ্রমের দামেও ওঠে না বিধায় জমিতেই ফুল নষ্ট হয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে গোলাপ ফুলের গাছ জমি থেকে তুলে অন্য ফল চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হৃদয় খান।

ফুল বিক্রি কমে যাওয়ায় হৃদয় খানের মতো অনেক কৃষক তাদের জমিতে ফুলের বদলে ধান, পাটসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করছেন। আগে ফুল চাষ করে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করতেন ফুলচাষিরা। এখন আয় একেবারেই শূন্য। লাভের আশায় অনেকে জমি লিজ নিয়ে ফুল চাষ করেন। বিঘাপ্রতি প্রায় তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনার কারণে বিক্রি না হওয়ায় খেতে ফুল নষ্ট হচ্ছিল। এর মধ্যে আম্পানে ব্যাপক ক্ষতি হয় ফুলক্ষেতের। কোনো উপায় বের না করতে পেরে জমিতে ধান চাষ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে দোয়েল চত্বরের ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ফুলের ব্যবসা করছেন আশিকুর রহমান। পলিথিন দিয়ে দোকানগুলো তৈরি করা হয়েছে। করোনার আগে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফুল বিক্রি করতেন। করোনার কারণে গত নয় মাসে ফুলও বিক্রি করতে পারেনি। ফুল বিক্রি কমে যাওয়ায় সংসারের ব্যয় মেটাতে তার রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে। একদম ভালো নেই। খুব দুশ্চিন্তা হয়। রাতে ভালো ঘুম হয় না।

এফএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
আখাউড়ায় ১৮০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক 
২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৬
নরসিংদীতে বালু ব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ 
X
Fresh